ভোলার দৌলতখানে দুই বছরেও সংস্কার হয়নি ধসে পড়া ২ সেতু

PicsArt_11-07-11.18.13.jpg

ভোলার দৌলতখানে দুই বছরেও সংস্কার হয়নি ধসে পড়া ২ সেতু

জেলা প্রতিনিধিঃ দুই বছরেও সংস্কার হয়নি ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের ধসে যাওয়া দুটি সেতু।

স্থানীয়দের দাবি, নির্মাণের এক সপ্তাহের মধ্যেই সেতু দুটি ধসে যায়। সেতু দুটি সংস্কার কিংবা যাতায়াতের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করায় ওই ইউনিয়নে বসবাসকারী প্রায় সাত হাজার মানুষের চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

স্থানীয়দের উদ্যোগে সেতুর সঙ্গে সড়কের সংযোগ দিতে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর চলাচলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোলার দৌলতখান উপজেলার মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন মদনপুর। প্রায় সাড়ে ছয় বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ইউনিয়নটিতে রাস্তাঘাট, সেতু-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের জন্য ২ নং ও ৭ নং ওয়ার্ডের খালের ওপর নির্মাণ করে দুটি সেতু। প্রতিটি সেতুর প্রাক্কলিত অর্থ ২৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৬ টাকা। এর মধ্যে ২ নং ওয়ার্ডে নির্মিত সেতুর ঠিকাদার দৌলতখান উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম খান ও ৭ নং ওয়ার্ডে নির্মিত সেতুর ঠিকাদার ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন নান্নুর ভাই মো. নাগর মিয়া। তবে নির্মাণের এক সপ্তাহের মধ্যেই সেতু দুটি ধসে যাওয়ার পাশাপাশি সরে গেছে এর সংযোগ সড়কের দুই পাশের মাটি। এতে ওই ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের চলাচলে নেমে এসেছে ভোগান্তি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নটির ৭ নং ওয়ার্ডের চরপদ্মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন খালের ওপর চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে একটি সেতু। নিচের অংশে মাটি না থাকায় সেতুটি দেবে গিয়ে কয়েকটি স্থানে ফাটল ধরেছে। এর সংযোগ সড়কের দুপাশে মাটি না থাকায় স্থানীয়রা সেতুর সঙ্গে কোনো রকমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছে। এতে চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীসহ গ্রামের বাসিন্দারা চলাচল করছে।

স্থানীয়রা বলছেন, সেতু দুটি বছর দুয়েক আগে নির্মাণ করা হয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই দুটি সেতুই ভেঙে গিয়ে মানুষের চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চরের বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন বলেন, যখন সেতুটির কাজ শুরু হয়, তখনই আমরা দেখেছি ব্যবহূত মালামালের গুণগতমান খুবই খারাপ ছিল।

স্কুল শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, যেখানে শর্ত ছিল এলসি পাথর ব্যবহারের, তার বিপরীতে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ছোট ছোট গোলাকৃতির নুড়ি পাথর। এমনকি পাথর-বালির মিশ্রণ ও রডের পরিমাণও দেয়া হয়েছে কম। এতে কাজের গুণগতমান একেবারেই খারাপ হয়েছে। সপ্তাহ না যেতেই ইউনিয়নের জনগণ যার ফলাফল দেখেছে। সামান্য পানির চাপেই দুটি সেতুই ধসে পড়ে। এমনকি সেতুর সংযোগ সড়কে মাটির পরিবর্তে দেয়া হয়েছে লোকালবালি। ফলে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে একটু একটু করে বালি সরে গিয়ে পুরো সংযোগ সড়ক এখন খালে পরিণত হয়েছে।

এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ইউনিয়নটি জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সেতুর নির্মাণকাজ পরিদর্শনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো লোকজনকেই এ অঞ্চলে দেখা যায়নি।

এরই মধ্যে ভেঙে যাওয়ায় ২ নং ওয়ার্ডের মানুষের চলাচলের জন্য অন্য স্থানে বিকল্প একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারেক হাওলাদার। তিনি বলেন, ৭ নং ওয়ার্ডের সেতুটি দেখার জন্য টেকনিক্যাল সাইটের লোকজন সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করবে। এরপর সেখানে সংস্কার কিংবা নতুন সেতু নির্মাণের প্রয়োজন হলে সে ব্যাপারেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top