ফসলের জন্য প্রার্থনা — হোসেন আবদুল মান্নান
আমি প্রকৃতই ভূমিপুত্র।
কৃষির আদিম হাতিয়ার দিয়ে
সাধ্যাতীত শ্রমে উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতই আমাকে প্রতিদিন পুষ্ঠ করেছে
ক্রমাগত ঋদ্ধ করেছে পরম্পরায়।
আমার দু’চোখে ভরে আছে সোনালী ফসলের তরঙ্গ,
আমার হাতের তালু আজো স্পর্শ পায়
সবুজ ঘাসের পুস্পকোমল অঙ্গ।
আমার কব্জিতে, বাহুতে,এমনকি সর্বাঙ্গে লেগে আছে
হাওরের কাদা মাটির সোঁদা গন্ধ।
আজো মুখের অন্ন,জিহ্বার আজন্ম স্বাদ, নাড়ির স্পন্দন সবই অবলীলায় যোগান দিয়ে চলেছে আমার প্রপিতামহের ঘামে সিক্ত
নীরব, স্তব্ধ, পাথর হয়ে পড়ে থাকা
নিস্পাপ ভূমি।
উওরাধিকারে প্রাপ্ত আমার জমিগুলো যেন
কথা বলে, হাসে, কাঁদে স্বজনকেও চিনতে পারে তারা,
অযুত, নিযুত, শত সহস্র সৌর বছর ধরে
তাদের বুকে, পিঠে, আলে যাদের নিত্য পদচিহ্ন আঁকা
তাদের নিয়েও ভাবে।
কালনিরবধি কর্ষণে কর্ষণে ফালা ফালা হওয়া
দেহ থেকে রক্তক্ষরণ নিয়ে করুন আকুতিতে আমাকে বলছে,
আমরা আরেকবার তোমার বজ্রকঠিন হাতে ধরা লাঙ্গলের ফলা চাই,
গোস্পদের নিরন্তর ঝংকার চাই,
রাখালের এলোমেলো সুর চাই।
আমরা অনবরত তোমার উদয়াস্ত আহারের উপায় করে দেব,
বিনিময়ে আমাদের কেবল ফসল ফলানোর অকৃত্রিম অধিকারকে সমূলে বিনষ্ট করোনা।
শত শষ্যের অমৃত দানার পরিবর্তে দয়া করে
শুধু মৎস্য ফলাতে বলোনা।
কেননা,এসব আমাদের সাথে কোনদিনই যায় না।
আবদুল মান্নান
কবি ও সরকারী কর্মকর্তা