পুলিশের ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় নারী
অপরাধ প্রতিবেদকঃ এক নারী কনস্টেবল পুলিশ ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাকে ও তার পরিবারকে অনবরত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে তিনি জিডিও করেন।
এছাড়া ভিকটিমের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত আবু নাসের রায়হানের স্ত্রীও পাল্টা মামলা করেন। যেখানে চাঁদাবাজিসহ ব্ল্যাক মেইলের অভিযোগ আনা হয়।
আবু নাসের রায়হান বর্তমানে বরিশাল ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত রয়েছেন। পূর্বে নীলফামারী জেলার রিজার্ভ ইন্সপেক্টর ছিলেন।
লালমনিরহাটের সদর থানায় করা ভুক্তভোগী ওই নারী কনস্টেবলের জিডি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর নাসের রায়হানের নামে ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাবুন্যালে অভিযোগ করেন ভিকটিম। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭ অক্টোবর হরিপুর থানায় মামলা হয়। এরপর থেকেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাকে ও তার পরিবারকে ফোনে হুমকি দেওয়া হতে থাকে। একপর্যায়ে নাসের রায়হানের লোকজন ভিকটিমের বাড়িতে গিয়ে পরনের কাপড়ে আগুন ধরিয়ে তার প্রাণনাশের চেষ্টা করে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
অপরদিকে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থানায় করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, ৬ নভেম্বর রাতে অজ্ঞাত তিন ব্যক্তি ভিকটিমের উপর হামলা করে। তার শ্লীলতাহানি করে। পরে তিনি ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সহায়তায় রক্ষা পান। এ ঘটনার পর ভিকটিমের মায়ের মোবাইলে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়। ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে এই হুমকি আসে।
বর্তমানে ওই নারী কনস্টেবল নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন যে কোনো সময় সুযোগ বুঝে তার ক্ষতি করা হতে পারে। ভিকটিমের এখন একটাই আকুতি তিনি বাঁচতে চান। ন্যায় বিচার চান।
কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাই, আমি বাঁচতে চাই। আমার পরিবারের জন্য বেঁচে থাকতে চাই। আমি মরতে চাই না। আমাকে সাহায্য করেন। আমি বড় অসহায়। কনস্টেবল বলে কি আমি বিচার পাবো না? আমি ন্যায় বিচার চাই।’
তিনি জানান, কয়েক দিন আগেও তাকে একটি নম্বর থেকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়। পরে তিনি সেই কল কেটে দেন। আর রিসিভ করেননি।
এদিকে আবু নাসের রায়হান ও ভিকটিমের মোবাইলে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। যেখানে ভিকটিম যে অভিযোগ করেছেন সেটাকে সত্য বলতে শুনা যায় আসামিকে।
আসামি ভিকটিমকে বলছিলেন, ‘তুমি যে বিভাগীয় অভিযোগ করেছো পুরোটাই সত্য।’ এছাড়া তিনি ওই রেকর্ডে জানান, ভিকটিমকে আগেও বিয়ে করতে চেয়েছেন। এখনো বিয়ে করতে চান।
ধর্ষণের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর কনস্টেবল পদে নীলফামারী পুলিশ লাইনে যোগদান করেন ওই নারী। এরপর থেকেই নীলফামারী রিজার্ভ অফিস ইন্সপেক্টর আবু নাসের রায়হান প্রায়ই তাকে উত্যক্ত করতেন এবং কুপ্রস্তাব দিতেন। এছাড়া তাকে পদায়নের সুযোগ করে দিবেন বলেও বলতে থাকেন।
এর মধ্যে বিভিন্ন অজুহাতে ভিকটিমকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে অশ্লীল পর্ণ ছবি দেখিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দিতেন নাসের রায়হান। একপর্যায়ে ২০১৬ সাল থেকে প্রায় সময়ে ওই নারীকে বাসায় নিয়ে ব্ল্যাক মেইল করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ওই নারীকে বিয়ে করারও আশ্বাস দেন। এরপর এ সম্পর্কের কথা প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বাদিনীকে পূর্বের স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন।
ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে আবু নাসের রায়হান বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ঘটনা। আর এটা আইনিভাবে লড়ছি। সেটা নিয়ে মামলা হয়েছে। বহু কিছু হয়েছে।’
অডিও রেকর্ডে ভিকটিমের অভিযোগকে কেন সত্য বললেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে এই ইন্সপেক্টর বলেন, ‘মাঝখানে সে (নারী কনস্টেবল) বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। তখন সবাই আপোষ মীমাংসার জন্য বলছিলো। সেই জন্য আমি ওটা বলেছিলাম।’
হুমকি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘থানা এটা তদন্ত করে দেখবে। এতে আমার ইনভলব আছে কি না তারাই বুঝবে।’