১০ বছর অফিস করেন নি; বেতন ভাতা তুলছেন
সরকারি চাকরি করেন দেশে, থাকেন ভারতে
জেলা প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পরিবার কল্যাণ সহকারী চামেলী শিকদারের বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি চাকরি করেন সরকারি কিন্তু অফিসে আসেন না। মাঠ পর্যায়ে কাজও করেন না। বছরের বেশিরভাগ সময়েই তিনি থাকেন দেশের বাইরে। ছুটিও নেন না। তবে অফিস থেকে মানুষের জন্য বিতরণকৃত ওষুধপত্র ঠিকই তুলে নেন।
চামেলী শিকদার ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের পল্লিবেড়া গ্রামের সুশান্ত মাস্টারের স্ত্রী। তিনি কাউলিবেড়া ইউনিয়নের পল্লিবেড়া পরিবার কল্যাণ সহকারী হিসেবে কর্মরত।
গত ১০ বছর ওই এলাকায় পরিবার কল্যাণের কোনো কাজই করেন না চামেলী শিকদার। কারণ তিনি দেশেই থাকেন না। ইতোমধ্যে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ভারতে বাড়িও করেছেন। সেখানে তার সন্তানরা থাকে। পড়াশোনাও করে সেখানে। তিনিও তাদের সঙ্গেই থাকেন।
পল্লিবেড়া গ্রামের কবির হোসেন বলেন, ‘চামেলী শিকদারের সন্তানরা ভারতে থাকে। সেখানেই তারা লেখাপড়া করে। তাদের দেখভালের জন্য তিনি (চামেলী শিকদার) ভারতেই থাকেন বেশিরভাগ সময়। বেতন তুলে, ওষুধপত্র তুলে, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে আবার ভারতে চলে যান।’
ভাঙ্গার পরিবার কল্যাণ অফিসের কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চামেলী শিকদার তার কর্মস্থলে মাসের পর মাস অনুপস্থিত থেকেও বেতন উত্তোলন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের কয়েকজন স্টাফ জানান, আগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে চামেলী এই অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে আগের স্যারকে ম্যানেজ করে ছুটি ছাড়াই মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকেন। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। তবে ঠিকই তিনি ওষুধসামগ্রী সময়মতো উত্তোলন করেন এবং তার মাসিক প্রতিবেদনও ম্যানেজ করে নেন। কোনো কাজ না করেই বেতনভাতা তুলে নিচ্ছেন বছরের পর বছর। ভোগ করছেন সরকারের উৎসবভাতা ও বোনাসসহ অন্যান্য সুবিধাদি। গত ১০ বছর এভাবেই চালাচ্ছেন তিনি।
সম্প্রতি চামেলী শিকদারের ব্যাপারে বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন পল্লিবেড়া গ্রামবাসী।
উপজেলার পরিবার কল্যাণ সহকারী চামেলী শিকদারের ব্যাপারে জানতে চাইলে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিম উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রবীন বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। এখানে এসে চামেলী শিকদারকে কোনোদিনও কর্মস্থলে পাইনি। তবে ইউএনও স্যারের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ বিষয়ে চামেলী শিকদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কর্মস্থল ও বাড়িতে পাওয়া যায়নি।