আমাদের দেশে এ রাজনৈতিক সংস্কৃতি কবে দেখতে পাবো – কাদের গনি চৌধুরী

PicsArt_04-06-09.12.00.jpg

আমাদের দেশে এ রাজনৈতিক সংস্কৃতি
কবে দেখতে পাবো – কাদের গনি চৌধুরী

করোনা ভাইরাস সামাজিক দুরত্ব বাড়ালেও
ভারতের রাজনীতির দূরত্ব কমিয়েছে। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাই সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীদের পরামর্শ নিলেন। ব্যতিক্রম ঘটিয়ে তিনি কংগ্রেস আমলের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এমনকি কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ নিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি কথা বলেছেন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক প্রধানদের সঙ্গে।

লকডাউনের ১২ দিন পেরিয়ে গেছে। আরও কতদিন চালিয়ে যাওয়া হবে তা নিয়ে নানা মত শোনা যাচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ একুশ দিনের পরেও লকডাউন আরও কিছুদিন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এরই মধ্যে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। রবিবার পর্যন্ত ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩৭৪।

গত ২৪ ঘন্টায় বেড়েছে ৪৭২ জন। এদিন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৭৯ জনের। ২৬৮ জন সুস্থ হলেও সংক্রমণ কমার কোনও লক্ষ্মণ নেই। এরকম পরিস্থিতিতে রবিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায় ও প্রতিভা প্যাটেল এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও এইচ ডি দেবেগৌড়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের পরামর্শ চেয়েছেন তিনি।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা ছাড়াও মোদি এদিন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ওড়িষার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর সহ দেশের একাধিক মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে আলোচনা করেছেন। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন, আকালি নেতা প্রকাশ সিং বাদলের সঙ্গেও মোদী আলোচনা করেছেন।

রবিবার সকালে বিজেপির সংসদীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে একপ্রস্থ কথা বলেছেন মোদী। ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণার আগে দেশের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কোনও পরামর্শ না করায় প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। যদিও সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মোদী লকডাউন থেকে বেরিয়ে আনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীদের পরিকল্পনা জানাতে বলেছেন।

আগামী ৮ এপ্রিল সর্বদলীয় বৈঠকও করতে চলেছেন মোদী। জানা গেছে, দীর্ঘ লকডাউন নিয়ে ধৈর্য হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজন প্রবল বিপাকে পড়েছেন। সূত্রের খবর, এরকম এক পরিস্থিতিতে লকডাউন তোলা বা তা আরও দীর্ঘ করা নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। আলোচনা হতে পারে করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও। তবে এ নিয়ে কোনও পক্ষই কিছু প্রকাশ্যে বলেনি।

দুর্ভাগ্য আমাদের!।জাতির এ মহাসংকটকালেও সব দল একজায়গায় হতে পারলো না। অবশ্য এ ক্ষেত্রে আমি রাজপথের বিরোধী দলগুলোকে ধন্যবাদ জানাই। তারা বার বার সরকারকে আহবান জানিয়েছে এ সংকট মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ নেয়ার জন্য। তারা জাতির এ সংকটকালে সরকারকে সাহার্য্য করারও প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সরকার তাদের পাত্তাই দিলো না।

বরাবর এ ধরণের সংকট দেখা দিলে সরকারকেই উদ্যোগি হতে দেখা যায় বিরোধী দলকে সাথে নিয়ে সংকট মোকাবিলায়। কিন্তু এবারই হলো ব্যতিক্রম।

সম্প্রতি প্রাণঘাতী করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির দাবি জানায় রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আর এটা করতে পারলে দেশের জন্য ভালো কাজ হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গত মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরার বাসায় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনো সময় আছে জাতীয় কমিটি করার।

ফখরুল বলেন, আমরা এই কথাটা বারবার বলেছি যে, আমরা কখনোই সমালোচনার জন্য সমালোচনা করছি না, আমরা সরকারকে সাহায্য করতে চেয়েছি। আমরা বলেছি যে, ত্রুটি নয়, আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা আহ্বান জানিয়েছি।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখন পর্যন্ত একটা জাতীয় কমিটি তৈরি হয়নি। যেটা করা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ তো এক‘শ ৬০ মিলিয়নের দেশ। এখানে একেবারের নিচের দিককার অর্থনীতি।’ কীভাবে এই কমিটি হতে পারে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা আমি আগেও বলেছি। প্রধানমন্ত্রীকেই উদ্যোগ নিতে হবে যে, আপনার পলিটিক্যাল পার্টি, সিভিল সোসাইটি..। নট দ্যাট এগুলোকে নিয়ে একখানে বসে মিটিং করতে হবে- তা বলছি না। ঘোষণা করে আপনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই এটা করতে পারেন।

করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই ঘরবন্দি মানুষজন বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষজনের জন্য খাবার পৌঁছিয়ে দেয়ার কাজ করছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

দেশের অর্থনৈতিক সংকটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা দাঁড়াচ্ছে সেটা হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষজনের অর্থনৈতিক সমস্যা। এখন সবাই এটা কথা বলছেন বিশেষ করে যারা অর্থনীতিবিদ আছেন তারা বেশি করে বলছেন। বাংলাদেশে বেশিভাগ মানুষই এখন দিন আনে দিন খায়- এই বিশাল একটা অংশ তারা কিন্তু কয়েকদিন ধরে কোনো আয় করতে পারছে না এবং এটা একটা টার্মিং পজিশনে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমরা যে কারণে বারবার বলেছি, বিষয়টাকে পুরোপুরি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে এই জাতিকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, আমি যেটা মনে করি, সেনাবাহিনীকে যদি সেই কাজে লাগানো যায় এবং অন্যদিকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা আছেন একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার যারা আছে তাদের সম্পৃক্ত করে যদি সেই কাজগুলো করা যায় তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোকে যদি সম্পৃক্ত করা যায়, তাদেরকে একসাথে করা যায়-অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। তার জন্য বরাদ্দ থাকতে হবে, তার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রি থাকতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা এক্সিসটেন্সের প্রশ্ন। সেই এক্সিসটেন্সের জন্য এখন সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। বিষয়টার দায়টা সরকারের, দায়িত্ব সরকারের। তাকেই উদ্যোগটা নিতে হবে- বিরোধী দলকে কীভাবে কাজে লাগাবে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কীভাবে কাজে লাগাবে, পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করবে। এখানে সমস্যা অনেক। আমরা মনে করি সরকারের অনেক অনেক বেশি দায়িত্ব, তাদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

এদিকে করোনায় সৃষ্ট অভাবনীয় সংকটে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ( জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা ভাইরাস জনিত মহামারীর কারণে জাতি হিসেবে আমরা এক অভাবনীয় সংকটের সম্মুখীন হয়েছি। এর তীব্রতা এবং বিস্তৃতি আমাদের জাতিকে এখন এক মৌলিক আর দীর্ঘ দিনের অমীমাংসিত প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আমরা কি এই বিপত্তি মোকাবেলার জন্য আবার জাতি হিসেবে ১৯৭১ এর মত একতাবদ্ধ হতে পারি না?

সরকার আর সরকারের বাইরে এখন সকলের এক কাতারবন্দী হওয়ার পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক সকল ভেদাভেদ ভুলে এখন সকলের একজোট হওয়ার সময়।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, যিনি চিকিৎসক বা চিকিৎসার সাথে জড়িত তিনি তো বটেই কিন্তু এছাড়াও সমাজের প্রতিটি অংশকেই এই প্রচেষ্টার সাথে একাত্ম হতে হবে। সরকার করোনা প্রটোকল অনুযায়ী সকলের বিচরণ সীমিত করে তাদেরকে ঘরে আবদ্ধ রেখেই নিজের একক প্রচেষ্টায় এই বিপদ থেকে উত্তরনের পথ খুঁজছে। এতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী জাতীয় প্রয়াসের সাথে একাত্ম হচ্ছে না। সকলে ঘরে থাকাটাই জাতীয় কর্তব্য পালন বলে মনে করছে এবং সরকার, চিকিৎসক আর প্রশাসনের উপর বাকী দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীও জাতির এ সংকটকালে জাতীয় ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করেন। মানব জমিনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন সরকারেরও উচিত সমস্ত রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী এবং গুরুত্বপূর্ণ সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে আলোচনা করা। শুধু সেনাবাহিনী দিয়ে এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। আবার জরিমানা করেও হবে না। আমাদের সামগ্রিকভাবে করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে হবে। যেমনটি আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় একত্রে করেছিলাম।

পারস্পরিক ঘৃণা, বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সম্মিলিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের তো বাঁচতে হবে। আর এটা যদি সম্ভব হয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের মতো করোনাভাইরাস প্রতিরোধেও আমরা জয়লাভ করব।

অন্যান্য রাজনৈতিক দল গুলো একই দাবি জানিয়েছে। সুশীল সমাজের দিক থেকেও জাতীয় ঐক্যের দাবি উঠেছে। কিন্তু সরকার একেবারেই নীরব, নিশ্চুপ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারা “কানে দিয়েছে তুলা- পিঠে বেঁধেছে কুলা।”

লিখেছেন

কাদের গনি চৌধুরী
সভাপতি
(ডিইউজে) ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক
জাতীয় প্রেসক্লাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top