মাঠ প্রশাসন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, সচিবের হুঁশিয়ারি
বিশেষ প্রতিবেদকঃ মাঠ প্রশাসনের অনিয়ম, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শেখ ইউসুফ হারুন।
তিনি এসব কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা দক্ষতা, যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না, তাদের চাকরিতে থাকার প্রয়োজন নেই।
ঢাকার সেগুনবাগিচায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে ২০২০ সালের সামগ্রিক কর্মদক্ষতা বিবেচনায় জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা স্বীকৃতি প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন এবং সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। দুর্নীতি, অনিয়ম শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সরকারের দায়িত্ব। সে বিবেচনায় কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একজন নির্বাহী অফিসার গণমাধ্যমে বক্তৃতা দিতে আসবেন আর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সক্ষমতা নেই তার—এমন কর্মকর্তার কী প্রয়োজন?
প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা অনেক বেশি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন, আবার অনেকে অপরাধ থেকে নিজেদের বাঁচাতে নানাভাবে তদ্বির করছেন। এ অভিযোগ খোদ জনপ্রশাসন সচিবের। তিনি বলছেন, অধিকাংশ কর্মকর্তাই ঢাকায় থাকার জন্য তদ্বির করেন, যা পীড়াদায়ক।
তিনি জানান, ‘আমাদের কর্মকর্তাদের অপরাধপ্রবণতা এখন এত বেশি, প্রতিদিন আমাকে কয়েকটি বিভাগীয় মোকদ্দমা শুনতে হয় এবং মোকদ্দমায় অনেকের শাস্তি হচ্ছে। আমি হঠাত্ দেখলাম যে, পেকুয়ার ইউএনও তার ঐখানে একটা ঘটনা ঘটল। তার সঙ্গে ইউএনওর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই, তিনি একটি টেলিভিশনে বক্তৃতা দিলেন। একটা প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে পারলেন না। আমি ঐ অনুষ্ঠান দেখে লজ্জিত, আমার একজন ইউএনও, টেলিভিশনে গেল কিন্তু একটি প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেন না।’
বদলি হতে বা বদলি ঠেকাতে তদ্বির করা হয়, যা খুবই বিব্রতকর জানিয়ে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘স্যার আমার ঢাকায় পোস্টিং দরকার। জানতে চাইলাম, কেন? বললো, আমি তো ঐ ব্যাচের সভাপতি। আমার ব্যাচের অনেক কাজকর্ম করতে হয়। এজন্য তার ঢাকা আসা প্রয়োজন।’ আরেক জন কর্মকর্তা ফেসবুকে পোস্ট দেন, ‘অমুক ব্যাচের কর্মকর্তা তো এতদিন এসিল্যান্ড ছিলেন, আমরা কেন এক বছর পর এসিল্যান্ড থেকে প্রত্যাহার হব।’ কোনো কাজ করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি বা পোস্ট দেওয়া নিয়েও সহকর্মীদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন জনপ্রশাসন সচিব।
শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘একটি ভূমি অফিস পরিদর্শন করলাম, এটি ফেসবুকে দেওয়ার কী হলো! এমন একটি ভাব ইউনিয়ন ভূমি অফিস কেবল তিনি পরিদর্শন করেছেন। তার আগে কোনো কর্মকর্তা জীবনে কোনো দিন এটা পরিদর্শন করেননি। ঐ কর্মকর্তা ভালো গান গাইতে পারেন। তিনি গান গেয়ে ফেসবুকে দিলেন। কেন?’ অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও বার্তা পাঠান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। পরে ২০২০ সালের সামগ্রিক কর্মদক্ষতায় বিবেচনায় জেলা পর্যায়ে ঢাকা বিভাগীয় ১৪ এসিল্যান্ড ও ১৩ জন ইউএনওকে শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।