আসছে সময়োপযোগী শিক্ষাক্রম – মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন

PicsArt_09-19-02.16.30.jpg

আসছে সময়োপযোগী শিক্ষাক্রম – মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন

মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।’ এই মেরুদণ্ড সোজা রাখার জন্য দর সময়োপযোগী শিক্ষাক্রম। বাংলাদেশ সরকার তা-ই করছে। ব্যাপক পরিবর্তন আসছে দেশের

২০২৩ পরিবর্তিত সালে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। শেষ হবে ২০২৫ সালে। ২০২২ প্রাথমিকে ১০০ ও মাধ্যমিকে ১০০- মোট ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন এই শিক্ষাক্রমের পাইলটিং করা হবে। এতে কারিগরি ও মাদ্রাসা

পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে। প্রস্তাবিত নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম থেকে তৃতীয়া শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। ক্লাসে উপস্থিতির ভিত্তিতে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হবে এসব শ্রেণিতে। সনদের জন্য শিক্ষা পারদর্শিতা নিশ্চিত করতে চায় সরকার।

প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা থাকবে না। এসএসসি পরীক্ষার আগে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না। পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী ও অষ্টম শ্রেপির জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করা

শিক্ষার্থীদের মাথা থেকে পরীক্ষার চাপ সারানো বইয়ের বোঝা কমানোর জন্য এটি সর্বোত্তম উদ্যোগ। দিনরাত পড়ার চাপে চ্যান্টা হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা জীবনের অন্যান্য দিক নিয়ে চিন্তা করার এতটুকু ফুরসত পায় । পরীক্ষা আর ভালো ফলাফলের পেছনে ছুটতে ফুটতে শিক্ষার্থী-অভিভাবক উভয়ের নাভিশ্বাস। নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলে এই পেরেশানিটা দুন্ন হবে। প্রতিযোগিতার মনোভাবটা কাটবে। কিছুটা হলেও আনন্দের মধ্য দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। তারা মুখস্থনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। ক্লাসরুম হবে তাদের শিক্ষাগ্রহণের প্রাণকেন্দ্র।

শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে পাঠদান করা হবে। যার বিশেষ ফল ভোগ করবে পরিবার সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রট।

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পর্যন্ত বিজ্ঞান, মন শক্ষা বিভাগের বিভাজন থাকবে না। সব ছাত্রছাত্রীকে কারিগরির একটি ট্রেড কোর্স অবশ্যই পড়তে হবে। কোর্সটি বাধ্যতামূলক করা হবে।

প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি এই অভিন্ন ১০টি বিষয় সবাইকে পড়তে হবে।

দশম শ্রেণির পাঠ্যসুচির ওপর নেওয়া হবে এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা। বছর শেষে একাদশ শ্রেণিতে একটি ও দ্বাদশ

শ্রেণিতে একটি বর্ষসমাপনী পরীক্ষা হবে। এই দুটি পরীক্ষার ফল সমন্বয় করে দেওয়া হবে এইচএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষার

কেবল একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা- এই তিন শাখা বাছাই করতে পারবে। আগে যেম

এসএসসি পরীক্ষার আগেই অর্থাৎ নবম শ্রেণি থেকে শাগা বা বিভাগ পছন্দ করতে হতো; নতুন শিক্ষাক্রমে তা থাকছে না। এইচএসসির আগ পর্যন্ত শাখা বাছাইয়ের ঝামেলা হতে মুক্তি পাচ্ছে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সবাই।

নতুন এই শিক্ষাক্রমে ক্লাসগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। পরীক্ষার পাশাপাশি ক্লাসরুমের ধারাব মূল্যায়ন বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে করা হবে। শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতিটা হবে অনেকটা বাধ্যতামূলক। এতে ছাত্রছাত্রীরা পড়ার অতটা চাপ অনুভব করবে না। ক্লাসের পড়া ক্লাসে শেষ হলে বাসায় গিয়ে পড়া নিয়ে তেমন একটা পেরেশানি থাকবে না।

