বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও স্বপ্নভঙ্গ মেধাবীদের!আছে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও
বিশেষ প্রতিবেদকঃ ৩২ থেকে ৩৯তম বিসিএসে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ পাননি ৫০৯ জন।
বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও স্বপ্নভঙ্গ মেধাবীদের
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ক্যাডার হিসাবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করতে পারেননি অসংখ্য মেধাবী তরুণ।
গত ৩২তম বিসিএস থেকে ৩৯তম বিসিএস পর্যন্ত ৫০৯ জন মেধাবী তরুণের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। শুধু নেতিবাচক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কারণে আজ বিসিএস তাদের কাছে দুঃস্বপ্ন। অথচ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সব পরীক্ষার ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তারা।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, নেতিবাচক প্রতিবেদনের জন্য কেউ কেউ বাদ পড়ছেন। তবে আগে যারা নিয়োগ পাননি তাদের প্রতিবেদনগুলো ভিন্ন ভিন্ন সংস্থা দিয়ে তদন্ত করছি। আশা করছি কারোর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ না পাওয়া গেলে অবশ্যই নিয়োগ দেওয়া হবে।
আক্ষেপ করে ৩৪তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত বর্তমানে একটি সরকারি ব্যাংকে কর্মরত একজন মেধাবী বলেন, আমার বা আমার পরিবারের কারোর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কেউ রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত না। আমার ভাই সশস্ত্রবাহিনীতে কর্মরত। অথচ আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার নেতিবাচক প্রতিবেদনের কারণে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করতে পারিনি।
বিষয়টি নিয়ে ঐ পরীক্ষার্থী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দ্বারস্থ হন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার আবেদনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সুপারিশ করলেও আজ পর্যন্ত ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ঐ মেধাবী ছাত্র একটি সরকারি ব্যাংকে অফিসার পদে কর্মরত আছেন। ব্যাংকের চাকরির ক্ষেত্রে পুলিশের প্রতিবেদন পজিটিভ ছিল।
৩৯তম বিশেষ বিসিএসে ৪ হাজার ৭৯২ চিকিত্সককে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে নিয়োগ দিতে গত বছরের ৩০ এপ্রিল সুপারিশ করে পিএসসি। গত বছরের ১৮ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৩ মার্চ পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪ দফায় ৪ হাজার ৭২১ জনকে নিয়োগ দেয়। নিয়োগ পাননি ৭১ জন। এ অবস্থায় সরকার ৩৯তম বিসিএস থেকে আরো ২ হাজার চিকিত্সক নিয়োগ দেয়। ৭১ জনের মধ্যে একজনের ইতিবাচক প্রতিবেদন আসায় তিনি নিয়োগ পেয়েছেন।
৩৭তম বিসিএসে ২০১৮ সালে পিএসসি ১ হাজার ৩১৪ জনকে ক্যাডার হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। এর প্রায় ৯ মাস পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২২১ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বাদ পড়েন ৬১ জন। নিয়োগ পেতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারস্থ হচ্ছেন, কিন্তু সমাধান পাচ্ছেন না।
৩৬তম বিসিএসে ২০১৭ সালের অক্টোবর ২ হাজার ৩২৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে পিএসসি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, ২ হাজার ২০২ জন প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ১২১ জন প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়োগ থেকে বাদ পড়েন। নতুন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে ইতিবাচক পুনঃপুলিশ প্রতিবেদনে ৫২ জনের চাকরি হয়েছে। এখনো বাদ আছে ৬৯ জন। ৩২তম বিশেষ বিসিএসের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ১ হাজার ৬৮০ জন নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন। নিয়োগ পান ১ হাজার ৬১৯ জন। নিয়োগবঞ্চিত থাকেন ৫৯ জন। ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল হলেও এখনো গেজেট হয়নি।
পিএসসি ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পিএসসি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গেজেট প্রকাশের। মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশের আগে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে ‘পুলিশ যাচাইকরণ’ করে থাকে। এই যাচাইকরণের কাজটি সাধারণত করে থাকে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)।
তবে গত কয়েক বছর অন্য গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিসি অফিস দিয়েও কাজটি করানো হয়েছে। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন প্রার্থীর প্রাক?-যাচাই ফর্মে দেওয়া ১৬ ধরনের তথ্য যাচাই করা হয়। শিক্ষার্থীরা কোথায় লেখাপড়া করেছেন, সর্বেশষ পাঁচ বছর কোথায় থেকেছেন—এ রকম সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি তিনি কোনো ফৌজদারি বা অন্য কোনো মামলায় গ্রেফতার, অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হয়েছেন কি না, এই তথ্য চাওয়া হয়। এসব যাচাই শেষ করে বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার ও ডিআইজি মর্যাদার একজন কর্মকর্তা স্বাক্ষর করে প্রতিবেদন পাঠান। এর বাইরে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রার্থীর পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়ও যাচাই করে থাকে।
আবার যাচাইকরণের নামে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও থাকে।