২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত পঙ্গুত্ব রবন কারী রব শাহের পরিবার দেখার কেউ নেই।

PicsArt_08-24-11.16.23.jpg

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত পঙ্গুত্ব রবন কারী রব শাহের পরিবার দেখার কেউ নেই।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত পঙ্গুত্ব রবনকারী রব শাহের পরিবার দেখার কেউ নেই।

স্প্লিন্টারের যন্ত্রনায় এখনো কাতরাচেছন রব শাহ।। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা।।

নিকুঞ্জ বালা পলাশ : ২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলায় নিহত ও আহদের পরিবার সরকারী কোটি কোটি টাকার সহায়তা পেলেও সকল সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের বাসিন্দা বর শাহ ও তার পুত্র খোকন শাহ। গ্রেনেড হামলায় ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন তিনি। অসহায় ও অসচ্ছল পরিবার হওয়ার জোটেনি তার উন্নত চিকিৎসা।

এখনো মাঝে মধ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থান পেকে ফুলে অসুস্থ্য হয়ে পরেন তিনি। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ইতিমধ্যে তার শরীর থেকে বের করেছে ৫-৭টি প্লিন্টার। আয় রোজগার না থাকায় গ্রেনেডের আঘাতে পঙ্গুত্ব বরনকারী বর শাহের পরিবারে একটুকুও শান্তি নেই। একটু ভালো থাকার আশায় বুক আশা নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন তিনি। গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরনকারী রব শাহর চোখে মুখে এখন অনিশ্চয়তার ছাপ। চিকিৎসার অভাবে মাঝে মধ্যে অসুস্থ্য হয়ে পরছেন তিনি। দু ছেলে বেকার ও কর্মহীন জীবন জাপন করায় আগামি দিনগুলো কি করে চলবে এ নিয়ে নির্ঘূম রাত কাটে তার।



খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উজিরপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল সাতলা গ্রামের বাসিন্দা রব শাহ। আয় রোজগান না থাকায় স্ত্রী-সন্তানসহ ৮ সদস্যের পরিবারকে নিয়ে কোন ভাবেই তার সংসার চলছিলো না। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটু ভালো থাকার আশায় অজোপাড়া গাঁ থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে প্রায় ২০ বছর আছে ঢাকায় পাড়ি জমিয়ে ছিলেন তিনি। নিজে রাজ মিস্ত্রি কাজ করে যা রোজগার করতেন এবং বড় ছেলে আচার ও চানাচুর বিক্রি করে যা আয় হতো তা দিয়ে ভালো ভাবেই চলছিলো রব শাহের পরিবার।

২০০৪ সালের একুশে আগস্ট। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় ভাষন দিবেন এমন খবর পান রব শাহ। টুঙ্গিপাড়ার পাশ্বর্তি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শেষ প্রান্ত সাতলা গ্রামের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, নৌকা ও শেখ হাসিনার প্রতি হৃদয়ের টান ছিলো তার। ওই সময় মীরপুর ১৩ নম্বর বস্তি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বড় ছেলে খোকন শাহকে নিয়ে ২১ আগস্ট ছুটে গিয়েছিলেন জন নেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায়।

শেখ হাসিনার ভাষন শুরুর পর নানান স্লোগান দিতে থাকেন রব শাহ ও তার পূত্র খোকন শাহ। কিছুক্ষন পরই মূহুর মূহুন গ্রেনেড হামলার আঘাতে সব কিছু ম্লান হয়ে যায়। থেমে যায় স্লোগান। গ্রেনেটের স্প্লিন্টারের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয় রব শাহের পুরো শরীর। জ্ঞান হারিয়ে সমাবেশস্থলেই পরে থাকেন রব শাহ। বড় ছেলে চোখে আঘাত পেয়ে বাবা রব শাহের পাশে বশেই বিলাপ করছে। স্থানীয় লোকজন রব শাহকে উদ্ধার করে ভর্তি করেন পঙ্গু হাসপাতালে। তিন দিন পর ফিরে তার জ্ঞান।

প্রায় ৩ মাস চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান রব শাহ। গ্রামের অসহায় দরিদ্র হওয়ার কারনে একটু ভালো চিকিৎসা জোটেনি তার কপালে। গ্রেনেড হামলায় পঙ্গুত্ব বরন করায় পরিবার নিয়ে ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। ম্লান হয়ে যায় একটি পরিবারের স্বপ্ন। এখনো তার শরীরে লুকিয়ে আছে গ্রেনেডের ছোট ছোট স্প্লিন্টার। মাঝে মধ্যে পেকে ফুলে মন্ত্রনা হলে টাকার অভাবে চিকিৎসার জন্য ছুটে যান পল্লী চিকিৎসকের কাছে।

পল্লী চিকিৎসক যে ওষুধ দেন তা খেয়েই সুস্থ্য হবার স্বপ্ন দেখেন রব শাহ। তবে এখনো শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে ও পেকে পুজ হওয়ার কারনে মাঝে মধ্যে পচন্ড যন্ত্রনায় কাতরাতে হয় তাকে।

এ বিষয়ে সাতলা গ্রাামের পল্লী চিকিৎসক ডা : জগদীশ চন্দ্র জানান, গ্রেনেড হামলায় আহত রব শাহ মাঝে মধ্যে অসুস্থ্য হয়ে তার চিকিