পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, রমজান মাসকে পুঁজি করে কেউ যেন দ্রব্যমূল্যের দাম না বাড়ায় সেজন্য প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে।
গতকাল শুক্রবার রাতে ভোলা জেলা পরিষদ চত্বরে আসন্ন মাহে রমজান উপলক্ষে সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন চিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সুগার করপোরেশনে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকার চিনি মজুদ রেখেছিলাম। চিনির দাম কোনোদিন বাড়েনি। সুগার করপোরেশনের মাধ্যমে চিনি আমদানি করে ডিলারদের মাধ্যমে জনগণের মাঝে পৌঁছে দেওয়া হত। সুগার মিলগুলোও ভালো চলেছিল। কোনো ব্যবসায়ী কারসাজি করতে পারেনি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সুগার করপোরেশন বাদ দিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায়ীদের হাতে চিনি ছেড়ে দেয়।
মন্ত্রী বলেন, “আমি যখন শিল্পমন্ত্রী ছিলাম তখন লাল চিনি এনে রিফাইন করার সুযোগ কাউকে দেইনি। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে প্রাইভেট সেক্টরে লাল চিনি এনে রিফাইন করে এবং এর মূল্য সংযোজন মাধ্যম ১৫ শতাংশ। আজকে তাদের হাতেই চিনি। এখন আন্তর্জাতিক বিশ্বে চিনির দাম গত বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ কম। চিনির যা চাহিদা তার চেয়ে অনেক বেশি মজুদ রয়েছে। কাজেই চিনির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমার সু-সম্পর্ক রয়েছে। ঢাকায় তাদের সঙ্গে সভা করেছি। ” তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীদের বলেছি রমজান মাসে আপনারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াবেন না। তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবেন। ” যারা দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ে কারসাজি করেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। ” তিনি বলেন, “বিএনপি রূপকল্প দিয়েছে। একটি দল রূপকল্প দিতেই পারে। তবে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা কোনো রূপকল্প দেয়নি। ভিশন ২০২১ নামে রূপকল্প দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই অনুসরণ করেছেন এবং অনুকরন করেছেন খালেদা জিয়া। আমার ধারণা খালেদা জিয়া রূপকল্পে যা বলেছেন তা তিনি কোনোদিনই বাস্তবায়ন করবেন না। ”
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভোলায় ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “ভোলার প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম শহরে রূপান্তরিত হয়েছে। যে ভোলায় কোনো রাস্তাঘাট ছিল না, বিদ্যুৎ ছিল না। সেই ভোলায় ব্যাপক রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। নদীভাঙনের হাত থেকে ভোলাকে রক্ষায় কাজ চলছে। ভোলা-বরিশালের ব্রিজের কাজও শুরু হবে। ভোলা জেলার রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ নির্মাণের জন্য ৪৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই এর কাজ শুরু হবে। এ কাজ সম্পন্ন হলে ভোলায় আর কোনো রাস্তা কাঁচা থাকবে না। এসব উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। বাংলাদেশের সব গ্রাম আজ শহরে রূপান্তরিত হয়েছে। এখন বিদেশীরা বলেন-বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। এ দেশ সব দিক থেকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। ”
দেশকে এখন উদীয়মান অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “ভোলাও অর্থনৈতিকভাবে একটি উন্নত জেলা। ভোলা হবে বাংলাদেশের ভেতর সর্বশ্রেষ্ঠ উন্নত ও সমৃদ্ধ শিল্পনগরী জেলা। কারণ ভোলায় পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। সেই গ্যাস দিয়ে গ্যাসভিত্তিক শিল্প, কল-কারখানা স্থাপন করা হবে। দেশ-বিদেশের অনেক ব্যবসায়ী ও শিল্পদ্যোক্তা ভোলায় জমি কিনে শিল্প, কল-কারখানা স্থাপন করেছে। ”
জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আব্দুল মমিন টুলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে জেলা প্রশাসক মো. সেলিম উদ্দিন, পুলিশ সুপার মোকতার হোসেন বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া সভায় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম গোলদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লবসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।