দুটি জায়গায় একটু অনুসন্ধান করেন; সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন; আরেকটি হলো নিম্ন আদালত – হাইকোর্ট

PicsArt_08-12-11.07.42.jpg

দুটি জায়গায় একটু অনুসন্ধান করেন; সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন; আরেকটি হলো নিম্ন আদালত – হাইকোর্ট

দুর্নীতি তো হচ্ছেই, ঘরে বসে না থেকে দুদককে ব্যবস্থা নিতে হবে

ডিএজি রূপার রিটের শুনানি ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতুবি করেছে আদালত

আদালত প্রতিবেদকঃ হাইকোর্ট বলেছে, দুর্নীতি তো হচ্ছেই। এটা তো লুকানো-ছাপানোর কিছু নাই। যেখানেই দুর্নীতির গন্ধ পাবে সেখানেই পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রয়েছে। তাদের ঘরে বসে থাকলে চলবে না। দুর্নীতির অনুসন্ধানে এ ধরনের নোটিশ দেওয়ার এখতিয়ার সংস্থাটির রয়েছে।

দুদকের তলব নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এক আইন কর্মকর্তার করা রিটের শুনানিতে বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই মন্তব্য করেন।

আদালত বলেন, দুর্নীতি এখন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সবখানেই দুর্নীতি আছে। দুদকের অনুসন্ধান নোটিশে যদি আমরা হস্তক্ষেপ করি তাহলে একটা বাজে নজির তৈরি হবে। কারণ আমরা সবাই চাই দুর্নীতিমুক্ত দেশ হোক। এমনকি আপনারাও চান। আমি আমার কয়েকটা রায়ে বলেছি, দুদক ঘরে বসে থাকলে দুর্নীতি দমন করতে পারবে না। তাদেরকে গোয়েন্দাগিরি করতে হবে, কোথায় কি হচ্ছে। ব্যক্তির অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে।

গত ২৮ অক্টোবর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসি রুপাকে তলবের নোটিশ দেয় দুদক। এতে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণ করে জিকে শামীমসহ বিভিন্ন আসামির সাথে আঁতাত করে জামিন করিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া সহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূতসম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখিত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে ৪ নভেম্বর দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হলো। পরে এই নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।

রিটের শুনানিতে রুপার আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, যেভাবে তলবের নোটিশ দেয়া হয়েছে তাতে প্রাথমিক ধারণা জন্মায় যে দুর্নীতির সঙ্গে আমি জড়িত। অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবিধানিক পদ। প্রধান বিচারপতি অধীনে সুপ্রিম কোর্টসহ সব কোর্ট। সেই ক্ষেত্রে দুদককে কোন কার্যক্রম করতে হলে তাদের অনুমতি নিয়ে করলে ভালো হয়। আদালত বলেন, দুদকের নোটিস তো কোন কোর্টের বিরুদ্ধে নয়, অভিযোগ একজন আইন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নোটিশের জবাব দেওয়ার পর অনুসন্ধান করবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য কিনা।

আইনজীবী বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করার সঙ্গে পাবলিক পারসেপশন জড়িত। আদালত বলেন, দুর্নীতিকে বন্ধ করাই তো আমাদের দরকার। জনগণ যদি ধরে নেয় কোর্টের লোক দেখে কোর্ট এখন কোনো অ্যাকশনে যায় না, তখন কি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে না?

আইনজীবী বলেন, যারা প্রকৃত দুর্নীতিবাজ তাদের ধরা দরকার। এজন্য অন্য কেউ যাতে আবার ভিকটিম না হয়। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আদালত বলেন, এটাকে কিভাবে মূল্যায়ন করব কে আসল দুর্নীতিবাজ আর কে না? আপনি কি দুর্নীতি থেকে মুক্ত? আমাদের দিকে তাকালে অসুবিধা কি?

আদালত বলেন, দুদকের চেয়ারম্যানকে ডেকেছিলাম কোর্টে। ওখানে আমি বলেছিলাম যে, দুটি জায়গায় একটু অনুসন্ধান করেন। তার মধ্যে একটা হল, আমাদের সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন এবং আরেকটি হলো নিম্ন আদালত। দুর্নীতি তো হচ্ছেই। এটাও পাবলিক পারসেপশন। দুদক চিঠি দিলে আমরা সবাই যদি বলি, না উনাকে ধরাছোঁয়া যাবে না, আর আপনারা দুনিয়ার সব দূর করেন। এটা কি ঠিক হবে?

জেড আই খান পান্না বলেন, আমি সেটা বলি নাই। রূপার পুরো পরিবার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সে কারণে কালকে হাজির হতে পারছেন না। দুদকের এই চিঠিতে যে ভাষা ব্যবহার করা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

আদালত বলেন, আপনি যেহেতু কোভিড আক্রান্ত এখন যেতে পারবেন না সেটা লিখিতভাবে দুদককে জানান। সুস্থ হলে হাজির হবেন। এরপরই হাইকোর্ট ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিটের শুনানি মুলতুবি করেন।

একইসঙ্গে তাকে হাজির হতে সময় দেওয়ার জন্য বলে আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top