বোরহানউদ্দিনে কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে ইট ভাটার মালিক; দেখার যেন কেউ নেই!

বোরহানউদ্দিনে কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে ইট ভাটার মালিক; দেখার যেন কেউ নেই!

সাগর চৌধুরীঃ বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া, প্রাকৃতিক পরিবেশ সবকিছুই কৃষিনির্ভর। তাই প্রাচীনকাল থেকে এ দেশ কৃষিপ্রধান। এ দেশের মাটি, পানি, বায়ু সবই কৃষির অনুকূলে। কৃষি আমাদের প্রধান পেশা, দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষির সাফল্যে কমেছে খাদ্য আমদানির প্রয়োজনীয়তা। কৃষিজাত পণ্য রফতানিও করা হচ্ছে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশের দ্বীপ জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ফসলি কৃষি জমি ধ্বংস এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়।

ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বড়মানিকা ইউনিয়নের তিন নাম্বার ওয়ার্ডের আলিয়া মাদ্রাসার ঠিক অপজিট থেকে কৃষিজমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটার মালিক বাচ্চু।

কৃষি জমির মাটি কেটে ইট ভাটায় নেওয়া দন্ডনীয় অপরাধ। সরকারী পরিপত্র অনুযায়ী জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু চোরে শোনে না ধর্মের কাহিনি। দিনের পর দিন এভাবেই কেটে নেওয়া হচ্ছে মাটি। ফলে দেশের কৃষি জমি বিনষ্ট হচ্ছে। দেশের কৃষি জমির বা চাষ যোগ্য জমির পরিমান কমছে।

দিনে ও রাতে মাটি কাটার ফলে স্থানীয় লোকজনের দারুন অসুবিধা হচ্ছে। ব্যাঘাত ঘটছে প্রতিনিয়ত। 

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩-তে স্পষ্টভাবে বলা আছে, ইটভাটায় ফসলি জমির উপরের মাটি ব্যবহার করলে তার শাস্তি দু’বছর কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা। ওই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে শাস্তি ২-১০ বছরের জেল এবং ২-১০ লাখ টাকা জরিমানা।

রানীগঞ্জ বাজারে মধ্যরাতের পাহারাদার নুরু বলেন, এইরাতের বেলাও মাটির ট্রাক ছুটছে। আশপাশের যে পরিমানে ধুলা উরায় আর যা শব্দ করে মানুষ কেমনে ঘুমায় জানি না। আমরা গরিব মানুষ কার কাছে বলব? কে এর প্রতিকার করবে?

স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসার পাশের বাড়ির কালাম বলেন,  মাটির গাড়ির শব্দে ঘুমাতে পারি না। তাই এই শীতে বউ পোলাপান নিয়া মধ্য রাতেও জেগে আছি। কৃষি জমির মাটি কেটে নেওয়া অপরাধ শুনেছি কিন্তু ইটভাটার মালিকের টাকার গরমের কাছে আইন প্রশাসন ঘুমায়।

রানীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী বলছে, ক্ষমতার জোড়ে আমরা পারব না ভাই। এসব প্রশাসন দেখার কথা। আল্লাহ এমন প্রশাসন কপালে রাখছে কথাও বলতে পারছি না ভয়ে। কখন আবার ধরে নিয়ে জেল দেয়।

দিনের পর দিন আর রাতের পর রাত কৃষি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় যেমনি লঙ্ঘন হচ্ছে সরকারী আইন কানুন তেমনি কৃষি জমির মাটি কাটার কারণে ব্যাহত হচ্ছে সরকারের কৃষির সাফল্য। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের কৃষি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশ।

সরকারি কোন প্রতিষ্ঠান এর দায় এড়াতে পারে না বলছে স্থানীয় সচেতন মানুষ।

এই রিপোর্ট করার স্বার্থে জমির মালিক ও ইট ভাটার মালিকের বক্তব্য জানতে চাইলে হামলা, মামলা এবং শারিরীক নির্যাতনের ভয় দেখানো হচ্ছে এবং স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন রিপোর্ট না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। ইটভাটার চুল্লীতে পুরিয়ে মারারও ধামকি দিচ্ছে।

কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া প্রসঙ্গে বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুঠোফোনে বলেন, আমরা তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা নেব।


কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার দৃশ্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top