লন্ডনে গেলে পুত্রবধূ জোবাইদার তত্ত্বাবধানে হবে খালেদার চিকিৎসা
বিশেষ রিপোর্টঃ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। এ অবস্থায় তার সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত স্বজনদের যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সূত্র বলছে, খালেদা জয়ার পরিবার চাচ্ছে তাকে যেকোনভাবে বিদেশে নিয়ে যেতে, যাতে পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান সরাসরি তার চিকিৎসার দেখভাল করতে পারেন।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও তাদের মেয়ে জাইমা রহমান। আর ২০১৭ সাল থেকে লন্ডনে আছেন ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান।
দলটির শীর্ষ নেতারা জানান, ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে ছেলে, দুই পুত্রবধূ ও নাতনিদের সঙ্গে অনলাইনে ভিডিও কলের মাধ্যমে নিয়মিত কথাবার্তা ও গল্প-আড্ডা হতো খালেদা জিয়ার। গত ১১ এপ্রিল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের একজন ছিলেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। তখনও নিয়মিত খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগ হতো জোবাইদাসহ স্বজনদের।
কিন্তু গত ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার সঙ্গে স্বজনদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এখন বিএনপির দলীয় ডাক্তার এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের মিড়িয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, আগে ম্যাডাম বাসায় ছিলেন, এখন হাসপাতালে। স্বজনরা কীভাবে তার শারীরিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন আমি বলতে পারব না।
খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার বলেন, বাসায় থাকতে ডা. জোবাইদা রহমানের তত্ত্বাবধানে ম্যাডামের চিকিৎসা চলছিল। এখন হয়তো ডাক্তারদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় জড়িত এক চিকিৎসক বলেন, ম্যাডাম বাসায় থাকতে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন ছিলেন ডা. জোবাইদা রহমান। তখন তিনি নিয়মিত খোঁজ রাখতেন। মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকে অনলাইনে যুক্ত থাকতেন। আর ম্যাডাম হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে যে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন হয়েছে সেখানে আমাদের তিনজন (ডা. এফ এম সিদ্দিকী, ডা. জাহিদ হোসেন ও ডা. আল মামুন) ডাক্তার আছেন। এখন আমরা নিয়মিত ডা. জোবাইদা রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনিও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার আপডেট নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মায়ের শারীরিক অবস্থা নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেনের সঙ্গে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে চাইলেও এই মুহূর্তে পরিবারের কেউ দেশে আসতে পারছেন না। তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা চাইছেন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে। সেটা লন্ডন বা সিঙ্গাপুর যেখানেই হোক। তবে তারা লন্ডনকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। কারণ, সেখানে নেওয়া হলে পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান নিজেই চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে থাকতে পারবেন।
মঙ্গলবার (৪ মে) রাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার চেস্ট দেখছেন। কিছু ট্রিটম্যান্ট এডজাস্টমেন্ট করেছেন। সেই অনুযায়ী তার চিকিৎসা চলছে।’
গত সোমবার (৩ মে) সকালের দিকে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে স্থানান্তর করেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। সেদিন তার বাসভবন ফিরোজায় আরও ৮ জন ব্যক্তিগত স্টাফও করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় খালেদা জিয়ার করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
পরে ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে।
৭৫ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। প্রায় আড়াই বছরের মতো কারাগারে ছিলেন তিনি। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয়। দুই দফায় এ মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।