সত্য বচন – সরকারি অফিসগুলো দুর্নীতিমুক্ত হলে এ দেশ দশ বছরে রূপ পরিবর্তন করবে – শাহানা সিরাজী
১৯২৩ সালের এক্ট কেন ২০২১ সালে প্রযোজ্য হবে?
তখন ছিলো বৃটিশশাসন। এখন স্বাধীন বাংলায় নতুন সংবিধান, সাংবিধানিক আইন রয়েছে। তামাদী আইন দিয়ে কী ভাবে শাসন করা হয়?
কেন টুটি চেপে ধরা? কেন তথ্য লুকানো? কেন সাংবাদিকদের কাছে প্রকৃত তথ্য সরবরাহ করা হয় না বা হবে না? কেন জনগনকে দেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানানো হবে না?
জনগনের টাকায় বেতন ভূক্ত কর্মচারী, জনগনের সেবার জন্যই। যদি জনগন সেবা থেকে বঞ্চিত হয়,যদি দেশের এবং দশের স্বার্থের পরিপন্থী কোন কাজ করা হয় তাহলে তা জনগনের জানার অধিকার রয়েছে। জনগনকে জানাবে সাংবাদিক। দেশের যে কোন দুর্যোগে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে সংবাদ সরবরাহ করে। অন্যায় প্রতিরোধ কল্পে সাংবাদিকেরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক ডিজাস্টারের সময় যখন মানুষ ভয়ে ঘর ছেড়ে বের হয় না তখন তারা মাঠে। এই যাদের অবস্থা তাদের কেন টুটি চেপে ধরা হচ্ছে? জেল হচ্ছে? একটি স্বাধীন দেশে কেন কালো আইন থাকবে, কেন তামাদী আইনকে আবার সচল করা হবে?
রাষ্ট্রের মালিক জনগন। সরকার কেবল রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ করে। পরিচালনা সঠিক ভাবে হচ্ছে কি না তা দেখার অধিকার জনগনের রয়েছে। জনগনকে জানাবে সাংবাদিক।
সেই সাংবাদিক পদে পদে লাঞ্চিত হয়,মার খায়,জেল হয়। এটা কেমন কথা হলো? যে কোন জরুরি পরিস্থিতিতে সরকার জনগনের পাশে দাঁড়ায়। সে পরিসেবা পৌছানো যাদের কাজ তারা চুরি,লুট করে নিজেরা মোটাতাজা হয়। সাংবাদিক কেন জানতে চায় মোটাতাজা কী ভাবে হলে? ব্যস লাগাও মার,টুটি চেপে ধরো।
এ সব সরকারের সুনাম নষ্ট করে। হাজারটা ভালো কাজ ডুবে যায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ছাড়া কোথাও গতি নেই,আপনার চাকুরিজীবীদের সম্পদের হিসাব নিন তো,কতো টাকা আয় করে ব্যয় কতো হয়,বাড়ি গাড়ি এ সব কি দিয়ে হয়!
বিশেষ কাজে ২০১০-২০১৩ মন্ত্রণালয়ে যেতাম। সেখানে তদবীর বাজের এতো ভীড় দেখেছি যে দাঁড়ানোর জায়গা পাইনি। তদবীরবাজ আমাকে দলে টেনে অন্যায় করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলো। আমাকে বলে, “কয় টাকা আর বেতন পান,ওখানে প্রচুর টাকা।” আমি বেক্কলের মতো জানতে চাইলাম,কাজ করি মাস শেষে বেতন পাই,”এখানে কী করবো যে এতো টাকা পাবো?” সে লোক অট্ট হাসি দিতে দিতে বললো,এখানে চারদিকেই টাকা আপনি দেখতে পাচ্ছেন না? আকি দৌড়তে দৌড়তে আমাদের ডি এস এডমিনের কক্ষে পৌঁছালাম। কিছুই বলতে পারছিলাম না,কেবল আমাদের অফিসিয়াল ফাইলের কী অবস্থা, জরুরি কাগজপত্র কী কী লাগবে জেনে চলে এলাম।
বের হবার পথে সেই লোককে সচিব এবং মন্ত্রীর কক্ষে দেখলাম। আমাকে দেখেই বিদ্রূপের হাসি হাসলো,যেন মারাত্মক কোন অন্যায় করেছি। এই হলো মন্ত্রণালয়, যেখানে তদবীর বাজের ছড়াছড়ি, যেখানে ওদেরই বিজয় হয়।
প্রসঙ্গতঃ আমার কাজে আমি ফেল করে পাশ করেছি।( সে সব লিখবো ইনশাল্লাহ কোনদিন)
অন্যায়ের ভেতর ডুবতে ডুবতে অন্যায় করাটাই কালচার হয়ে যায় বা আমাদের দেশে হয়েছে। সাংবাদিকেরা আছে বলেই এখনো কিছুটা ভয় ভীতি আছে। তাদের বলা হয় সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ বা খুঁটি। খুঁটি ভেঙে গেলে ঘর কী ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে!
রোজিনা এমন কী দেখে ফেলেছে যে তাকে এতো হেনস্তা হতে হচ্ছে? তথ্য অধিকার আইনে তো তথ্য যে কোন মানুষের দেখার অধিকার আছে? সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার এমন নিখুঁত প্ল্যানার কারা?
খুব সামান্য একটি ব্যাপার নিয়ে দেশের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান অন্যায় করছে,দেশ ব্যাপী হইচই হচ্ছে, এর পেছনে নেপথ্যে অন্য কোন অন্যায় হচ্ছে না তো? জনগনের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হচ্ছে না তো?
সরকারের অর্জনগুলোকে রোষানলে ফেলার চেষ্টা নয়তো?
কে আপন কে পর, কে যে ভালোবাসে আর কে যে অভিনয় করে বলা মুশকিল!
শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর ( সাধারণ)
পিটিআই মুন্সিগঞ্জ
কবি,প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক