‘দুদকের পিক এন্ড চুজ নীতি গ্রাহ্য করব না’
হাইকোর্ট বলেছে, দুদকের কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হচ্ছে যে উনাদের ইচ্ছে হলো কাউকে আসামি করল, ইচ্ছে হলো কাউকে আসামি করল না। কমিশনের এই পিক এন্ড চুজ নীতি আমরা অ্যালাউ (গ্রাহ্য) করব না।
খেয়াঘাটের ইজারার টাকা আত্মসাতের মামলায় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে অধস্তনদের আসামি করা নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার ( ৯ ফেব্রুয়ারি) এই মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে মামলা দায়েরকারী দুদকের খুলনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নাজমুল হাসানসহ চার জনকে তলব করেছে হাইকোর্ট।
উপপরিচালক ছাড়াও তলব করা হয়েছে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সচিবকে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে আদালতে হাজির হয়ে ঊর্ধ্বতনদের বাদ দিয়ে অধস্তনদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
গত ১০ বছরে সাতক্ষীরা জেলার ছয়টি খেয়াঘাট ইজারার ১৩ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রধান সহকারি খলিলুর রহমান ও নিন্মমান সহকারি এসএম নাজমুল হোসেন সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
গত ২৭ জানুয়ারি দুদকের খুলনা কার্যালয়ে দায়েরকৃত এই মামলায় আশাশুনি উপাজেলার শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আরো দশজনকে আসামি করা হয়।
এই মামলায় জেলা পরিষদের খলিল ও নাজমুল হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন চান। তাদের পক্ষে আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ শুনানিতে বলেন, জেলা পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে অধস্তন দুজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে। ঊর্ধ্বতনদের দায় অধস্তনদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ পর্যায়ে দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খানের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, দুদক তো পিয়ন/চাপরাশিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ব্যস্ত। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এই মামলায় কেন আসামি করা হয়নি। দুদক কৌসুলি বলেন, এজাহার দায়ের হয়েছে। তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদেরকেও আসামি করা হবে। দুদক কৌসুলিকে আদালত বলেন, গত দশ বছর ধরে যদি অর্থ আত্মসাৎ হয়ে থাকে তাহলে এই সময়ে কি কোন অডিট হয়নি? যদি অডিট না হয় তাহলে এর দায় কার। দুদক কৌসুলি বলেন, মাই লর্ড এই সময়ে কোন অডিট হয়নি। আদালত বলেন, আপনাদের (দুদক) কর্মকাণ্ডে আমরা অনেক সময়ই খুশি হতে পারছি না।
জেলা পরিষদের ১৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ হলো, তাহলে ঊর্ধ্বতনরা কি করেছে? এদেরকে অন্ধকারে রেখে কি অর্থ আত্মসাৎ করা সম্ভব হয়েছে? একজন নিন্ম মান সহকারিকে তার বস (ঊর্ধ্বতন) যেভাবে বলবে সেভাবেই সে চলবে। ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার বাইরে উনার যাওয়ার সুযোগ কোথায়? এ পর্যায়ে দুদক কৌসুলি বলেন, আসামি খলিলুর রহমান তো ঊর্ধ্বতনদের একজন। আর বাকি ঊর্ধ্বতনদের কেন আসামি করা হয়নি সেটা জানার জন্য মামলার বাদিকে তলব করার সুযোগ রয়েছে আপনাদের।
আদালত বলেন, ইচ্ছে হল কাউকে আসামি করলাম, আবার কাউকে করলাম না এভাবে চলতে পারে না। দুদক কৌসুলি বলেন, আমরা আদালতের আদেশ প্রতিপালন করব। কিন্তু যারা আগাম জামিনের জন্য এসেছেন তাদেরকে কোর্টের হেফাজতে রাখা হোক।
আইনজীবী ওজিউল্লাহ বলেন, ঊর্ধ্বতনদের বাইরে রাখবেন, আর অধস্তনদের ভেতরে (কারাগারে) রাখবেন এটা ঠিক নয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট তলবের আদেশ দেন। এছাড়া আগাম জামিন আবেদনকারী দু’জনকে ঐ দিন কোর্টে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরে দুদক কৌসুলি বলেন, দুদকের পিক এন্ড চুজ নীতির প্রয়োগ হয়েছে কিনা সেটা পরীক্ষা করতেই মামলার বাদিকে নথিসহ তলব করেছে হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে জেলা পরিষদের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাকেও ডাকা হয়েছে।