আজ পিলখানার সেই বিভীষিকাময় দিন

পিলখানার সেই বিভীষিকাময় দিন আজ
চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আপিল

বিশেষ প্রতিবেদকঃ আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি ইতিহাসের সেই কালো দিন। ১২ বছর আগে এই দিনে পিলখানায় সাবেক বিডিআর ও বর্তমান বিজিবি সদর দপ্তরে ঘটে এক মর্মান্তিক নৃশংস ঘটনা। সেদিন সকাল ৯টা ২৭ মিনিট। দরবার হলে চলমান বার্ষিক দরবারে একদল বিদ্রোহী বিডিআর সৈনিক ঢুকে পড়ে। সিপাহী মঈন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে।

সূচনা ঘটে ইতিহাসের এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞের। বিডিআরের বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। পুরো পিলখানায় এক বীভত্স ঘটনার সৃষ্টি হয়। এ সময় তারা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

এ ঘটনায় দায়ের করা হয় দুটি মামলা। সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা হয় হত্যা মামলা। অপরটি বিস্ফোরক আইনে। দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত ১৫২ বিডিআর জওয়ানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৬১ জনকে। সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পান আরো ২৫৬ জন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা। ২০১৭ সালে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জওয়ানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যাবজ্জীবন দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় আরো ২০০ জনকে। খালাস পান ৪৫ জন।

পিলখানা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামি। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আপিল দাখিল করা হয়।

আইনজীবীরা বলছেন, নৃশংস এই হত্যা মামলার হাইকোর্টের ৩০ হাজার পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি তুলতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। এখন আনুষঙ্গিক কাগজাদি (নিম্ন আদালতের রায়, সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা, আত্মপক্ষ সমর্থন) দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ আপিল করলে তার পৃষ্ঠাসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৬৫ হাজারে। ফলে সব মিলিয়ে এক আপিল দায়েরে সম্ভাব্য খরচ পড়বে ১০ লাখ টাকার ওপরে।

হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে খালাস ও সাজা কম পাওয়া আসামিদের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে লিভ টু আপিল দায়ের করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ধরনের আপিলের সংখ্যা ২০টি। অন্যদিকে, মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া প্রায় ৩০০ আসামি খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আপিল করেছেন। এ ধরনের আপিলের সংখ্যা ৫১টি। রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের এসব আপিল এখন চূড়ান্ড নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

পরে এই আপিল দায়েরের বিষয়টি ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় মেমো অব আপিলের মাধ্যমে আপিলের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করে আসামি পক্ষ। প্রধান বিচারপতি আসামি পক্ষের আবেদন মঞ্জুর করায় অন্য আসামিদেরকে পূর্ণাঙ্গ পেপারবুক ছাড়াই আপিল দায়ের করার সুযোগ হয়েছে। ফলে তাদের কাউকে ১০ লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা ব্যয় করে আপিল দায়ের করতে হবে না। তারা বড় অংকের অর্থ খরচের হাত থেকে বেঁচে গেছেন বলে জানিয়েছেন আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী এম আমিনুল ইসলাম।

বিস্ফোরক আইনের মামলা

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বিস্ফোরক আইনের মামলাটি। এই মামলায় আসামি রয়েছেন ৮৩৪ জন।

শোকাবহ দিবসের কর্মসূচি

আজ বৃহস্পতিবার শাহাদাতবার্ষিকী পালন করবে বিজিবি। দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে, পিলখানাসহ বিজিবির সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন, বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকাল ৯টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ৩ বাহিনীর প্রধান (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একসঙ্গে) শহিদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে বিজিবির সকল স্থাপনায় বিজিবি পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবির সকল সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবে। শুক্রবার বাদ জুমা পিলখানাস্থ বিজিবি কেন্দ্রীয় মসজিদ, ঢাকা সেক্টর মসজিদ এবং বর্ডার গার্ড হাসপাতাল মসজিদে শহিদ ব্যক্তিবর্গের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top