রাজধানীসহ জেলা শহরে আজ থেকে চলবে গণপরিবহন
বিশেষ রিপোর্টঃ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। তবে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সরকার আজ বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীসহ জেলা শহরে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে করোনার সংক্রমণ রোধে চলাচলে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের ২২ দিন পর চালু হচ্ছে গণপরিবহন।
আর গণপরিবহন চালুর খবরে স্বস্তি ফিরেছে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে। রোজগারের মাধ্যম বন্ধ থাকায় লকডাউনে মানবেতর জীবন যাপন করেতে বাধ্য হন তারা।
অপর দিকে, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পরিবহনের মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে সেটা শহরের ভেতরে। দূরপাল্লার গণপরিবহনের সঙ্গে লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরে গণপরিবহন চলাচলে সরকারের নির্দেশনা মেনে সব রুট মালিক সমিতি-পরিবহন কোম্পানির নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে :মাস্ক ছাড়া গাড়িতে যাত্রী ওঠানো যাবে না এবং স্টাফদের গাড়ির মালিক মাস্ক সরবরাহ করবেন। গাড়িতে সিটের অর্ধেক যাত্রী বহন করতে হবে (অর্থাত্ দুই সিটে এক জন যাত্রী বসবে)। লকডাউনে মালিক-শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এক্ষেত্রে রুট মালিক সমিতি-পরিবহন কোম্পানির জিপির নামে কোনো ধরনের অর্থ গাড়ি থেকে আদায় করতে পারবে না। শীর্ষ এ পরিবহন নেতা বলেন, এই বিষয়গুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট রুট মালিক সমিতি-পরিবহন কোম্পানির নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বস্তিতে পরিবহন শ্রমিকরা
প্রজাপতি পরিবহনের বাসচালক আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। পুরো লকডাউনে আমরা কারো কাছ থেকে কোনো প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। কোম্পানিও কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করেনি। ধারদেনা করে চলেছি। এখন বাস চালিয়ে ধারদেনা শোধ করতে হবে।
একই কোম্পানির বাসচালক সবুজ জানিয়েছেন, লকডাউনে ধারদেনা করে চলছি। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আমার যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতি তো আর পূরণ হওয়ার নয়। তবে বাস চালু হওয়ায় আমি খুশি।
টেম্পোচালক নূর ইসলাম বলেন, লকডাউনে লুকিয়ে লুকিয়ে সকালে আর বিকালে টেম্পো চালিয়েছি। এতে যা আয় হয়েছে, তাতে ঠিকমতো চলতে পারিনি। ধারদেনা করতে হয়েছে। পরিবহন চালু হওয়ায় ঈদের আগ পর্যন্ত কোনোমতে চলতে পারব। কিন্তু যদি আবারও গণপরিবহন চলাচল বন্ধের নির্দেশনা আসত, তখন আত্মহত্যা করা বা চুরি করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। তার অভিযোগ—লকডাউন বড় লোকের জন্য, গরিবের জন্য নয়। বড় লোক চাইলেই বসে বসে মাসের পর মাস খেতে পারে। আমরা কাজ করে খাই। পরিবহন চালু হওয়ায় এখন কোনোমতে পেটে-ভাতে খেয়ে বাঁচতে পারব।’
পরিস্থান পরিবহনের বাসচালক আবুল কামাল বলেন, ‘দেশের সব প্রতিষ্ঠানে অভিভাবক আছে। কিন্তু পরিবহন সেক্টরে মা-বাপ নাই। পথে বাস নিয়ে নামতেই আবার চাঁদা নিতে পরিবহনের অনেক নেতাকর্মীরা আসবেন। চাঁদা না দিলে রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারব না, এর সঙ্গে মাইরও খেতে হবে। লকডাউনের দিনগুলোতে আমরা বসে ছিলাম। আমাদের খবর কেউ নেয়নি। ’