ত্রাণ বিতরণে সাভারের ইউএনওর বিরুদ্ধে টাকা আদায়ের অভিযোগ

PicsArt_04-17-08.58.27.jpg

ত্রাণ বিতরণে সাভারের ইউএনওর বিরুদ্ধে টাকা আদায়ের অভিযোগ

সাভার প্রতিনিধিঃ করোনায় সহযোগিতার জন্য ফান্ডের কথা বলে একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করার অভিযোগ উঠেছে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজুর রহমানের বিরুদ্ধে।

সাভার উপজেলার একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, সরকারি বরাদ্দ পাওয়া চাল শেষ হয়েছে বহু আগেই। অন্যদিকে জনসংখ্যার পরিমাণ বেশি হওয়ায় অনেক চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত উদ‌্যোগে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজুর রহমানের গঠিত করোনা ফান্ডে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন চেয়ারম্যানরা। অভিযোগ রয়েছে, অনুদানের টাকা উত্তোলনের পর থেকে অদ্যাবধি উপজেলার কোথাও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়নি নির্বাহী কর্মকর্তাকে।

সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনি মহল্লার একটি বাড়ি (কাসেম ভিলা) লকডাউন করা হয়েছে। সেখানে বসবাস করেন অন্তত ১০ থেকে ১৫টি পরিবার।

পরিবারগুলোর অভিযোগ, ফেসবুকে উপজেলা প্রশাসনের হট লাইন নাম্বারে খাদ্য সহায়তার জন্য তিন দিন ধরে যোগাযোগ করেও ত্রাণ মেলেনি। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, নম্বরটিতে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।

মোবাইল ফোনে না পেয়ে নির্বাহী কর্মকর্তার উপজেলা পরিষদের বাসভবনে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ ও শ্রমিকরা। সেখানে সবাইকে ত্রাণ নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব জানান, উপজেলার জন্য বরাদ্দকৃত ১০০ টন চালের মধ্যে ১২টি ইউনিয়নে তাদের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বাকি চালের খবর তারা জানেন না।

এছাড়া চালের পাশাপাশি করোনার দুর্যোগে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার জন্য সরকারিভাবে (জি আর এর) ১০০ টন চাল আর শিশু খাদ্যসহ নগদ চার লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেসব বরাদ্দ চেয়ারম্যানদের বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা। অথচ ত্রাণের চালের সাথে এক কেজি ডাল, আলু, পেঁয়াজ ও তেল ব্যক্তিগতভাবে বিতরণ করছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা।

এই এলাকা শিল্পাঞ্চল জোন হওয়ার কারণে দেশের যেকোনো জেলার জনসংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ সেখানে বসবাস করছেন। জনসংখ্যার তুলনায় এই বরাদ্দ খুবই সামান্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

বনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল জানান, তিনি নির্বাহী কর্মকর্তাকে চাহিদা অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছেন। তবে সেই টাকা দিয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা কোথায় বা কাদের সহযোগিতা করবে এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এসব টাকা ব্যাংকের অ‌্যাকাউন্টের মাধ‌্যমে না নিয়ে নগদ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ বলেন, ‘করোনায় খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করার কথা বলে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের প্রত্যেক চেয়ারম্যানকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য এক মিটিংয়ে নির্দেশ দেন। নির্বাহী কর্মকর্তার চাহিদা মোতাবেক নগদ ৫০ হাজার টাকা তার কাছে দিয়ে এসেছি।’

তিনি জানান, ধামসোনার চেয়ারম্যান ও আশুলিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাহী কর্মকর্তাকে এক লাখ টাকা করে দিয়েছেন।

একই কথা বলেছেন, ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার। তবে তিনি লকডাউনের কারণে নির্বাহী কর্মকর্তাকে টাকা পৌঁছে দিতে পারেননি। তিনি জানান, আগামী দু-একদিনের মধ্যে তিনি টাকা পৌঁছে দেবেন।

আশুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন বলেন, ‘কেউ ৫০ হাজার আবার অনেকেই এর বেশিও টাকা দিয়েছেন।’

পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান বলেন, ‘ত্রাণের চাল পেলেও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী কেনার জন্য কোনো আর্থিক সহযোগিতা বা নগদ টাকা এখনো পাইনি। করোনা ফান্ডে টাকা অনুদান দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার কাছেও টাকা চাওয়া হয়েছিলো কিন্তু আমি কোনো টাকা দেইনি।’

উত্তোলন করা টাকা নির্বাহী কর্মকর্তা কোথায় বা কোন জনগোষ্ঠীর কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন এমন তথ্য সাভার পৌর, থানা ও আশুলিয়া থানা এলাকার বিভিন্ন মহল্লায় খোঁজ নিয়েও পাওয়া যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এসব অনিয়মের বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌসের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভি করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, করোনা দুর্যোগে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার প্রায় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের একটা বড় অংশ এই অঞ্চলের ভোটার নন। তাই তাদের কপালে জুটছে না সরকারি ত্রাণ।

বেসরকারি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অনেকটাই সীমিত। সেজন‌্য সাভার ও আশুলিয়া এলাকার ইউপি সদস্য থেকে চেয়ারম্যান এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদের দ্বারে দারে ঘুরেও ভাগ্যে জুটছে না সামান্যতম খাদ্য সহায়তা।

বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আ. মজিদ সরদার অভিযোগ করে বলেন, ‘‘কারখানার শ্রমিকরা এই অঞ্চলের ভোটার না হওয়ায় তাদেরকে কেউ ত্রাণ সহযোগিতা দিতে চাচ্ছে না। অনেক কারখানার শ্রমিক বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

‘শ্রমিকদের সহায়তার জন্য আমি নিজেই স্থানীয় মেম্বার থেকে চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও কোনো খাদ্য সহযোগিতা পাইনি। এমনকি সর্বশেষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পারভেজুর রহমানের বাসভবনে গিয়েও খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। তার বাসা থেকে কোনো সহযোগিতা দেওয়া হয় না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।’’

বিভিন্ন মহল্লার দিন মজুর শ্রমিকরা জানান, কাজের সুবাদে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন তারা। স্থানীয় কাউন্সিলর, মেম্বার, চেয়ারম্যানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সহযোগিতা পাননি। তারা ওই এলাকার ভোটার না হওয়ার কারণে কেউ তাদের ত্রাণ দেয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top