আর কত অসুস্থ হলে গণপূর্তের চোখ খুলবে
নগর প্রতিবেদকঃ গণপূর্ত অধিদপ্তরে চাকরি স্থায়ীকরনের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা ২২দিন ধরে আমরণ অনশন কর্মসূচী পালনকারী দৈনিক ভাউচার ভিত্তিক কর্মচারীদের মধ্যে ৬ জন অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর কত অসুস্থ হলে গণপূর্তের বড়কর্তাদের চোখ খুলবে। আমরা এখানে মরে যাবো, তবু চাকরি ছাড়া ঘরে ফিরে যাবো না। আমরা মরে গেলে চাঁদা তুল আমাদের লাশ দাফন করতে হয়। আমরা শতকষ্ঠ সহ্য করে অফিসারদের কাজ করে দেই, ঠিকমতো আমাদের বেতন দেয় না, বোনাস না, আমাদের সাথে কুকুরের মতো ব্যবহার করে। ১৩ চাকরি করলে চাকরি স্থায়ীকরনের আইন আছে, অথচ আমাদের চাকরি স্থায়ী করছে না। আমাদের নিয়ে গণপূর্তের কর্মকর্তারা কানামাছি খেলা খেলতেছে। এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করে কান্না জড়িত কণ্ঠে কথা গুলো বলছেন জাতীয় সংসদ ভবনের কর্মচারী মরিয়ম বেগম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,
দীর্ঘ ২৫ বছরেও চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরনের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা ২২দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচী পালন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে কর্মরত দৈনিক ভাউচার ভিত্তিক কর্মচারীরা। অনশনকারী কর্মচারীরা তাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না বলে ঘোষনা দিয়েছে। এর আগে তারা প্রধানন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন। কর্মসূচীতে মনির হোসেন শোভন, হাবিবুর রহমান, মো. ইসমাইল খান, মৌ মনির, আনোয়ার পারভেজ ও জিয়াউর রহমানসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
অনশন কর্মসূচী থেকে কর্মচারীরা জানান, গণপূর্ত অধিদপ্তরাধীন দৈনিক ভাউচার ভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে অন্তত ১৫১৭ জন কর্মচারী দীর্ঘ ২৫ বছর বা তার অধিক সময়যাবৎ সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছি। কিন্তু আমাদেরকে দৈনিক হারে যে পরিমাণ পারিশ্রমিক দেয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। যা দিয়ে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়।
আমাদের সহকর্মী কেউ মারা গেলে চাঁদা তুলে তাঁর দাফন কার্য সম্পূর্ণ করতে হয়। অর্থের অভাবে আমাদের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। অসুস্থ হলে চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়। হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তুচ্ছতাচ্ছিল্য নিয়ে বেঁচে আছি। তবে দৈনিক ভাউচার ভিত্তিক মজুরীতে নিয়োগকৃত এসব কর্মচারীদের কাজের মেয়াদ ১৩ বছর পূর্ণ হলে তাঁকে রাজস্ব খাতে আনয়নের নীতিমালা রয়েছে। যদিও হাইকোর্টের রায়ের আলোকে ১৫১৭ জন কর্মচারীর মধ্যে থেকে ৪২ জনকে চাকুরীতে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। সেই আলোকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত ২৫.০০.০০০০.০১৪.১১.০০৮.১৯.৪৮৪ নং স্মারক মূলে ২ ডিসেম্বর-২০২০ তারিখে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর কর্মচারীদের তথ্যাবলী সংক্রান্ত নামের তালিকা চেয়ে চিঠি প্রেরণ করেন। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছর পেরিয়ে গেলেও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে সেই চিঠির কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বরং পান থেকে চুন খসলেই করা হয় নির্যাতন।
ঘুমন্ত অবস্থাতেও চাকুরী হারানোর ভয় তাড়িয়ে বেড়ায়। আমাদের ন্যায্য অধিকারের কথাটুকু মুখফুটে বলতেও পারি না।
এ কারনে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে দাবি আদায়ের কথা জানিয়ে কোনো প্রতিকার না পেয়ে দুই বছর পর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করলে অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রনালয়কে একটি ত্রুটিপূর্ণ তালিকা প্রেরন করা হয়। কিন্তু ওই তালিকাটিও অন্তত ছয় মাস ধরে পড়ে আছে বড় বাবুদের কোন টেবিলের নিচে। এজন্য আমরা এক দফা দাবি নিয়ে এখন অনশন কর্মসূচীতে বসেছি। চাকুরি স্থায়ীকরন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।
অনশনকারী কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, সম্প্রতি হাইকোর্টও আমাদের ব্যাপারে বলেছেন, যারা রাষ্ট্রের জন্য নিরলস কাজ করে, তাদের জন্য রাষ্ট্রের কিছু করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের জন্য যে পারিশ্রমিক বরাদ্দ দেন তার মধ্যে থেকে কালো বিড়ালে একটা বড় অংশ খেয়ে ফেলে। দাবী নিয়ে রাস্তায় দাড়ানো কারনে আমাদের উপর নির্যাতনের খড়গ নেমে এসেছে। আমাদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া কর্মচারীদের নোটিশ দিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গণপূর্তের জয়পুরহাট ডিসি চত্তর অফিসে ক্লিনার পদে দৈনিক ভাউচার ভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে ২২ বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করে আসছেন নাছিমা আক্তার। তার বয়স ৪২ বছর। আন্দোলনের ৮তম দিনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
জাতীয় সংসদ ভবনের কর্মচারী রহিমা বেগম,গোপালগঞ্জ থেকে আসা সিদ্দিক শেখ, প্রধানমন্ত্রীর কারখানা বিভাগের কর্মচারী মোঃ আলী, ও জাতীয় সংসদ ভবনের ই/এম শাখার কর্মচারী আইয়ুব মিয়া এখনো গুরুতর অসুস্থ।