৫০০ বেডে উন্নীত হচ্ছে পুলিশ হাসপাতাল
বিশেষ রিপোর্টঃ করোনাকালে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল (সিপিএইচ) ভরসা রাখার মতো চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিণত হয়ে উঠেছে। শুধু পুলিশ সদস্যরা নয়, মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও করোনা আক্রান্ত হলে ছুটছেন পুলিশ হাসপাতালে। কিন্তু সম্পদ ও সামর্থ্যরে সীমাবদ্ধতার কারণে বাড়ানো যাচ্ছে না সেবার পরিধি।
এ অবস্থায় হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাড়ছে আইসিইউ এবং এইচডিইউর সংখ্যাও। হাসপাতালের কলেবর বৃদ্ধিতে পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ ব্যক্তিগতভাবে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। বর্তমানে হাসপাতালটি আড়াইশ’ শয্যার। এটিকে ৫০০তে উন্নীত করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে বলা যায় স্বাস্থ্য খাত এক রকম বিপর্যস্ত। দেশের সব বড় হাসপাতাল করোনা রোগীতে ঠাসা। অনেকেই মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। আইসিইউ সিট খালি পাওয়া সোনার হরিণের মতো। এমন সংকটকালে পুলিশ হাসপাতাল অনেকের কাছে এক স্বস্তির নাম। বাহিনীর সদস্যরা করোনা আক্রান্ত হলে পাচ্ছেন উন্নত সেবার নিশ্চয়তা। অফিসার থেকে কনস্টেবল সবাইকে একই ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। যথারীতি সেবা পাচ্ছেন পুলিশ পরিবারের সদস্যরাও। সিট খালি থাকা সাপেক্ষে পুলিশের বাইরেও সরকারি চাকরিতে কর্মরতরাও সেবা নিতে পারছেন। করোনা থেকে সেরে ওঠা পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে সংগৃহীত প্লাজমাও প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
পুলিশ হাসপাতালের এডিশনাল এসপি সাইফুল ইসলাম শান্তু শনিবার বলেন, বর্তমানে পুলিশ হাসপাতালে তিন শতাধিক রোগী চিকিৎসাধীন। ১৫টি আইসিইউ এবং ৩৫টি এইচডিইউর প্রায় সবগুলোতে রোগী ভর্তি। এদের বেশির ভাগই পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ সদস্য। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের আক্রান্তের হার এবার তুলনামূলক কম। প্রথম দফায় পুলিশে গণহারে সংক্রমণ দেখা দেয়। এ সময় মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি ছিল।
পুলিশ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় যেক’জন চিকিৎসক সম্মুখ সারিতে রয়েছেন তাদের অন্যতম হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদ মোহাম্মদ ইকবাল।
শনিবার তিনি বলেন, এবার পুলিশে সংক্রমণ কম হওয়ার অন্যতম কারণ বাহিনীতে অনেকেই টিকা নিয়েছেন। আবার টিকা নেওয়ার পরও যেসব পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের তেমন কোনো জটিলতা দেখা যাচ্ছে না। প্রায় ১৬-১৭ জন পুলিশ সদস্য দ্বিতীয় দফা সংক্রমিত হন। তাদের মধ্যে কেউই গুরুতর অসুস্থ হননি। তারা মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসেন। ২-১ জনের মধ্যে সংক্রমণের তীব্রতা ছিল। তবে কারও মধ্যে ভয়াবহ সংক্রমণ বা আইসিইউনির্ভরতা দেখা যায়নি।
পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক ডিআইজি হাসানুল হায়দার শনিবার বলেন, পুলিশ বাহিনীর দুই লাখের বেশি সদস্যের মধ্যে বড় একটি অংশ ইতোমধ্যে টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে ফেলেছেন। প্রথম ডোজ নেওয়ার এক মাস পর যাদের সংক্রমণ ধরা পড়ছে তাদের উপসর্গ মৃদু। তাছাড়া একবার করোনা আক্রান্ত হলে এন্টিবডি ছয় মাস বা আট মাস থাকার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসপাতালের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এটি অল্প দিনের মধ্যে ৫০০ শয্যায় উন্নীত হবে। তখন আরও বিস্তৃত পরিসরে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। নিজস্ব চিকিসৎক এবং নার্সের সংকট থাকায় বর্তমানে চিকিৎসা কার্যক্রমের বড় অংশ চলছে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে। তবে শিগগিরই এ সংকটও কেটে যাবে।
সরেজমিন পুলিশ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের মানসিকভাবে উজ্জীবিত রাখতে নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। আক্রান্তরা চিকিৎসক এবং নার্সদের সার্বক্ষণিক পাশে পাচ্ছেন।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানা জানান, চলতি বছর ৯ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন করে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ৫৪ জন। এর মধ্যে পুলিশের ৩৮ এবং র্যাবের ১৬। এদের প্রায় সবারই সংক্রমণ মৃদু থেকে মাঝারি। তবে অবসরপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আইসিইউতে রয়েছেন। এছাড়া হাসপাতালের ৪ জন চিকিৎসক বর্তমানে করোনা পজিটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন। প্রথম দফা সংক্রমণে পুলিশে সংক্রমিত রোগী ছিলেন ১৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ৮৩ জন মারা যান।
চিকিৎসকরা বলছেন, পুলিশ হাসপাতাল করোনা রোগীদের উপসর্গের ভিত্তিতে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সংক্রমিত রোগীদের ফুসফুস যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আগেই প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা চলছে। এ ছাড়া একটি সমন্বিত চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। বেশ কয়েকটি ওষুধ কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে। একই সঙ্গে হ্রাস পাচ্ছে আইসিইউনির্ভরতা।
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা হলে কী কী করতে হবে তা এখন প্রায় সবারই জানা। বেশির ভাগ রোগী ঘরে বসে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে করোনা আক্রান্ত হলে বেশি করে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার এবং প্রচুর পরিমাণে তরল পানীয় পান করার কোনো বিকল্প নেই। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।