‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়’ উপজেলা পরিষদের সিএ নিজেই ঠিকাদার! অর্ধকোটি টাকা প্রতারণা!
উপজেলা চেয়ারম্যান নাকি তার পকেটে থাকে, রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। অলিউর নামে উপজেলা পরিষদের এক কম্পিউটার অপারেটর চাকুরী বিধি ভঙ্গ করে উপজেলার বড় ঠিকাদার বনে গেছেন। এছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন। যা চাকুরী বিধি সম্পূর্ণ পরিপন্থী। নিজের ঠিকাদারি ব্যবসার অংশীদারের থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ঠিকাদারদের কাজ কিনে নেয় আবার কখনো বিক্রি করতে বাধ্য করেন এই চতুর দুর্নীতিবাজ কম্পিউটার অপারেটর। পার্টনারের মাধ্যমে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে নামে ঠিকাদারি পরিচালনা সহ দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
তিনি পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলা পরিষদে কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) অলিউর রহমান। আব্দুল জলিল হাওলাদার নামের এক ঠিকাদারকে সাথে নিয়ে ব্যবসার অংশীদার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সাইটে ঠিকাদারি ব্যাবসার কার্য পরিচালনা করে আসছিল অলিউর রহমান। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়িক অংশীদার আব্দুল জলিল হাওলাদার।
ভুক্তভোগী ঠিকাদার প্রতারণার প্রতিকার চেয়ে ইতিমধ্যেই প্রধান শিক্ষা প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসক, বরাবর অভিযোগ করার পাশাপাশি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। যা পিবিআইয়ের তদন্তধিন রয়েছে।
ভুক্তভোগী ঠিকাদারের তার লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, বিগত তিন বছর পূর্বে এ একই উপজেলার জলিল হাওলাদার এবং অলিউর রহমান যৌথভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। এসময় জলিল ২১ লাখ টাকা মূলধন হিসেবে অলিউরকে প্রদান করেন। মূলধন ছাড়াও গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করার লাভের টাকা অলিউরের কাছে গচ্ছিত রাখেন আব্দুল জলিল। যৌথভাবে তারা দুমকি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ভবন, শ্রীরামপুর ইউনিয়নে ত্রানের ব্রিজ, আমতলীর আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নে আপতারন্নেসা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন, দুমকি উপজেলা পরিষদের ভাউন্ডারী ওয়াল এবং বাকেরগঞ্জ আইডিয়াল টেকনিক্যাল কলেজ ভবন নির্মান করেন। এসব কাজগুলো তারা বরগুনার কামাল এন্টারপ্রাইজ এবং বরিশালের কিশোর এন্টারপ্রাইজের নামে সম্পন্ন করেন। তাদের দুজনের অংশীদারিত্বমূলক ব্যবসার নির্মাণ কাজের খরচের যাবতীয় হিসাব, লাভ ও মূলধন সবসময়ই অলিউরের কাছে গচ্ছিত রেখেছেন বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগী জলিল আরও বলেন, অলিউরকে সরল মনে তিনি বিশ্বাস করে সব কিছু তার উপর ন্যস্ত করেন। কাজ শেষে তাদের প্রায় ৪০ লাখ টাকা লাভ হয়। অলিউর কাছে লভ্যাংশের অর্ধেক এবং মূলধন বাবদ সর্বমোট ৪০ লাখ টাকা পাওনা হয়। জলিল এই টাকা অলিউরের কাছে চাইলে আজ দিব কাল দিব বলে ঘুরাতে থাকে। এক পর্যায়ে ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে জলিলকে জিম্মি করে বরগুনা শিক্ষা প্রকৌশল অফিসের সামনে বেশকিছু সন্ত্রাসীদের সহায়তায় আটকে তিনটি অলিখিত নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এবং বেশ কিছু বিল ভাউচারে জোর পূর্বক স্বাক্ষর নেয়। এরপরে অলিউল বলে বেড়ায় তার কাছে জলিল কোন টাকা পয়সা পাবে না।
বর্তমানে জলিলকে বিভিন্ন রকম প্রাণনাশের ভয় ভীতি দেখানো সহ হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জলিলকে আটকে সাদা স্ট্যাম্প ও বিল ভাউচার এর স্বাক্ষর নেওয়া পর নিরুপায় হয়ে প্রতারণা থেকে মুক্তি পেতে আদালত জেলা প্রশাসক ও প্রধান শিক্ষা প্রকৌশলীর নিকট আবেদন করেও কোন প্রকার অধিকার মিলছে না তার। ওলিউর হুমকি দিয়ে বেড়ায় যে তুই কোন টাকা পাবি না। বাড়াবাড়ি করলে তোকে ৫ লাখ টাকা কন্টাক্ট দিয়ে খুন করে ফেলবো।
একদিকে ব্যবসার মূলধন এবং লাভের টাকা হারিয়ে এখন দিশেহারা অন্যদিকে নিজের প্রাণহানির আশঙ্কা আতঙ্কে দিন কাটছে আব্দুল জলিলের। তিনি এ টাকা পাওয়ার জন্য আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে দেনদরবার করেও কোনো ফল পাননি। টাকা দাবি করায় অলিউর তাকে মিথ্যা মামলায় দেওয়ারও হুমকি দিচ্ছে। এমনকি ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে তাকে খুন করারও পায়তারা করতেছে।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন ঠিকাদার সূত্রে জানা গেছে, ওলিউরের প্রভাব-প্রতিপত্তি এতটাই যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা, নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিলেন্ট সহ উপজেলার সকল কর্মকর্তারদের সেক্রেট মিশন সফল করার হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত।
উল্লেখ্য, ওলিউর একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও তিনি চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে তার ছেলের নামে লাইসেন্স করে এবং বিভিন্ন ব্যক্তির লাইসেন্সের মাধ্যমে ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন । সে এ ব্যবসার নামে জলিলসহ আরও একাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর ওলিউরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে এ বিষয়ে আমি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।
দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে তাঁর মুঠোফোনে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে কয়েকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অলিউর ছেলেটা অনেক ভালো। সে উপজেলার সকল কর্মকর্তাদের মন রক্ষা করে চলতে পারে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অলিউর এর সাথে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।