গ্রেড উন্নয়ন ও পদোন্নতি চায় সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তারা

Picsart_22-04-12_01-15-15-546.jpg

গ্রেড উন্নয়ন ও পদোন্নতি চায় সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তারা

শিক্ষা প্রতিবেদকঃ প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এর শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানের সার্বিক দায়িত্বে থাকা সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তারা (এইউইও/এটিইও) ২৮ বছর ধরে চাকরি করছেন একই গ্রেডে। সীমিত করে দেওয়া হয়েছে তাদের পদোন্নতির সুযোগও। ফলে হতাশায় ভুগছেন ২ হাজার ৬০১ জন শিক্ষা কর্মকর্তা। এগুলোকে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে অন্তরায় বলেও মনে করছেন তারা।

তাই প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে উন্নীত করা, ১০০ ভাগ পদোন্নতির সুযোগ প্রদানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার অ্যাসোসিয়েশন।

সম্প্রতি তারা এ দুটি দাবিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে স্মারকলিপি ও চিঠি দিয়েছে। একইসঙ্গে সম্প্রতি সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিজ জেলার বাইরে বদলির মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তও বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

জানা যায়, ১৯৮৫ সালে নিয়োগ বিধিমালার পরে ১৯৯৪ সালে এইউইও পদটি ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয় এবং সে সময়ে তার অধস্তন প্রধান শিক্ষক পদটি ১৪তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষক পদটি ১৮তম গ্রেডে ছিল। প্রধান শিক্ষক পদটি তিন দফায় উন্নীত করার ফলে ২০১৪ সালে ১১তম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষক পদটি চার দফায় ২০২০ সালে ১৩তম গ্রেডভুক্ত হয়। একই সময়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদটি ৯ম গ্রেড থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেডে, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট পদটি ৯ম গ্রেড থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেডে এবং পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদটি ৩য় শ্রেণি থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ২৮ বছর পর্যন্ত সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তা পদটি ১০ম গ্রেডেই রয়েছে।

এদিকে ১৯৮৫ সালের নিয়োগবিধি অনুযায়ী, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পদ থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির সুযোগ ছিল ৫০ শতাংশ। কিন্তু ১৯৯৪ সালে সেটি কমিয়ে করা হয়েছে ২০ শতাংশ। অথচ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তা পদে নিয়োগের যোগ্যতা ও পদ্ধতি একই।

শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার তৃণমূলের নিকটতম কর্মকর্তা হিসেবে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তা (এইউইও/এটিইও) প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সরাসরি নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। একইসঙ্গে তাদের তত্ত্বাবধান ও সহযোগিতা করে থাকেন। এছাড়া মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালুকরণ, ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীতকরণ, শতভাগ শিশু ভর্তির কারণে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি, সকল শিক্ষকের গ্রেড উন্নীতকরণ ইত্যাদিও যুক্ত হয়েছে তাদের কাজে। প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান, শিক্ষার মান নিয়েও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয় এসব কর্মকর্তাকে।

তবে সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ বেশকিছু কর্মকর্তা। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও শিক্ষার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা। এরপরই সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিজ জেলা থেকে বদলির সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৯৪ সাল থেকে আমরা একই গ্রেডে কাজ করে আসছি। অথচ আমাদের অধীনে থাকা প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের দফায় দফায় গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে। এমনকি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট এবং পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদেরও গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে। এমনও হয়েছে আমাদের সহকর্মীরা যখন কাজে যোগদান করেছেন, তখন অনেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী; এখন তারাও আমাদের সহকর্মী। তাই এ পদটি ৯ম গ্রেডে উন্নীত করার যৌক্তিকতা অপরিসীম।

তিনি বলেন, এইউইও/এটিইও’র বদলির খবরে মাঠ পর্যায়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন একই জায়গায় কর্মরত থাকার ফলে আমরা যেই সাপোর্ট দিতে পারছি, বদলি করলে কি সেই সাপোর্ট দিতে পারব? নিজ জেলার বাইরে বদলি করলেই কি শিক্ষার মান রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যাবে। সমাজসেবা অফিসার ৯ম গ্রেডের, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ৯ম গ্রেডের এমনকি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রধান নিজ জেলায় কর্মরত। তাহলে আমরা কেন নয়? বরং নিজ জেলায় পরিবারের সঙ্গে থেকেই এখন যেভাবে এইউইও/এটিইও’র কাজ করছেন সেটিই বহাল রাখলে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি সম্ভব। তাই, মানবিক দিক বিবেচনা করে নিজ জেলার বাইরে বদলির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশুনার মান সন্তোষজনক নয়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী যার যার শ্রেণির সাধারণ পড়াগুলো পারার কথা, কিন্তু সেগুলোও পারছে না। অনেক শিক্ষক অনুপস্থিত থাকছেন, বেশিরভাগই উপজেলা বা জেলা শহরে বাস করছেন।

ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। আর এ সুযোগটি নিচ্ছে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাহায্যে। কারণ তারা শিক্ষকদের এই অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করার প্রমান পেয়েছে মন্ত্রনালয়। এজন্যই মন্ত্রণালয় তাদের নিজ জেলার বাইরে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top