বহুল বিতর্কিত ভাঙ্গার সেই ইউএনও’কে বদলি, এলাকায় স্বস্তি
জেলা প্রতিনিধিঃ ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার বহুল বিতর্কিত ও সমালোচিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুর রহমান খানের বদলির আদেশ হয়েছে।
রবিবার উপ-সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ পায়।
ইউএনও’র বদলির সংবাদ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে তার দ্বারা ভুক্তভোগীরাসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। একইসাথে সকলের কণ্ঠে একই উচ্চারিত হয় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার।
গত বছরের ১০ মার্চ ইউএনও রাকিবুর রহমান খান ভাঙ্গায় যোগদান করেন। যোগদানের পর হতেই বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে একাধিকবার সমালোচনার ঝড় ওঠে তাকে নিয়ে। তাকে নিয়ে সকল ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া অসংখ্য সংবাদের শিরোনাম করে। তারপরেও বিশেষ খুঁটির জোরে এতদিন তার পদে বহাল ছিলেন।
তিনি নিজ বাসার ভেতরে শটগানের একাধিক গুলি ফুটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে মিডিয়ার শিরোনাম হন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর মুজিববর্ষের উপহার দরিদ্রদের আবাসন প্রকল্পর ২৫০টি ঘর নিজ অফিসের কর্মচারীদের দ্বারা করিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেও সমালোচনায় পড়েন তিনি।
এছাড়াও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে তাকে অহেতুক হয়রানি করেন তিনি। গত দুই মাস আগে আড়িয়াল খাঁ নদীর খনন কাজের কোটি কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করে তা নিজেই বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করায় ব্যাপক সমালোচনা হয় তাকে নিয়ে।
তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে মামলাসহ হয়রানির ভয় দেখানো ছিল প্রধান অস্ত্র। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের তার রুমে প্রবেশাধিকার ছিল কড়াকড়ি অবস্থা। গত বছরের ডিসেম্বরে ভাঙ্গা বাজারের ৬৫ শতাংশ সরকারি জায়গা বরাদ্দর নামে কথিত দোকানদারদের কাছ কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেন তিনি।
এ নিয়ে এলাকাবাসী ও ভাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধসহ মানববন্ধন করেন। সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধনের কারণে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার দোকান-ঘর বরাদ্দ বন্ধ করে উক্ত জায়গায় কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। এ বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করে।
এছাড়াও তার সাথে অফিসের কোন কর্মকর্তার সাথে ভালো ব্যবহার না থাকায় সমন্বয় সভায় অনেকেই উপস্থিত হতো না।
ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ মজিবুর রহমান চৌধুরীর সাথেও তার ছিল বৈরী আচরণ। এই ইউএনও’র জন্য সাংসদকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।
ইউএনও’র বদলির সংবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুর রহমান বলেন, এই ইউএনও ভাঙ্গায় যোগদানের পর হতেই ভাঙ্গাবাসীকে জিম্মি করে অর্থ বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছে। তার পাপের ঘড়া পূর্ণ হওয়ায় জনতার আন্দোলনের মুখে তার পতন হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স সেখানে এই ইউএনও অনেক বেশি সাহস দেখিয়েছে।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, তার বদলির আদেশের খবরে ভাঙ্গায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। এখন আরেকটি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল-আমিন মিয়ার বদলি হলে ভাঙ্গাবাসী মুক্ত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন থাকবে এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনার দ্বারা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের দাবি।