কারাগার যেন দুর্নীতির এক মহাচক্র! বিপুল অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য

PicsArt_07-28-08.31.30.jpg

কারাগার যেন দুর্নীতির এক মহাচক্র!বিপুল অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য

অপরাধ প্রতিবেদকঃ দেশের কারাগারগুলো দুর্নীতির এক মহাচক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। কারা অভ্যন্তরে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বড় একটি ক্ষেত্র হলো কারা ক্যান্টিন। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ মূল্যে বন্দিদের কাছে খাবার বিক্রি করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

সারা দেশ থেকে যার একটা অংশ কারা অধিদপ্তরেও আসে। অথচ এসব অর্থের কোনো অডিট হয় না। এছাড়া কারাগারে আটক বন্দিদের কাছ থেকে বন্দি বেচাকেনা, সাক্ষাৎ বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, খাবার বাণিজ্য, চিকিৎসা বাণিজ্য, পিসি বাণিজ্য, পদায়ন বাণিজ্য, কারা অভ্যন্তরে নিষিদ্ধ মালামাল প্রবেশ বাণিজ্য এবং জামিন বাণিজ্যের নামেও প্রভাবশালী চক্রটি বিপুল অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য করে আসছে। খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের তদন্তে এ রকম চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

কুষ্টিয়া জেলা কারাগার নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিটি ভয়াবহ সব তথ্য পায়। বিভিন্ন কারাগার পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কমিটির রিপোর্টে আরও বলা হয়, শুধু কুষ্টিয়া কারাগার নয়, সারা দেশের কারাগারেই একই চিত্র বিরাজ করছে।

এজন্য এ দুর্নীতির ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে কারা অধিদপ্তরের সব পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সভা আহ্বান করার সুপারিশও করা হয় তদন্তে রিপোর্টে। কিন্তু দুবছর পার হয়ে গেলেও কারা অধিদপ্তর ওই সভার আয়োজন করেনি। এমনকি যে ১৯টি সুপারিশ করা হয়েছিল তার অধিকাংশ বাস্তবায়ন হয়নি। সুপারিশ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক দফা তাগিদপত্র দিয়েও কাজ হয়নি।

কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে গত বছর ২০ জানুয়ারি কারা মহাপরিদর্শককে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়। কারা-১ শাখার উপসচিব মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লিখিত তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে ৭টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। তৎকালীন আইজি প্রিজনকে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রতিটি সুপারিশ বাস্তবায়নপূর্বক অগ্রগতি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে।

কিন্তু সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের নামে শুভঙ্করের ফাঁকির পথ বেছে নেওয়া হয়। কাউকে শোকজ করে সময়ক্ষেপণ করা হয়, আবার কারও বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করলেও তা ২ বছর ধরে চলমান দেখানো হচ্ছে। অথচ ওইসব প্রমাণিত দুর্নীতির বিষয়ে ৭ দিন তদন্ত করেই বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব। কিন্তু তা না করে দুর্নীতিবাজদের আরও দুর্নীতি করে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

সাত দফা নির্দেশনায় যা ছিল : সুরক্ষা সেবা বিভাগের নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক) তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ এবং মতামত অনুযায়ী জেলা কারাগারের জেল সুপার জাকের হোসনকে অবিলম্বে কুষ্টিয়া হতে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে বদলির প্রস্তাব এবং বিভাগীয় মামলা দায়ের করতে ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠাতে হবে।

