রফিকুল আমীন ‘অসুস্থতার’ কথা বলে তিন মাস হাসপাতালে

রফিকুল আমীন ‘অসুস্থতার’ কথা বলে তিন মাস হাসপাতালে

তদন্ত প্রতিবেদকঃ রফিকুল আমীন ‘অসুস্থতার’ কথা বলে প্রায় তিন মাস ধরে হাসপাতালে আছেন।

এই দফায় তিনি আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে সবচেয়ে বেশি দিন।

হাসপাতালের প্রিজন সেলে থেকে তিনি জুমে ব্যবসায়িক বৈঠক এবং নতুন এমএলএম কোম্পানি খোলার কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর একটি জুম মিটিংয়ের প্রায় এক ঘণ্টার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।

এরপর কারা কর্তৃপক্ষ রফিকুল আমীনের পাহারায় থাকা প্রধান কারারক্ষীসহ আটজনকে গত বৃহস্পতিবার প্রত্যাহার করে নেয়। গতকাল ৪ প্রধান কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ১৩ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মানি লন্ডারিং মামলায় রফিকুল আমীনকে ২০১২ সালের অক্টোবরে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে রফিকুল আমীন একেক সময় একেক রোগের কথা বলে হাসপাতালের প্রিজন সেলে থেকেছেন। তিনি মূলত ঘুরেফিরে বিএসএমএমইউ ও বারডেম হাসপাতালে আসা–যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ সময় ছিলেন বিএসএমএমইউতে। তবে এবারের মতো একটানা এত লম্বা সময় তিনি এর আগে ছিলেন না। এর আগে সেখানে সর্বোচ্চ টানা দেড় মাস থেকেছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ১১ এপ্রিল তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএসএমএমইউর প্রিজন সেলে আসেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক সুভাষ কুমার ঘোষ শুক্রবার বলেন, রফিকুল আমীন গত ১১ এপ্রিল বিএসএমএমইউতে আসেন হৃদ্‌যন্ত্র, কিডনি, অর্থোপেডিকস ও ডায়াবেটিসের সমস্যার চিকিৎসার কথা বলে। এখনো সেখানে আছেন।

হাসপাতালের প্রিজন সেলে বসে রফিকুল আমীনের জুমে ব্যবসায়িক বৈঠক করার বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, রফিকুল আমীন বিএসএমএমইউর প্রিজন সেলে কতবার জুমে ব্যবসায়িক বৈঠক করেছেন, তা তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান করে বের করবে।

তদন্ত শুরু
রফিকুল আমীন কীভাবে জুমে বৈঠক করলেন, তা খতিয়ে দেখতে কারা অধিদপ্তরের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটির প্রধান ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজনস) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছে। তদন্ত শেষে কমিটি কারা মহাপরিদর্শকের (আইজি-প্রিজনস) কাছে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন।

সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা
বিএসএমএমইউর প্রিজন সেলে রফিকুল আমীনের পাহারার দায়িত্বে থাকা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আট কারারক্ষীকে বৃহস্পতিবার প্রত্যাহার করে নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

এঁদের মধ্যে চারজন প্রধান কারারক্ষীকে গতকাল সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাঁরা হলেন মো. ইউনুস আলী মোল্লা, মীর বদিউজ্জামান, মো. আবদুস সালাম ও মো. আনোয়ার হোসেন। রফিকুল আমীনের পাহারায় বিভিন্ন পালায় দায়িত্বে থাকা সাতজন সহকারী প্রধান কারারক্ষী এবং ছয়জন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে গতকাল বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। সাত সহকারী প্রধান কারারক্ষী হলেন জসিম উদ্দিন, সাইদুল হক খান, বিল্লাল হোসেন, ইব্রাহিম খলিল, বরকত উল্লাহ, এনামুল হক ও সরোয়ার হোসেন। বিভাগীয় মামলা হওয়া ছয় কারারক্ষী হলেন মোজাম্মেল হক, জাহিদুল ইসলাম, আমির হোসেন, কামরুল ইসলাম, শাকিল মিয়া ও আবদুল আলীম।

জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে হওয়া বিভাগীয় মামলায় কার দায়িত্বে কী ধরনের অবহেলা ছিল, তা বিচারে বেরিয়ে আসবে। এর ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলায় অভিযোগ
ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ ৫৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দুটি মামলা করে দুদক।

মামলায় বলা হয়, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। আসামিরা মানুষের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন এবং সেখান থেকে লভ্যাংশ, সম্মানী ও বেতন-ভাতার নামে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা সরিয়ে নেন।

আদালতের নির্দেশে ২০১৩ সাল থেকেই ডেসটিনির নামে থাকা বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top