পৌঁছে গেছে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম চালান
আন্তর্জাতিক প্রতিবেদকঃ করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর বহির্বিভাগের ২ নম্বর, ২২০ নম্বর ও ৬২ নম্বর ক্লিনিকে প্রথম দফার রুশ ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি’র প্রথম চালানা গ্রহণ করেছে।
শুক্রবার মস্কোর ডেপুটি মেয়র আনাস্তাসিয়া রাকোভা সাংবাদিকদের বলেছেন, এই ক্লিনিকগুলো প্রায় ৪০ হাজার মানুষের দেহে ১৮০ দিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
করোনাভাইরাসের নিরাপদ টিকা উদ্ভাবনে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে ১১ আগস্ট বিশ্বের প্রথম ভ্যাকসিন হিসেবে ‘স্পুটনিক ভি’ অনুমোদনের ঘোষণা দেয় রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানান, এই ভ্যাকসিন ইতোমধ্যে তার মেয়ের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে রাশিয়ার ভ্যাকসিন অনুমোদনের ঘোষণার পরই এর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করে বিভিন্ন দেশ।
রাশিয়ার কাজের গতি এবং পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ ছাড়াই ভ্যাকসিন অনুমোদন হয়েছে বলে দাবি উদ্বিগ্নদের। জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। সোভিয়েত স্যাটেলাইটের নামে ভ্যাকসিনটির নামকরণ করা হয়েছে ‘স্পুটনিক ভি’।
তবে শুক্রবার আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল সাময়িকী ল্যানসেট’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভ্যাকসিনটি নিয়ে ৪২ দিন করে দুটি ট্রায়াল চালানো হয়েছে।
প্রত্যেকবারই অংশ নিয়েছেন ৩৮ জন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক স্বেচ্ছাসেবী। পরীক্ষায় তাদের মধ্যে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
মস্কোর ডেপুটি মেয়র আনাস্তাসিয়া রাকোভা বলেন, শুক্রবার মস্কো মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশন ট্রায়াল পূর্ববর্তী নিবন্ধনের জন্য করোনাভাইরাস মোকাবিলার প্রথম দফার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে পৌরসভা বহির্বিভাগের ২ নম্বর, ২২০ নম্বর ও ৬২ নম্বর ক্লিনিক অগ্রদূত হিসেবে কাজ করবে। প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। আগামী সপ্তাহে এ কাজ শুরু হবে।
ডেপুটি মেয়র জানান, ভ্যাকসিনগুলো সুনির্দিষ্ট অনুকূল পরিবেশে বিশেষ ফ্রিজারে রাখা হয়েছে। শুক্রবার থেকেই মস্কোর বাসিন্দারা এ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণে আবেদন করে প্রথমে এ ভ্যাকসিন নিতে পারবেন।
ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অনুমোদনে ক্লিনিকগুলোর চালানো এ পরীক্ষা কার্যক্রম রাশিয়ার স্বাস্থ্যসেবা মন্ত্রণালয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। এ কর্মসূচির আওতায় ভ্যাকসিন দেওয়ার পর বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য প্রতিলক্ষণগুলো নির্ধারণে স্ক্রিনিং কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ছয় মাস ধরে নিয়মিত মেডিক্যাল পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
ডেপুটি মেয়র আরও বলেন, মস্কো কর্তৃপক্ষ ও গামালিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ইপিডিমিয়োলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি অব রাশিয়া হেলথকেয়ার মিনিস্ট্রি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এ ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পূর্ববর্তী নিবন্ধনে অংশ নিতে রাজধানীর বাসিন্দাদের আমন্ত্রণ জানায়। এ কর্মসূচির আওতায় ৪০ হাজার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। বিনামূল্যে এ টিকা দেওয়া হচ্ছে।
এ কর্মসূচিতে নারীদের অংশগ্রহণের জন্য প্রেগনেন্সি পরীক্ষার ফলাফল অবশ্যই নেগেটিভ হতে হবে এবং যেসব পুরুষ এতে অংশ নিতে যাচ্ছেন তারা পরবর্তী তিন মাস সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করতে পারবেন না।