মাঝখানে বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমকে দুর্বোধ্য করে ফেলা হয়েছিল। ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক কেউই পুরোপুরি বুঝতে পারেনি যে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে পড়ানো হচ্ছে। সবাই একটা ধোঁয়াশার মধ্যে ছিল। এত বেশি পরীক্ষা ছিল যে একটা পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই চলে আসত আয়েকটা পরীক্ষা। এখনও আছে। এই নিয়ম বাতিল হলেই রক্ষা। বড় বাঁচা বেঁচে যাবে ছাত্র-শিক্ষক অভিভাবক সবাই।

ইংলিশ মিডিয়ামের কথা আলাদা। ওই সব স্কুলের সিলেবাসের সঙ্গে বাংলা মিডিয়ামের সিলেবাসের কেনো মিল নেই। পড়ানোর ধনও সম্পূর্ণ আলাদা। অধিকাংশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষাক্রম ক্লাসকেন্দ্রিক। তারা অনেক আগে থেকেই উন্নত বিশ্বের কারিকুলাম অনুসরণ করে আসছে।

অনেকটা সময় চলে যাবার পরও যে সরকারের বোধোদয় হয়েছে, শিক্ষাক্রম নিয়ে ভারতে শুরু করেছে- তা জাতির মেরাদণ্ডের জন্য কল্যাপের। শিক্ষা বিষয়ক জটিলতা যত কম

পিএসসি, জেএসসি-জেডিসি, এসএসসি, এইচএসসি অতসব পরীক্ষা দিতে দিতে ছাত্রছাত্রীরা ত্যক্ত-বিরক্ত। অভিভাবকদের নাওয়া-খাওয়া-ঘুম হারাম। সিস্টেমের কারণে তাদেরকে দৌড়াতে হয় এক শিক্ষকের বাসা থেকে আরেক শিক্ষকের বাসায়। কোচিং সেন্টার থেকে কোচিং সেন্টারে পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিস্তার অন্ত নেই। আশা করা যায়, অশুবিহীন প্রতিযোগিতামূলক পথচলার অবসান ঘটবে। ছাত্রী স্কুল-কলেজে পড়ালেখার বাইরে অন্যান্য পড়ালেখা করতে পারবে। গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি, কবিতা, বিজ্ঞান কৃষিসহ নানা রকম বই পড়ার সময়-সুযোগ দুটোই পাবে।

নতুন লুল শিক্ষাব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আসবে। পণ্ডিত মশাই যখন গাছতলায় বসে জালিবেত হাতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন তখন সমাজ আদবকায়দা, মানবিকতা ইত্যাদির ছোয়া ছিল শিক্ষা তখন ছিল ‘জীবনমুখী’।

হয় জাতীয় উন্নয়ন তত দ্রুত তুরান্বিত হয়। এই ডিজিটাল যুগে কারিগরি ও বাস্তবমুখী শিক্ষার আলাদা একটা গুরুত্ব আছে। বড় বড় দেখছে। পাশাপাশি ডিডিটাল দুনিয়ার কথা ডিগ্রি নিয়ে কর্মহীন বসে থাকার চেয়ে কারিগরি শিক্ষা অর্জন করে কাজে লেগে থাকা ব্যক্তি- পরিবার-সমাজ-দেশ সবার জন্য মঙ্গলের। কারিগরি একটা বিষয় বাধ্যতামূলক করাটা বিজ্ঞানসম্মত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

বর্তমান সরকার শিক্ষার ক্ষেত্রে জীবন ও

জীবিকা দুটোকেই সমান গুরুত্বের সঙ্গে

ভাবছে। সরকারের ভাবনাটা প্রশংসনীয়। এই

ভাবনার বীজটা ছাত্রছাত্রী অভিভাবক সবার

মাঝে বপন করতে হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক পড়ালেখা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক ক ডিজিচাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

শিক্ষাক্রমের সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকার সম্পর্ক না থাকলে সে শিক্ষাক্রম বেশি দিন টেকসই হয় না। বিষয়টা যে দেশ যত দ্রুত অনুধাবন করতে পেরেছে সে দেশ তত দ্রুত অয়নের মহাসড়কে পা রেখেছে। অনেক সময় পেরিয়ে বাংলাদেশ সরকার মানুষের

