ভোলার চরফ্যাশনে নছিমন চালক আরিফকে ছেড়ে দিলেন ইউএনও রুহুল আমিন
জেলা প্রতিনিধিঃ ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিসে তিনদিন আটকে রাখার পর অবশেষে নছিমনচালক আরিফকে ছেড়ে দিয়েছেন ইউএনও রুহুল আমিন।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) নিজ জিম্মায় তাকে ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও নিজেই।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারই আমি নছিমনচালককে ছেড়ে দিয়েছি। তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ, মুচলেকা আদায় করিনি। এমনকি অভিভাবকের আসার জন্যও অপেক্ষা করিনি।
রুহুল আমিন বলেন, আমি খুব চাপে আছি। চাপে আছি বলেই জরিমানা, মুচলেকা কিংবা অভিভাবক আসার অপেক্ষা না করে নছিমনচালক আরিফকে ছেড়ে দিয়েছি। সবাই তো সব কিছু বোঝে না, আমি আসলে কাজটি না বুঝে করেছি।
ইউএনও আরও বলেন, নছিমনচালক আরিফকে কেন ইউএনও অফিসে আটকে রেখেছি; তার কারণ দর্শাতে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে নোটিশ এসেছে। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে আমাকে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বর্তমানে লিখিত জবাব প্রস্তুত করছি উল্লেখ করে ইউএনও বলেন, এই গোলমাল পাকিয়েছে আমার অফিসের স্টাফরা। তারাই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। আর শেষে চাপে পড়তে হলো আমাকে।
রুহুল আমিন বলেন, আমিতো অমানবিক কোনো কাজ করিনি। তাকে মারধর বা কারাদণ্ড দিইনি। শুধু আটকে রেখেছি। যেন তার বাবা-মা আসেন। আসলে তাদের হাতে তুলে দিতাম। কিন্তু আটককৃত নছিমনচালক ‘নেশাখোর’ হওয়ায় তার বাবা-মা আসেনি।
তিনি আরও বলেন, আমি তো কেবল জরিমানা আদায় করতে চেয়েছিলাম। নছিমনচালক ধার-দেনা করে ২০ হাজার টাকা এনেছিলেন ক্ষতিপূরণের জন্য। কিন্তু আমি মানবিক কারণে সে টাকা রাখিনি।
এদিকে রাতেই ভোলা সদর উপজেলার নিজ বাড়িতে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন আরিফ। ছেড়ে দেওয়ার আগে তার কাছ থেকে একটি ভিডিও ধারণ করে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরিফ বলেন, ইউএনও অফিসের লোকজন ভিডিওটি ধারণ করেন। তারা আমার মুখ থেকে স্বীকারোক্তি রাখেন; যে ইউএনও অফিসে শুধু আটকে রেখেছেন। মারধর করেননি, নিয়মিত খাবার দিয়েছেন।
ইউএনও অফিসে বন্দী নছিমনচালক মো. আরিফ
আরিফ বলেন, এটি সত্য যে আমাকে মারধর করেননি ইউএনও। কিন্তু আটকে রাখায় তিনদিন আমার খুব কষ্ট হয়েছে।
আরিফ ভোলা সদরের ৭ নং ওয়ার্ড চরসামাইয়া ইউনিয়নের বজলু মেম্বার বাড়ির বাসিন্দা। তার বাবার নাম মো. ইউসুফ এবং মা বকুল বিবি। ইউসুফ পেশায় দিনমজুর। আরিফ পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেন। তার দুই বছর বয়সী এক কন্যাসন্তান রয়েছে। তার নাম হাবিবা।
আরিফের বাবা ইউসুফ বলেন, আরিফ বাংলাবাজার এলাকায় মাছের ব্যবসা করে। কিন্তু করোনায় ব্যবসা খারাপ হওয়ায় ভাড়ায় নছিমন চালায়। ওই দিনও ভাড়ায় নছিমন চালাচ্ছিল। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পরদিন ইউএনও অফিসে গিয়েছিলাম। তখন গাড়িচালকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন ইউএনও। গাড়িচালক আমাকে জানান; ক্ষতি তিন লাখ টাকার হয়েছে। তবে আমাদের এক লাখ টাকা দিতে হবে। আমরা ২০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছি। কিন্তু নেননি। পরদিন আর যাইনি।
এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে, সোমবার (০৩ মে) ভোলা সদর উপজেলা থেকে চরফ্যাশনে যাচ্ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। সদর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় ইউএনওর গাড়ির সঙ্গে সদর উপজেলার বাসিন্দা আরিফের নছিমনের ধাক্কা লাগে। এতে দুটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনার পর নছিমনচালককে আটক করেন ইউএনও। তাকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় চরফ্যাশন উপজেলায়। প্রথমে তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। কিন্তু তাতে ক্ষতিপূরণ উসুল হবে না বলে থানা থেকে এনে ইউএনও কার্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়।
https://wnews360.com/archives/39945