খ) কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের সাবেক জেলার এসএম মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে একই সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। গ) তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ এবং মতামত অনুযায়ী কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে দীর্ঘদিন থেকে চলমান অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কারারক্ষী জিয়াউর রহমান-কারারক্ষী নম্বর ৪১৭৯৫ (অর্ডারলি), মো. মনিরুজ্জামান-কারারক্ষী নম্বর ৪২২৭২ (খাদ্য গুদাম সহকারী), মো. দেলোয়ার হোসেন-কারারক্ষী নম্বর ৪২১১২ (গেট অর্ডার), মো. মুরাদ হোসেন-কারারক্ষী নম্বর ৪১৭৯৫ (গেট অর্ডার), মো. আনিচুর রহমান- (কারারক্ষী নম্বর ৪২৬৬২), হারুণ অর রশিদ-(কারারক্ষী নম্বর ৪২৬৪৭), মাসুদ রানা-(কারারক্ষী নম্বর ৪২২০৯), আরিফুল ইসলাম-(কারারক্ষী নম্বর ৪২৭৪১), মো. আব্দুর রাজ্জাক-(কারারক্ষী নম্বর ৪২৭২৮), আল আমিন-(কারারক্ষী নম্বর ৪২৭৬৩), মো. শহিদুজ্জামান-(কারারক্ষী নম্বর ৪২৮০২), মো. জাহাঙ্গীর আলম-(কারারক্ষী নম্বর ৪২২৫৩), মো. আশিকুর রহমান-(কারারক্ষী নম্বর ৪২৬৭৬), মো. রাশেদুল ইসলাম-(কারারক্ষী নম্বর ৪২৬৬৪), মো. মামুন হোসেন-(কারারক্ষী নম্বর ৪২৬৯৯), মো. জসিম উদ্দিন-(কারারক্ষী নম্বর ৪২৭৫৬), জাহাঙ্গীর আলম রেজা-(কারারক্ষী নম্বর ৪১৭১৮, মুক্তিশাখা), মজিবার রহমান-(কারারক্ষী নম্বর ৪৪১৭৩৮, ডিউটি বণ্টনকারী), সর্বপ্রধান কারারক্ষী মজিবর রহমান, সর্বপ্রধান কারারক্ষী তপন কুমার হালদার এবং হিসাবরক্ষক মো. আজাহার আলীকে কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে বদলিপূর্বক কারাবিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুরক্ষা সেবা বিভাগকে অবহিত করতে বলা হয়। ঘ) এছাড়া কারা হাসপাতালের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল বিভাগে কর্মরত কারারক্ষী লিওন হোসেন (কারারক্ষী নম্বর ৪২০৩৫) এবং ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট আমিন বিন জামালকে অবিলম্বে বদলিপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে কারাবিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুরক্ষা সেবা বিভাগকে অবহিত করতে বলা হয়। ঙ) কারাগারের অনিয়মসমূহ মূলত ক্যান্টিনকেন্দ্রিক হওয়ায় এবং ক্যান্টিন পরিচালনাসংক্রান্ত বিষয়ে ইতিপূর্বে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে গৃহীত কার্যক্রম এ বিভাগকে অবহিত করতে হবে। চ) কারাগারের ক্যান্টিন থেকে প্রাপ্ত আয় অবশ্যই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আর্থিক বিধিবিধানের আলোকে খরচের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ছ) কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের আলোচ্য অনিয়ম/দুর্নীতি দেশের অন্যান্য কারাগারেও ঘটে থাকে, বিধায় এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের লক্ষ্যে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে অনিয়ম ও দুর্নীতিসমূহ তদন্তে অতিরিক্ত সচিব (কারা অনুবিভাগ) সৈয়দ বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর ১৫৪ পৃষ্ঠার বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে। যা একটি ঐতিহাসিক দলিলও বটে।

প্রতিটি বিষয় বিশদভাবে তথ্য-প্রমাণসহ তুলে ধরা হয়েছে। পুরো রিপোর্ট যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত আছে। ওই রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর সব অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ১৯ দফা সুপারিশ করা হয়। যার সবশেষ সুপারিশে বলা ছিল, ‘কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের অনিয়ম তদন্ত টিমের প্রধান কর্তৃক ইতঃপূর্বে অপরাপর কর্মকর্তাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, ঝিনাইদহ জেলা কারাগার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগার এবং রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করা হয়। ওই সব কারাগারেও একই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি পরিলক্ষিত হয়েছে।

কারাগারের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি দীর্ঘদিন চলমান থাকলে কারা অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি যে কোনো সময় ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সভাপতিত্বে সব উপ-কারা মহাপরিদর্শক, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক এবং কারা মহাপরিদর্শকের সমন্বয়ে একটি সভা করে অনিয়ম সমূহ বন্ধের লক্ষ্যে কর্মকৌশল তৈরি করা দরকার।’

সূত্র জানায়, ২ বছর পার হয়ে গেলেও অদ্যাবধি ওই সভার আয়োজন করেনি কারা অধিদপ্তর। এ বিষয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এ সভার আয়োজন করার কথা কারা অধিদপ্তরের। কিন্তু তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশে কারা ক্যান্টিনের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে উল্লেখযোগ্য সুপারিশের মধ্যে ছিল ক্যান্টিন পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা অসম্পূর্ণ। এটি আপডেট করতে হবে। তা করতে না পারলে প্রয়োজনে কারা ক্যান্টিন বন্ধ করে দেওয়া। কারাগারগুলোর ক্যান্টিনের পিসি (প্রিজনার্স ক্যাশ) অ্যাকাউন্টের বর্তমান স্থিতির পরিমাণ উল্লেখপূর্বক প্রত্যেক মাসে কারাগারভিত্তিক আয়-ব্যয় উল্লেখসহ প্রতিবেদন তৈরি করে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো। ক্যান্টিন থেকে বিক্রীত মালামালের তালিকা পিসি কার্ডে মূল্যসহ অবশ্যই লিপিবদ্ধ করা।

কারা ক্যান্টিন পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতি মাসে দক্ষ ও সুনামধারী কারারক্ষীদের পর্যায়ক্রমে ক্যান্টিনের দায়িত্ব প্রদান করা, দায়িত্ব পালনের জন্য লভ্যাংশ থেকে সম্মানী দেওয়া। এছাড়া দায়িত্ব প্রদানকালে কারারক্ষীদের জ্যেষ্ঠতাকে মূল্যায়ন করা। ক্যান্টিন পরিচালনার সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিচালনা করা। কেন্দ্রীয় কারাগারের ক্ষেত্রে ডেপুটি জেলার (সংস্থাপন) ও জেলার এবং জেলা কারাগারের ক্ষেত্রে জেলার ও জেল সুপারের যৌথ স্বাক্ষরে হিসাব পরিচালনা করা।

