ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩ হাজার ৬৩১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৩ হাজার ৬৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।
নগর ভবনে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ সম্মেলন কক্ষে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন আজ রবিবার এ বাজেট ঘোষণা করেন।
গত অর্থবছর ডিএসসিসি’র বাজেট ছিল ৩ হাজার ৫৯৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সে তুলনায় এবার ৩২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বেশি বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে রাজস্ব বাবদ আয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৯৭২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
এবার দেশে এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রবণতা বেশি থাকায় মশক নিয়ন্ত্রণে বিগত যেকোন অর্থবছরের তুলনায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এবারের বাজেটে এই খাতে ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে এবং চলতি সপ্তাহে এই অবস্থার আরও উন্নয়ন ঘটবে। তবে মশক নিধন কার্যক্রম সারা বছর চলমান থাকবে।
মশক নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন ৫ বছর মেয়াদী একটি বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর আওতায় জনবল বৃদ্ধি করে ‘কমিউনিক্যাবল ডিজিস এন্ড রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট’ নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করা হবে।
মেয়র বলেন, ঢাকা এখন উন্নয়নের স্রোতধারায় বদলে যাওয়া নগরী। অনেকেই আলোকিত এই সিটি দেখতে আসেন।
মেয়র তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে নিজস্ব আয়ের অন্যতম খাত বাজার সেলামী। বাজার সেলামি বাবদ আয় ধরা হয়েছে ৩১০ কোটি টাকা ও বাজার ভাড়া বাবদ ৩৫ কোটি টাকা, ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ৯০ কোটি টাকা, এবং সম্পত্তি হস্তান্তর বাবদ ১০৫ কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এছাড়া রাস্তা খনন ফি বাবদ ৩০ কোটি টাকা, অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা বাবদ ১০ কোটি টাকা, বাস-ট্রাক টার্মিনাল থেকে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যন্ত্রপাতি ভাড়া বাবদ ১০ কোটি টাকা, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া বাবদ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বিজ্ঞাপন কর বাবদ ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ক্ষতিপূরণ (অকট্রয়) বাবদ ১ কোটি টাকা এবং পেট্রোল পাম্প বাবদ ২ কোটি টাকা, বিভিন্ন ফরম বিক্রি বাবদ ২ কোটি টাকা, কবরস্থান ও শ্মশানঘাট থেকে ৪০ লাখ টাকা, ইজারা (টয়লেট, পার্কিং, কাঁচাবাজার) বাবদ ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, প্রমোদ কর (সিনেমা) ৪৫ লাখ টাকা, কর (হোল্ডিং, পরিচ্ছন্ন, লাইর্টিং) বাবদ ৩৫০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ভাড়া বাবদ ৩ কোটি আয় হবে বলে মেয়র আশা প্রকাশ করেন।
মেয়র জানান, সরকারি মঞ্জুরি (থোক) খাতে ৫০ কোটি ও সরকারি বিশেষ মঞ্জুরী (থোক) বাবদ ৭৫ কোটি টাকা এবং সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প খাতে ২ হাজার ৩২৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা সাহায্য হিসেবে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের ব্যয়ের খাতগুলো উল্লেখ করে সাঈদ খোকন বলেন, ব্যয়ের খাতগুলো হলো- বেতন ভাতা বাবদ ৩৫০ কোটি টাকা, জ্বালানি, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে ৭৯ কোটি টাকা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৩৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাবদ ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ভাড়া, রেটস ও কর খাতে ৭ কোটি টাকা, সরবরাহ বাবদ ৩৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
কল্যাণমূলক ব্যয় খাতে ৪৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা খাতে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ভ্রমণ ও যাতায়াত খাতে ৫ লাখ টাকা, ডাক, তার ও দূরালাপনী খাতে ২০ লাখ টাকা, আতিথেয়তা খাতে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ফিস বাবদ ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সংস্থার চাঁদা বাবদ ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা, বীমা খাতে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগ বাবদ ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, উচ্ছেদ কার্যক্রমে ২০ লাখ টাকা এবং বিবিধ খাতে ১০ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জানান।
বাজেট ঘোষণার সময় সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।