ফেনীতে ডিসি অফিসে দরপত্র দিতে গিয়ে ঠিকাদার অপহৃত, গ্রেপ্তার ৪
জোলা প্রতিনিধিঃ ফেনীর জেলা প্রশাসন অফিসে দরপত্র জমা দিতে আসা এক ঠিকাদারকে অপহরণের অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী মডেল থানার ওসি আলমগীর হোসেন। এর আগের রাতে মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়ন জাহানপুরের পাটোয়ারী বাড়ির খোরশেদ আলমের ছেলে শফিকুল ইসলাম ওরফে সম্রাট (২৪), মোয়াজ্জেম বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে মো. সালাউদ্দিন (২০), সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের জোয়ারকাছাড়ের সাহাব উদ্দিন মোল্লা বাড়ির কবির আহাম্মদের ছেলে কামরুল হাসান ওরফে সাব্বির (২৩) এবং ফেনী শহরের পূর্ব উকিলপাড়ার শাহাদাত হোসেনের ছেলে রাসেল হোসেন (২৭)।
ফেনীর ডিসি মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, “রোববার জেলার চৌকিদার-দফাদারদের পোশাক সরবরাহের দরপত্র জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। তবে, একজন ঠিকাদারের পক্ষে মোবাইল ফোনে অভিযোগ করেন-তাকে দরপত্র জমা দিতে দেওয়া হয়নি।”
থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওমর হায়দার জানান, অপহরণের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগে রোববার রাতে ঠিকাদার খলিলুর রহমান (৪৭) বাদী হয়ে ফেনী সদরের শর্শদী ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়াসহ আট জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
অপহৃত ঠিকাদার খলিলুর রহমান টাঙ্গাইলের ধরবাড়ী উপজেলার ইসপিরাজপুরের বাসিন্দা। তিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন।
খলিলুর রহমান অভিযোগ করেন, গ্রাম পুলিশের পোশাক সরবরাহের জন্য ৫৪ লাখ টাকা মূল্যের উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেওয়ার জন্য ‘মাটি আর মানুষ’ নামীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দরপত্র দাখিল করতে রোববার সকালে তিনি ডিসি অফিসে যান। এ সময় কয়েকজন অপরিচিত যুবক কৌশলে জোরপূর্বক সেখান থেকে তাকে অপহরণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উল্টোদিকে কিং অব ফেনী কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে যায়।
সেখানে তারা তার উপর নির্যাতন চালায়, মোবাইল কেড়ে নেয় ও দরপত্র দাখিল না করতে হুমকি দেয়। পরে শর্শদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়া তার কাছ থেকে দরপত্রের কাগজপত্র কেড়ে নেন।
“খবর পেয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সন্ধ্যায় কমিউনিটি সেন্টার থেকে আমাকে উদ্ধার করে। এ সময় চার জনকে আটক করে পুলিশ।”
তিনি আরও জানান, মুক্ত হয়ে রাতে থানায় মামলা করেন। মামলায় শর্শদী ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়া, সফিকুল ইসলাম সম্রাট, মো. সালা উদ্দিন, মো. রাসেল হোসেন, কামরুল হাসান সাব্বিরসহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়া বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনভাবেই সম্পৃক্ত নই। শর্শদীর কোনো যুবক এতে জড়িত থাকতে পারে। তাই আমাকে এতে জড়ানো হয়েছে।”
তবে চেয়ারম্যান জানে আলম অভিযোগ অস্বীকার করলেও ঘটনাস্থালে যে তিনি উপস্থিত ছিলেন তা স্থানীয়রা স্বীকার করেছেন।
ফেনী পৌর মৎস আড়তের ‘আল্লারদান মৎস আড়ৎ’র ম্যানেজার রৌশন শিবলী রাজু বলেন, সকালে চেয়ারম্যান জানে আলম তিনজন লোক নিয়ে পৌর মৎস আড়তে আসেন।
“আমাদের দোকানে এসে বলেন, একটু কাজ আছে, বসে কথা বলবেন। দোকানে তারা প্রায় দেড় ঘন্টা পর্যন্ত টাকা-পয়সা ও কাগজপত্র বিষয়ক আলোচনা করেন। অনেকক্ষণ আলোচনার পর তারা বের হয়ে যান।”
তিনি জানান, দুপুরের দিকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা এসে তাদের দোকানের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম ও সিএনজি চালক বাবুলকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর বিকালে ডিবি পুলিশ ওই দোকানের মালিক মো. আবদুল হালিমকে আটক করে। তবে সন্ধ্যায় তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।