পাইপলাইন অগ্নিপরীক্ষার সিরিজ
প্রথমবারের মতো পূর্নাঙ্গ সিরিজ খেলতে ভারত সফরে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। তবে হালের ক্রিকেটীয় বিভিন্ন ইস্যুতে জর্জরিত বাংলাদেশের জন্য এ সিরিজ তথা সফরটি অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যেমন থাকছে পারফরম্যান্সের বিচার, তেমনি থাকছে দেশের ক্রিকেট অগ্রগতির প্রমাণ রাখার সুযোগ।
তবে আমার কাছে এই সফরের টি-টুয়েন্টি সিরিজটি পাচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা। কেননা, একে তো আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ, তার উপর এই সিরিজে দুই দলেই থাকছেন বেশ কয়েকজন উদিয়মান তরুণ ক্রিকেটার। যাদের নিয়ে দুই দলই ভবিষ্যতের নিয়মিত তারকা খুঁজছেন। তাই আমি এই সিরিজটিকে দুই দলের পাইপলাইনের অগ্নিপরীক্ষা হিসেবেই দেখছি।
প্রথমে ভারতীয় দল নিয়ে আলোচনা করলে দেখব, ওদের দলটি মূলত বিশ্বকাপের মহড়া হিসেবেই ঘোষণা করা হয়েছে। নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে দেয়া হয়েছে বিশ্রাম। মহেন্দ্র সিং স্বাভাবিক ভাবেই এই সিরিজেও নেই। প্রতিভাবান অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া, স্পিনার রবিন্দ্র জাদেজা নেই। নিয়মিত পেসার ভুবনেশ্বর কুমার এবং পেস আক্রমণের প্রধান অস্ত্র জাসপ্রিত বুমরাহও ইনজুরির কারনে এই সিরিজে নেই, তবে যাদেরকে টিম ম্যানেজমেন্ট এই সিরিজে রেখেছেন তারা আইপিএল এর মতো টি-টুয়েন্টি আসরের পরীক্ষিত ক্রিকেটার। এই ফরম্যাটের মেজাজটা রেখেছেন তুঙ্গে। শুধু নেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা। যার খেসারত গতকাল ম্যাচ হেরে দিয়েছেন।
তবে চোখ বুলালে দেখা যাবে তারা প্রতেক্যেই ভারতের জন্য ভবিষ্যতের নিয়মিত একাদশের সদস্য হতে যাচ্ছেন । সবে তো আন্তর্জাতিক আঙিনায় পদার্পণ। সঞ্জু স্যামসন (১ ম্যাচ), শ্রেয়স আইয়ার (৯ ম্যাচ),ওয়াশিংটন সুন্দর (১৩ ম্যাচ), ক্রুনাল পাণ্ডিয়া (১৭ ম্যাচ), রাহুল চাহার (১ ম্যাচ), দীপক চাহার (৫ ম্যাচ), খলিল আহমেদ (১২ ম্যাচ), শিবম দুবে (গতকাল অভিষেক), শার্দুল ঠাকুর ((৭ ম্যাচ) এরাই আগামীর ভারত দলের নিয়মিত মুখ। এমনকি আসন্ন বিশ্বকাপেও এদের থেকেই বেশ কয়েকজনকে ভারতীয় স্কোয়াডে দেখা যাবে নিশিত ভাবেই বলা যায়।
অপরদিকে বাংলাদেশেরও একই অবস্থা। তামিম ইকবাল নেই, নেই অধিনায়ক ও প্রধান অস্ত্র সাকিব আল হাসান। অভিজ্ঞ বলতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম। অনেকেই বলবে মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকারও দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে আছে। তবে বাকিদের দিকে তাকান। নাইম শেখ (গতকাল অভিষেক করল), আফিফ হোসেন (৬ ম্যাচ), মোসাদ্দেক হোসেন ( ১৩ ম্যাচ),আবু হায়দার রনি (১৩ ম্যাচ), আল-আমিন (তিন বছর পর দলে),আমিনুল ইসলাম বিপ্লব (২ ম্যাচ)।সুতরাং আমাদের পাইপলাইনের জন্যও নিজেদের পরখ করার মিশন। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপে আমাদের দলটাও নিশ্চিত ভাবে বলা যায় তারুণ্য নির্ভরই হতে যাচ্ছে।
সুতরাং অবলীলায় বলা যায় এই সিরিজটি দুই দলের জন্যই তাদের পাইপলাইন দেখার অগ্নিপরীক্ষা। তবে আশার কথা হচ্ছে এই অগ্নিপরীক্ষার প্রথম দেখায় জিতল বাংলাদেশ, এখনও দুই ম্যাচ বাকি আছে,আগামী ৭ নভেম্বর গুজরাটের রাজকোটে যদি রোহিত শর্মার ভারতকে মাহমুদউল্লাহর বাংলাদেশ আরেকটি পরাজয়ের স্বাদ দিতে পারে তবেই প্রমাণ মিলবে বাংলাদেশের পাইপলাইনের সক্ষমতা কতটুকু! কেননা ভারতকে ভারতের মাটিতে হারিয়ে সিরিজ জয়, সেটা হবে নিশ্চিতভাবে অবিস্মরণীয় এক জয়।
লেখক- মোঃ আসাদুজ্জামান ( গণমাধ্যমকর্মী )