একের পর এক কর্মকর্তা পুলিশে আটক, মাউশির ডিজি হতাশ ও বিরক্ত

Picsart_22-05-05_08-50-26-647.jpg

একের পর এক কর্মকর্তা পুলিশে আটক, মাউশির ডিজি
হতাশ ও বিরক্ত

শিক্ষা প্রতিবেদকঃ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাসের ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এক কর্মকর্তার নাম ঘুরে ফিরে আসছে। সর্বশেষ একজন বিসিএস ক্যাডারসহ ৬ জন গ্রেপ্তার হলেও এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থা তার নাম প্রকাশ করেনি।

তবে মাউশির একাধিক সূত্র জানায়, ডিবির সন্দেহের তীর যার দিকে তিনি মাউশির শিক্ষা কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদার। আর খোদ শিক্ষাভবনের কর্মকর্তা প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার ঘটনায় থমথমে অবস্থায় রয়েছে শিক্ষাভবন।

মাউশির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই ঘটনার পর থেকেই ওই শিক্ষা কর্মকর্তা অফিস করছেন না। তিনি ছুটিতে আছেন। তবে বৃহস্পতিবার থেকে মাউশিতে একটি খবর চাউর হয়েছে, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা এই কর্মকর্তাকে বুধবার রাতে আটক করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। এমন খবরে অনেকেই এ বিষয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে এমন আতংকে ভুগছেন।

জানা যায়, এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার মাউশির ডিজি নেহাল আহমেদ সব কর্মকর্তার সঙ্গে সভা করেছেন। সভায় অংশ নেয়া কর্মকর্তারা বলেন, ডিজি স্যার এই ঘটনায় খুবই হতাশ ও বিরক্ত। তিনি এ বিষয়ে কর্মকর্তাদেরকে বিষেদাগার করেন এবং এ ধরনের কোনো অভিযোগ যেন তার কানে না আসে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেন।

দায়িত্বশীলরা জানান, এমন নিকৃষ্ট ঘটনায় শিক্ষা ক্যাডার-কর্মচারীরা একের পর এক গ্রেপ্তার হচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাউশি ডিবির তদন্তের দিকেই তাকিয়ে আছে। বিষয়টি খুবই অস্বস্তিকর। কারণ শিক্ষায়ও প্রশাসন বলে একটি শব্দ রয়েছে। এক্ষেত্রে তাদেরও একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করা উচিত।

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন শাহেদুল খবীর চৌধুরীকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেন।

যেভাবে খোঁজ পাওয়া যায়!

অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে গত শুক্রবার ঢাকার ৬১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। ৫১৩টি পদের জন্য পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার। রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে সুমন জোয়ার্দ্দার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অন্যদিকে এই কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন চন্দ্রশেখর হালদার। তার সঙ্গী ছিলেন মাউশির কর্মচারী বেলাল। তবে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কিভাবে ও কখন ফাঁস হয়েছে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই মতভেদ রয়েছে।

দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, নিয়ম অনুসারে একটি পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্ব একজন নির্বাচনী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার মতো হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ওএমআর পত্র ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে জমা দিতে হয়। এরপর আনুসাঙ্গিক যা থাকে তা মূল পরিচালনা কেন্দ্রে জমা দেয়ার পর সেখান থেকে ওই কর্মকর্তাকে রিলিজ করা হয়। এর মধ্যে কিছু হলে তার দায়ভার সম্পূর্ণ কর্মকর্তার উপর বর্তায়।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাউশির ওই শিক্ষা কর্মকর্তার প্রশ্নপত্র নিয়ে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ কেন্দ্রে যাওয়ার কথা ছিল। তিনি অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়ার পথে তা ফাঁস করেন। পরে চক্রের সদস্যরা প্রশ্নপত্র সমাধান করে নির্ধারিত চাকরি প্রার্থীদের মুঠোফোনে পাঠিয়েছিলেন।

এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ওএমআর জমা দেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ছিল চন্দ্র শেখরের। কিন্তু তিনি ওই গাড়িতে না গিয়ে একটি রিকশায় সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে যান। এর কিছুক্ষণ পর ওএমআর বহনকারী গাড়িটি শিক্ষাবোর্ডে উপস্থিত হয়। সূত্রের দাবি ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করলে তা জানা যাবে।

এই বিষয়ে একাধিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়। তারা দাবি করেন তিনি একাধিক মুঠোফোন ব্যবহার করতেন। প্রশ্নফাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আসায় তিনি সবগুলো ফোন নষ্ট করেছেন। তবে চন্দ্র শেখর হালদারকে আটক বা গ্রেপ্তারের বিষয়টি এখন পর্যন্ত নাকচ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এর আগে বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (উপমহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) হারুন অর রশীদ বলেছেন, মাউশির ওই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত পুরো চক্রের সন্ধান পাওয়া যাবে।

পটুয়াখালীর খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে গত সোমবার রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সাইফুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর টিকাটুলী ও ওয়ারী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৪তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ও পটুয়াখালী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রাশেদুল ইসলাম, মাউশির উচ্চমান সহকারী আহসান হাবিব ও অফিস সহকারী নওশাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top