ভোলায় হাসপাতাল গুলোতে বেড়েছে জ্বর-সর্দি; দুর্ভোগে
সাধারন মানুষ
ভোলা জেলা প্রতিনিধিঃ ভোলায় বৃদ্ধ, যুবক ও শিশুদের জ্বর, সর্দি-কাশি ও ঠান্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডা জনিত বেড়েছে।
প্রতিদিন এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫০/৬০ জন শিশু ভোলার সদর হাসপাতাল সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হচ্ছে। রোগীর চাপ বাড়ায় একটি শয্যায় দু-তিনজন রোগী রাখা হচ্ছে। আবার শয্যা না থাকায় রোগীদের বারান্দায় রেখেও চলছে চিকিৎসা।
এদিকে, জেলার উপজেলা গুলোতে শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসক ও নার্স সংকট থাকায় ঠিকমতো চিকিৎসাও পাচ্ছে না রোগীরা।
ভোলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ৩১টি শয্যার বিপরীতে ৫৭ শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে সোমবার ২০ শিশুকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০৫ জন শিশু রোগী ভর্তি হয়। গত রোববার ২৪ জন শিশু ভর্তি হয়। শনিবার ১৪, শুক্রবার ১৫ করেছেন। বৃহস্পতিবার ১৮, বুধবার ১৮ ও মঙ্গলবার ১৬ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া গত দুই সপ্তাহে ২২২ জন শিশু ভর্তি হয়।
হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। চিকিৎসক ও নার্সরা।
হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে শয্যাসংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিটি শয্যায় গড়ে দু তিনজনকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে শীতের মধ্যে বারান্দায় রাখা হচ্ছে রোগীদের। এতে রোগীর স্বজনেরাও পড়েছেন বিপাকে। চাপ বেড়ে যাওয়া ঠিকমতো চিকিৎসা পারছে না
সরেজমিনে শিশু ওয়ার্ডে দেখা গেছে, নাতিদা নুর নামে এক রোগীর মা সুফিয়ার সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন শিশু ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স মৌসুমি রায়।
ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা সুফিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘১০ মাস বয়সী শিশু নাজিদ। নূরকে সর্দি, কাশির জন্য হাসপাতাল আনা হয়েছে।
তাকে সর্দি-জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত কারণে সোমবার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু মেয়েকে ক্যানোলা পরানোর জন্য নার্সদের বারবার বলা হলেও তাঁরা আসেননি। বরং আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।
এ বিষয়ে নার্স মৌসুমি রায় বলেন, এ ওয়ার্ড সহ পুরো সদর হাসপাতালে রয়েছে নার্সসংকট। ফলে রোগীদের
চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রোকসানা আক্তার বলেন, ঠান্ডাজনিত রোগে ছেলে আবি আব্দুল্লাহকে সোমবার সকালে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করি। কিন্তু সঠিকভাবে চিকিৎসা দিচ্ছে না চিকিৎসক ও নার্স।’
শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মৌসুমি রায় বলেন, কয়েক দিন ধরে রোগীর চাপ অনেক বেশি। শিশুদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানে শয্যা রয়েছে ২৫টি ও কেবিন ৬টি। মোট ৩১টি শয্যায় বর্তমানে রোগী ভর্তি ৫৬। আমাদের একার পক্ষে এত রোগীর চিকিৎসা দেওয়া কষ্টসাধ্য। তবুও সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এখানে আরও একজন নার্স দরকার।’
ভোলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) নিরুপম সরকার সোহাগ বলেন, ‘গরম ও ঠান্ডার কারণে শিশুরা নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জনবলসংকট থাকায় চিকিৎসা দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ১০০ শয্যার কার্যক্রম। ডাক্তার-নার্স চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে।
বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে কুতুবা ইউনিয়নের নূরজাহান বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে এসেছেন তার ছেলে নিয়ে। তিনি হাসপাতালে ডাক্তারের জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে ছিলেন ডাক্তার না পেয়ে। পরে বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বড় ডাক্তার দেখিয়েছেন ৩০০ টাকা বিজিট দিয়ে।
আফসোস করে গণমাধ্যম কর্মীদের নূরহাজান বলেন, টেহার জন্য আমার পোলাডার চিকিৎসা দিল না। সন্ধ্যায় হাসপাতালের বড় ডাক্তারকে ৩০০টাকা ভিজিট দিয়ে দেখাইছি। বড় ডাক্তারের নাম জানতে চাইলে হাতে রাখা ব্যবস্থা পত্র দেখিয়ে বলেন, এই যে দেহেন।
বোরহানউদ্দিন,দৌলতখান সহ জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রেরও একই চিত্র। যা সাধারন মানুষের কষ্ট যে কারো চোখে পড়বে। শুধু চোখে পড়ে না ভোলার বিভিন্ন উপজেলা কর্মরত বড় বড় ডাক্তারদের। এমনি চোখে পড়ে না জেলার বড় বড় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিষয়ে জানতে চাইলে, অফিস থেকে জানানো হয়, তিনি অফিসের বাহিরে আছেন। আরও জানানো হয় তিনি ছুটিতে আছেন। কোন কিছু জানার থাকলে ম্যাডামের কাছে জানতে পারবেন। ম্যাডামের কাছে জানতে চাইলে ম্যাডাম একটি লিখিত চিরকুট হাতে ধরিয়ে দেন। জনগনের কাছে গণমাধ্যম দায়বদ্ধ তাই ডাক্তার ম্যাডামের লিখিত জবাব গনমাধ্যমে তুলে ধরা হলো।
চোখে কিভাবেই পড়বে বলেন? তারা জনগণের টাকায় কেনা এসি রুমে অফিস করেন। জনগণের টাকায় বেতন নেন।
এই বিষয়ে ভোলা জেলার সিভিল সার্জনের বক্তব্যের জন্য তার ভোলা সদরের অফিসে গেলে জানানো হয়, ভোলা জেলার সিভিল সার্জন সরকারী কাজে ভোলার বাহিরে আছেন।
একই বিষয়ে জানতে গণমাধ্যম কর্মীরা চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করলে,গণমাধ্যম কর্মীদের জানানো হয়,’বক্তব্য দিতে হলে উর্ধতন কর্মকর্তাদের আদেশ ছাড়া দিতে পারবে না’।
অপর দিকে ভোলার জেলার স্বাস্থ্য সেবা ভুগী মানুষ বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার নেই, নার্স নেই, সঠিক সেবা পাওয়া যায় না।
কিন্তু ভোলা জেলার প্রতিটি উপজেলায় গ্রামে গ্রামে মাইকিং করা হয়, “ওমুক ডাক্তার বসেন ওমুক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এবং সেই ডাক্তারের সঠিক ঠিকানায় গিয়ে, দেখাও পাওয়া যায়। তারা ৪০০ – ৫০০ টাকা বিজিট নিয়ে রোগী দেখেন।
তাহলে সরকারী হাসপাতালে তারা কেন সেবা দিচ্ছেন না? তার মানে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার জনগণের টাকায় পড়াশুনা করে সেই জনগণের গলা কাটছে? সরকারি হাসপাতালগুলোতে সঠিক সেবা পেলে নিশ্চয়ই কেউ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতেন না!
এই সহজ কথাটা বোজার জন্য সাধারন মানুষই যথেষ্ট।
আরও নিউজ দেখুন