সাবেক ডিসি সুলতানাসহ তিন ম্যাজিস্ট্রেটকে বরখাস্তের জন্য আইনি নোটিশ
বিশেষ প্রতিবেদকঃ সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগে প্রত্যাহার হওয়া কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন সহ কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাবেক তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বরখাস্তের জন্য আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
রবিবার (৯ মে) সাবেক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু এই নোটিশ পাঠান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ মোট পাঁচ জন সচিব বরাবর এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু জানান, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯ ধারা অনুযায়ী কোনও সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের প্রস্তাব কিংবা বিভাগীয় কার্যধারা রুজু হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত কিংবা ছুটিতে পাঠানো আবশ্যক। কিন্তু সাংবাদিক আরিফকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর মোবাইল কোর্টের নামে সাজা দেওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন সহ তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা চলমান থাকার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা (জিআর ৮৩/২০২০ কুড়ি) চলমান থাকলেও তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত কিংবা ছুটিতে গমনের নির্দেশ প্রদান না করার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উক্ত আইনের লঙ্ঘন এবং নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তার (সাংবাদিক আরিফের) মৌলিক অধিকারেরও লঙ্ঘন বটে।
এই আইনজীবী আরও জানান, আমরা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানতে পেরেছি, ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্তদের মধ্যে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বরিশাল জেলা প্রশাসনে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে এবং তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করছেন। বিভাগীয় কার্যধারা চলমান থাকার পাশাপাশি ফৌজদারি মামলার একজন আসামিকে স্বপদে বহাল করার আদেশ প্রদান এবং তার দ্বারা প্রকাশ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ফৌজদারি ও অন্যান্য সকল আইনের পরিপন্থী। কেননা একজন ফৌজদারি মামলার পলাতক আসামি কোনও প্রকার জামিন না নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দায়িত্ব পালন করা কোনোভাবেই আইনসিদ্ধ নয়।
এই আইনজীবী বলেন, ‘নোটিশ পাওয়ার এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় প্রতিকার চেয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে জানানো হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের নামে জেলা প্রশাসনের একটি পুকুরের নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে (১৪ মার্চ) অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে বাড়ি থেকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায় জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা। এরপর তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জেলা প্রশাসনে নিয়ে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। পরে তার কাছে আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে মধ্যরাতেই জেলা হাজতে পাঠানো হয়। এ ঘটনা গণমাধ্যমগুলো তুলে ধরলে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় পরদিন ঘটনাস্থলে যান রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। তার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এনডিসি এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। পরবর্তীতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এ ঘটনায় উচ্চ আদালতে রিট পিটিশনের পর আদালতের নির্দেশে গত বছর ৩১ মার্চ জেলার সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনসহ চার কর্মকর্তার নামে কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলা (জিআর ৮৩/২০২০ কুড়ি) করেন বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ও ভিকটিম আরিফুল ইসলাম।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ কেস ডায়রি অনুযায়ি এই মামলায় সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন ও এনডিসি রাহাতুল ইসলামসহ চার কর্মকর্তা এজাহার নামীয় আসামি। তারা এই মামলায় এখনও জামিন নেননি। কিন্তু এরই মধ্যে ফৌজদারি মামলার আসামি থাকা অবস্থায় রাহাতুল ইসলামকে বরিশাল জেলা প্রশাসনে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। যোগদানের পর তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করছেন বলে বরিশাল জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।