সারাবিশ্বে ২৫০ সাংবাদিকে নির্যাতন ও জেলে পাঠিয়েছে
সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকদের কারাগারে পাঠানোর ক্ষেত্রে এবারে রেকর্ড গড়েছে চীন। এশিয়ার আরেক দেশ তুরস্কের রেকর্ড ভেঙে এবছর শীর্ষে উঠে এসেছে এশিয়ার দেশটি।
এবছর ৪৮ জন সাংবাদিককে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে চীন সরকার। এবছর ২৫০ জন সাংবাদিককে জেলে পাঠিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। সারাবিশ্বের এই চিত্র উঠে এসেছে। আমাদের দেশও এই চিত্রের বাহিরে নয়।
আমরা ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের (সিপিজে) বার্ষিক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্যই পেয়েছি। যা রীতিমতো ভয়ংকর, মুক্ত চিন্তা ও মুক্ত কথার।
মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে আজ।
এবারের বার্ষিক প্রতিবেদনে সিপিজে বলেছে, এ বছর সারা বিশ্বে ২৫০ জনের বেশি সাংবাদিককে বিভিন্ন ঘটনায় কারাগারে পাঠিয়েছে কয়েকটি দেশের সরকার।
বিভিন্ন দেশের সরকারের রোষানলে পড়ে পরপর চার বছর ২৫০ জন সাংবাদিক কারাগারে পাঠানের ঘটনা ঘটল।
সারা বিশ্বের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন একনায়ক সরকারের সমালোচনা করা, সরকার ও সরকারী বাহিনীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে পত্রিকায় লেখা, গনতন্ত্রের নামে বিভিন্ন অনিয়ম জবরদস্তির বিরুদ্ধে লেখার জন্য এসব সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে, বিভিন্ন তথ্য উপাস্থের মাধ্যমে।
সারাবিশ্বে স্বাধীনচেতা মানুষদের মত নয়
উইঘুর মুসলমানদের জীবন। সেকারণেই চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে (উইঘুরদের নির্যাতন) সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের বিষয়টি কঠোরভাবে দমন করার ঘটনা সামনে আসার পরই তালিকার শীর্ষস্থানে গেল চীন।
এবছরে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর থেকেই সাংবাদিকদের চাকরি হারানো এবং নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে এশিয়ার আরেক দেশ তুরস্ক। যদিও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুরস্ক এগিয়ে আছে। কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য মোটেও সুখকর নয় সেই দেশ।
সাংবাদিকদের কলম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্য এলাকার চেয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্য। সাংবাদিক জেলে ডুকানোর ক্ষেত্রে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছে সৌদি আরব ও মিসর।
এশিয়ার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, তুরস্কের রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ান, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি গণমাধ্যমে নিজেদের সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। তাই তারা এসব ব্যবস্থা গ্রহন করেন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে।
এ বছর তুরস্কে এরদোয়ান সরকার ৪৭ জন সাংবাদিককে জেলে পাঠিয়েছে। গত বছর, অর্থাৎ ২০১৮ সালে দেশটিতে ৬৮ জন সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে। তবে সিপিজে বলেছে, সাংবাদিক কম জেলে পাঠানো মানেই তুরস্কে অবস্থার উন্নতি হয়েছে—এ কথা মনে করার বিষয়টি ভুল হবে।
এরদোয়ান প্রায় ১০০টি গণমাধ্যম বন্ধ করেছেন। তবে এরই মধ্যে অনেক সাংবাদিক জেল থেকে ছাড়াও পেয়েছেন।
এ বছর ৪৮ জন গণমাধ্যমকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে চিন পিং সরকার। ২০১৮ সালের চেয়ে সাংবাদিকদের জেলে যাওয়ার সংখ্যা একজন বেশি। সিপিজে বলছে, সি চিন পিং ‘গণমাধ্যমে টুঁটি চেপে ধরাকে শিল্পের’ পর্যায়ে নিয়েছেন। উইঘুরদের সংবাদ প্রকাশের কারণে চীনে সাংবাদিক গ্রেপ্তারের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে।
সৌদি আরব ও মিসর এ বছর ২৬ জন সাংবাদিককে জেলে পুরেছে। তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে দেশ দুটি।
এবছর ইরিত্রিয়া ১৬ সাংবাদিককে জেলে পাঠিয়েছে। গত দুই দশকে এই দেশের নাম সাংবাদিকদের কারাগারের পাঠানোর তালিকায় ছিল না। এবারই প্রথম।
এ ছাড়া ২০১৯ সালে ভিয়েতনামে ১২, ইরানে ১১, রাশিয়া ও ক্যামেরুনে ৭, বাহরাইন ও আজারবাইজানে ৬, সিরিয়ায় ৫ এবং বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা ও মরক্কোয় ৪ জন করে সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
২০১৮ সালে ২৫১ জন সাংবাদিককে একনায়ক সরকারেরা জেলা পুরেছিল। এ বছর এই সংখ্যা চারজন বেড়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ যেমন ছাড়া পেয়েছেন, আবার এই সময়ের মধ্যে অনেক সাংবাদিককেই কারাগারে যেতে হয়েছে।
১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের অধিকার নিয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর সিপিজে।
এ বছরের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিপিজে। এরপর যেসব সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের হিসাব পরবর্তী বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হবে বলে সিপিজে বলেছে।
লেখকঃ-
সাগর চৌধুরী
প্রকাশক ও সম্পাদক
wnews360.com
সভাপতি
বাংলাদেশ অনলাইন প্রেসক্লাব