শিক্ষার্থীরা অনেক অনেক চাপ থেকে মুক্তি পাবে জেনে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটাই আধুনিক মানুষ বা সমাজের লক্ষা। বাংলাদেশের শিক্ষাক্রম দেখিতে হলেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে যাচ্ছে। আধুনিক তা বিশেষ সহায়ক হবে।

জীবন ও জীবিকার কথা চিন্তা করে পাঠ্যসূচিতে জীবন ও জীবিকা’ নামক একটা বিষয় সংযুক্ত করেছে। চিন্তাটা খুবই আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ও মানবিক।

জীবন-জীবিকার পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়টাকে সমধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ক পড়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। যার কারণে জীবনের শুরুতেই ছাত্রছাত্রীরা স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজর দিতে শিখবে।

শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকা চাই। বিষয়টি চিন্তা করে নতুন শিক্ষাক্রমে শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক জ্ঞান আহরণের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা আছে। ছাত্রীদের আচার গঠনে তা বিশেষ সহায়ক হবে। সবমিলে নতুন শিক্ষাক্রম হবে যুগের সঙ্গে মানানসই। সার্বিক বিবেচনায় মানোত্তী

আমূল পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের মানুষের ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক জীবনে। এ দেশের শিক্ষাপদ্ধতি, শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আন্দোলন সংগ্রাম। এখনও সরকার সময়ের কাজটা ঠিক সময়ে করছে। করোনাকালীন একটা বড় ধামতে হচ্ছে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে। সে যাতা সামলাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে নতুন

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে প্রাথমিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং মাধ্যমিকে মষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শিক্ষাক্রমের নতুন কারিকুলাম চালু হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ এবং ২০২৫ সালে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামে পাঠদান শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পরিবর্তিত শিক্ষাক্রম অনেকটাই আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের শিক্ষাক্রনের আদলে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নে ও ছাত্রছাত্রীদের মেধা মনন বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা সারা পৃথিবীতে

আলো ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশ সেই আলোর পথযাত্রী হতে ওরিতে উঠতে যাচ্ছে। জাতীয় জীবনে আলোকিত মানুষ গড়তে এর বিকল্প নেই। আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক মানবিক সমাজ গড়ার হাতিয়ার শিক্ষা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা হলো এর ভিত্তি। তিত্তি যদি সঠিক ও শক্ত না হয় তাহলে বিপথে চলার সুযোগ থাকে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা একটা সময়োপযোগী শিক্ষাক্রমে প্রবেশ করতে যাচ্ছে যা তাদের জীবন গঠনে বিশেষ সহায়ক হবে। শদগাদা ই बूখস্থ করে পরীক্ষার ভালো নম্বর পাওয়ার মতো শিক্ষাব্যবস্থা আসলেই অতি পুরনো ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা হতে বেরিয়ে আসা খুব জরুরি। সরকার দেরিতে হলেও সেই চেষ্টাই করছে। পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশে আসছে সময়োপযোগী শিক্ষ

প্রাক্তন খণ্ডকালীন শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাইভেট শিক্ষকেরও খুব একটা প্রয়োজন হবে না। সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা কোচিং সেন্টারে দৌড়াতে হবে না।

পরীক্ষার ঝামেলা কমে যাওয়ায় প্রতিযোগিতায় মনোভাব কমবে। ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সারা বছর যে ইঁদুর দৌড় দৌড়াত তাও কমে আসবে।

আধুনিক শিক্ষা আসলে এমনি হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ উন্নত দেশেই ক্লাস থ্রি-ফোর পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যায় আসে। আনন্দ-বিনোদনের মধ্য দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে। যাকে বলা যায় ‘প্রকৃত’ শিক্ষা।

আদিতে দার্শনিক সক্রেটিস, অ্যারিস্টটল প্লেটো ও পরবর্তীতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুসহ মহামনীষীয়া এই ধরনের শিক্ষার কথাই বলে গেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top