ঘুষ নিয়ে নার্স বদলি – দুদকের প্রতিবেদন হাইকোর্টে। নার্সিং ও মিডওয়াইফারির কর্মকর্তাদের সঙ্গে জড়িত জামাল উদ্দিন। দুদকের প্রতিবেদন হাইকোর্টে। জামাল উদ্দিনের ১৪ ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই ৭ কোটি টাকা। দপ্তরের কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাব বিবরণী চেয়ে বিএফআইইউতে চিঠি।
বিশেষ প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স বদলিতে কোটি কোটি টাকা ঘুষ বিনিময়ের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নার্সদের কাছ থেকে এই টাকা ঘুষ হিসাবে গ্রহণ করতেন জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি।
মোট ৫ ব্যাংকের ১৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এই টাকা ঘুষ হিসাবে গ্রহণ করা হত। বেআইনিভাবে গ্রহণ করা এই টাকা উৎকোচ হিসাবে পাওয়ার পরই নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের এক বা একাধিক কর্মকর্তার সহায়তায় জামাল উদ্দিন নার্সদের পছন্দের কর্মস্থলে বদলি করতেন।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর২০২২) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে দুদকের এই অনুসন্ধান প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর নার্সিং ও মিডওয়াফারি অধিদপ্তরের কোন কোন কর্মকর্তা ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে এই নার্স বদলিতে জড়িত সেই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ২০ জানুয়ারি মধ্যে আদালতে দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে দুদকের পক্ষে থেকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি দপ্তরের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের ব্যাংক লেনদেনের হিসাব বিবরণী চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার হমায়ুন কবির পল্লব।
তিনি বলেন, আংশিক প্রতিবেদন দাখিল করেছে দুদক। ২০ জানুয়ারির মধ্যে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি দপ্তরের কোন কোন কর্মকর্তা এই ঘুষ বাণিজ্য ও বদলির সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকা আদালতে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে দুদককে বলা হয়েছে।
নার্স বদলিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, মোহাম্মদ কাওছার ও মাজেদুল কাদের। ওই রিটের প্রেক্ষিতে গত ১৮ মে হাইকোর্ট এ বিষয়ে দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশনা পেয়ে দুদক এ বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেন কমিশনের উপপরিচালক মো. ফারুক আহমেদকে।
অনুসন্ধান শেষে হাইকোর্টে দাখিল করা দুদকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মো. জামাল উদ্দিন একজন বেসরকারি ব্যক্তি। তিনি নার্সদের বদলির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা না হয়েও তার ব্যাংক হিসাবে দেশের বিভিন্ন জেলা হতে নার্সরা টাকা ঘুষ বাবদ জমা দিয়ে বদলি হয়েছেন।
এক্ষেত্রে নার্সদের বদলির সঙ্গে বদলি সংশ্লিষ্ট (নার্সিং ও মিডওয়াইফরি) কোন কর্মকর্তা ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত আছেন কিনা তা নির্ণয় হওয়া জরুরি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জামালউদ্দিনের সংশ্লিষ্ট হিসাবে মোট ৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। মূলত দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত নার্সরা নিজ নিজ জেলায় বা বিভাগে বদলির উদ্দেশ্যে জামাল উদ্দিনকে এই টাকা প্রদান করেছেন।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের এক বা একাধিক কর্মকর্তার সহায়তায় জামাল উদ্দিন কর্তৃক ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত নার্সদের তাদের পছন্দের কর্মস্থলে বদলি করা হয়েছে মর্মে নার্সরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে নার্সরা তাদের পছন্দের জায়গায় বদলি করা সংক্রান্ত নার্সিং ও মিডওয়াইফারি দপ্তরের এক বা একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে জামাল উদ্দিনের জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য ওইসব কর্মকর্তাদের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করা প্রয়োজন বলে হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৫টি ব্যাংকের ১৪টি হিসাব নম্বর ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত সরকারি হাসপাতালের নার্সদের নিকট হতে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ঘুষ হিসাবে গ্রহণ করে পছন্দের কর্মস্থলে নার্সদের বদলি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত জামাল উদ্দিনের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। থাকেন যাত্রাবাড়ীতে। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নাম জামাল এন্টারপ্রাইজ।