হত্যা নাকি আত্মহত্যা; তবে স্বামীই কি আসামী!
আপরাধ প্রতিবেদকঃ তিন সন্তানের জননী ২৫ বছরের আকলিমা। স্বামী শরিফুলের সাথে কুটকাট লেগেই থাকে। স্বামীর পরকীয়া মানতে না পেরে আকলিমা বাপের বাড়ীতেও স্থান পায়নি। নীলফামারী জেলার কামারপুকুর গ্রামের এই দম্পতির জীবনে সুখ যেন এক সোনার হরিণ।
এই যখন জাপিত জীবন, পরতে পরতে ক্লান্তিহীন সময় টেনে নেয়াই আকলিমার ললাট লিখন।
এমন পরিস্থিতিতে নীলফামারী জেলা পুলিশের কাছে ২৩ আগষ্ট খবর আসে আকলিমার আত্মহত্যার। কামারপুকুর ইউনিয়নের মাছের খামারের পিছনে বৈদ্যুতিক টাওয়ারের নিছে গলায় রশি পেছিয়ে আকলিমার নিধর দেহ ঝুলে আছে। সাথে পাওয়া যায় ডার্বি সিগারেটের ফয়েল পেপারে লিখা সুইসাইড নোট।
শোকে ম্রিয়মান আকলিমার মা পাড়ার সকলের ধারনা অনুযায়ী স্বাভাবিক ভাবেই স্বামী শরিফুলকে সন্দেহ করে মামলা দায়ের করেন।
কিন্তু ডার্বি সিগারেটের ফয়েল পেপারে লিখা সুইসাইড নোট নিয়ে জেলা পুলিশের শুরু হয় নানা
পর্যালোচনা। প্রচলিত অপশনের বাহিরে অন্যান্য অপশন বিশ্লেষণের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার।
তদন্ত তদারকী সার্কেল অফিসার ও তদন্তকারী অফিসার সমন্বিতভাবে শুরু করেন চুলচেরা বিশ্লেষণ। এই এলাকায় কে কে ডার্বি সিগারেট খায়? কোন কোন দোকানে বিক্রি হয় ডার্বি? হাতের লিখা কার কেমন? স্বামীর পরকীয়া কার সাথে?
তদন্তের ট্যালিখাতায় পুলিশ প্রাথমিকভাবে পেয়ে যায় ৫০-৬০ জনের সন্দেহভাজন। ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমিকভাবে কমতে থাকে পুলিশের সন্দেহ।
ডার্বি সিগারেট, পেন্সিল ক্রয় আর হাতের লিখার তাল-লয় মিলে দুজনের সাথে, সুডোকুর মতো। পুলিশ গ্রেফতার করে ওই এলাকার আনারুল, শুভ আর হৃদয়কে। চলতে থাকে নিরিবিচ্ছিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ। জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে আকলিমার স্বামী শরিফুলের সাথেও।
আসল আসামী আসলেই কে? নীলফামারী জেলা পুলিশের তদন্তকারী দলের মনলোকের দহন বাড়তেই থাকে। সত্য উদঘাটনের নিরেট আনন্দ পেতে নির্মোহভাবে মরিয়া হয়ে উঠে এই দল। নির্মোহ নিয়ত স্রস্টাও নাকি কবুল করেন! হলোও তাই। স্বামী শরিফুল নয়, প্রতিবেশী আনারুল স্বীকার করেন। বলতে থাকেন সেই ২৩ আগষ্ট রাতের কথা। তদন্তকারীদল শুনতে থাকেন নির্মমতার এক নির্দয় কাহিনী। আকলিমাকে একাকী পেয়ে ওই এলাকার আনারুল, শুভ আর হৃদয় একের পর এক মেতে উঠে পিটুইটারির খেলায়। চলতে থাকে ধর্ষণ, পাশবিক ধর্ষণ। অভাব, অনটন আর আশান্তির দিনলিপির পরেও অদম্য আকলিমা ঘাত-প্রতিঘাতে দিতে থেকে বাধা, সংকল্পময় সুতীব্র বাধা। কিন্তু শীর্ণকায় আকলিমা ক্লান্ত হয়ে হেরে যায় আনারুল, শুভ আর হৃদয়ের বর্বরতার কাছে।
মাছের বালতির রশি দিয়ে গলায় পেচিয়ে হত্যা করে বৈদ্যুতিক পোলের সাথে ঝুলে দিয়ে আনারুলের খাওয়া ডার্বি সিগারেটের ফয়েল পেপারে সুইসাইড নোট লিখে কোমরে গুঁজে দেয় তারা। যাতে ফেঁসে যায় স্বামী। চোখ ছলছল করে শরিফুলের। চোখের কোনে টিস্যুর আড়ালে বিন্দু বিন্দু নোনাজল জমে তদন্তকারী দলের।
পুলিশের অহর্নিশ প্রচেষ্ঠায় আদালতে তাদের এই জবানবন্দি ন্যায়বিচারের আশায় নিশ্চয় আমাদের আকলিমাকে ক্ষনিকের জন্য হলেও পুলকিত করছে, প্রশান্ত করছে তার ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়- এমন আশায় দৃঢ় নীলফামারী পুলিশ সুপার আর তার দল।