কোনোভাবেই নগদ অর্থ হাতে রেখে খরচ না করা। ক্যান্টিনের আয়-ব্যয়ের জন্য আলাদা ক্যাশ বহিসহ সব রেজিস্টার সংরক্ষণ করা এবং এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মাসিক সম্মানী হিসাবে দেওয়া। বন্দি পিসি ক্যাশের মাধ্যম ব্যতীত নগদ টাকায় ক্যান্টিন পরিচালনা বন্ধ করা। এজন্য বন্দি পিসি কার্ডে ক্রয়কৃত মালামাল এন্ট্রি করে বন্দিদের পিসি কার্ড থেকে কর্তনের ব্যবস্থা করা।

প্রতি মাসে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি জেলার/জেলারের মাধ্যমে ক্যান্টিনের আয়-ব্যয় অডিট করা এবং প্রতিবেদন কারা মহাপরিদর্শক বরাবর পাঠানো। এছাড়া প্রতি বছর কারা অধিদপ্তর কর্তৃক বিশেষ অডিট টিম গঠন করে ক্যান্টিন পরিচালনার আয়-ব্যয় অডিট করে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো নিশ্চিত করা।

ক্যান্টিন পরিচালনার লভ্যাংশ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ক্যান্টিন পরিচালনার নীতিমালা অনুযায়ী খরচ করতে হবে। কারারক্ষী ও কারাবন্দিদের কল্যাণ ব্যতীত কারাগারের দৈনন্দিন প্রয়োজনে এ লভ্যাংশের টাকা কোনোভাবেই খরচ করা যাবে না। এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করতে হবে।

সূত্র জানায়, ক্যান্টিন সংক্রান্ত বেশিরভাগ সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। সবই চলছে আগের নিয়মে। পিসি কার্ডের বাইরে নগদ টাকায় কেনাবেচা হয় বেশি। এছাড়া নির্ধারিত দামের বাইরে বেশি দামে খাবার ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করা হয়। যার কোনো প্রমাণ থাকে না।

দেশে মোট করাগারের সংখ্যা ৬৮টি। এর মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং বাকি ৫৫টি জেলা কারাগার। প্রতিটি কারাগারে গড়ে প্রতিদিন দেড় থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যদিও অফিসিয়ালি এই বেচাকেনা অর্ধেকের কম দেখানো হয়। প্রতিটি কারাগার থেকে লভ্যাংশের ৪০% পাঠানো হয় কারা অধিদপ্তরের তহবিলে। কিন্তু এ অর্থ কোথায়-কিভাবে খরচ করা হয় তার কোনো অডিট হয় না।

কথা ছিল, এসব টাকা কারারক্ষী এবং বন্দিদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। কিন্তু বাস্তবে এ টাকা প্রভাবশালীদের পকটে চলে যায়। এছাড়া টাকা ভাগাভাগি নিয়ে প্রভাবশালী কারা কর্মকর্তাদের মধ্যে সারা বছর অদৃশ্য দ্বন্দ্ব লেগে থাকে। এক সময় কারা ক্যান্টিনের লভ্যাংশের টাকা ভালো কিছু কাজে লাগানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। গড়ে তোলা হয় কারা পরিবার নিরাপত্তা প্রকল্প, প্রিজনার্স অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং প্রিজনস কো-অপারেটিভ সোসাইটি। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই সব থিতু হড়ে পড়ে।

সূত্রগুলো জানায়, রাজনৈতিক খুঁটির নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কারা অভ্যন্তরে শক্তিশালী দুর্নীতিবাজ চক্র গড়ে উঠেছে। তাদের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শেল্টার রয়েছে বলে তারা প্রচারও করে। এসব সাইনবোর্ড ব্যবহার করে তারা পুরো কারাগার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। কারাগারে বিরাজমান সব ধরনের বাণিজ্য থেকে তাদের ভাগ দিতে হয়। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গেলে কোনো আইজি প্রিজনও সুস্থিরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।

স্বার্থের দ্বন্দ্বে কিছুদিন থেকে কারাগারে একক গ্রুপ ভেঙে গিয়ে তিনটি পৃথক গ্রুপও তৈরি হয়েছে। যারা একে অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি চালাচালি করে। এর ফলে সব গ্রুপের সব কিছু ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। যদিও প্রকাশ্যে তারা এক আছেন বলে দাবি করেন। এছাড়া ইতঃপূর্বে সুরক্ষা সেবা বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার কারণে কারাগারের দুর্নীতিবাজ চক্রগুলো বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সে সময় ঘুস লেনদেন ছিল ওপেন সিক্রেট। প্রভাবশালী কারা কর্মকর্তারা যখন-তখন মন্ত্রণালয়ে এসে কাজ হাসিল করতেন নির্বিঘ্নে। দুর্নীতিবাজ কারা কর্মকর্তাদের সহযোগী হিসাবে মন্ত্রণালয়ে একটি সাইলেন্ট টিম এখনো সক্রিয় রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top