আওয়ামী লীগের ১০ সহস্রাধিক বহিষ্কৃত নেতা আর দলে পদ পাবেন না
রাজনৈতিক প্রতিবেদকঃ দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ। তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীদের বিপরীতে নির্বাচন করা দলের বিদ্রোহীদের বিষয়ে এবার আর কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আট ধাপে ৪ হাজার ১১০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়া ও তাদের পক্ষে মাঠে থাকা, মদত দেওয়াসহ শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে ইতিমধ্যে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ১০ সহস্রাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ দলীয় কোনো পদে আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়া যাদের শোকজ করা হয়েছে তাদের জবাব সন্তোষজনক না হলে একই নিয়ম কার্যকর হবে বলেও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খুলনা বিভাগের অন্তর্গত সাংগঠনিক জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ, দলীয় সংসদ সদস্যগণ এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের গতকাল বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন, পারভিন জামান কল্পনা ও অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা।
এ সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনা বিভাগের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সভায় নেত্রী (সভানেত্রী শেখ হাসিনা) কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেই দিকনির্দেশনার আলোকে আমাদের আজকের এই সভা। এই সভার লক্ষ্য হচ্ছে, তৃণমূল পর্যায়ে নেত্রীর যে নির্দেশনা ছিল সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া। এগুলো হলো—মেয়াদোত্তীর্ণ শাখায় সম্মেলন করা, সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজানো। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দলের সাংগঠনিক অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির পর সাংগঠনিক কার্যক্রমকে গতিশীল করা হবে।’
যারা দলের নির্দেশনা মানে না, তাদের বিষয়ে আগে থেকেই দলের নির্দেশনা আছে জানিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, যারা বহিষ্কার হয়েছে, সাময়িক বহিষ্কার হয়েছে, শোকজ হয়েছে, তাদের বিষয়টা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলের কোনো কমিটিতে নেতৃত্বে আনা যাবে না। তবে যাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে তাদের জায়গা দেওয়ার সুযোগ আছে। এছাড়া দলকে গণমুখী করা ও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে ঢেলে সাজাতে হবে। যাতে দলের নতুন নেতৃত্বের ওপর জনগণের প্রত্যাশার জায়গাটা আরো শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করা যায়। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দলের সম্মেলনগুলো সম্পন্ন করতে হবে।
নেতারা বলেন, খুলনা বিভাগের চারটি জেলায় সম্মেলন বাকি আছে। যেসব জেলায় সম্মেলন হয়েছে, সেখানে অনেক উপজেলা সম্মেলন বাকি আছে। তিন মাসের মধ্যে সবগুলো সম্পন্ন করা হবে। এই সময়ের মধ্যে খুলনা বিভাগের সব সাংগঠনিক ইউনিটের সম্মেলন কর্ম পরিকল্পনা রয়েছে। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে সংঘাত, সংঘর্ষ, সহিংসতায় জড়িত থাকার কারণে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের আর দলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না।
চলমান ইউপি নির্বাচনে ইতিমধ্যে আট ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপের দুই দফায় ৩৬৯টি এবং ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩টি, গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ইউপিতে এবং চতুর্থ ধাপে ২৬ ডিসেম্বর ৮৩৬ ইউপিতে ভোট গ্রহণ হয়। এছাড়া ৫ম ধাপে গত ৫ জানুয়ারি ৭০৮ ইউপিতে, ৬ষ্ঠ ধাপে গত ৩১ জানুয়ারি ২১৮ ইউপিতে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সপ্তম ধাপে ১৩৮ ইউপিতে এবং গত ১০ ফেব্রুয়ারি অষ্টম ধাপে আটটি ইউপিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।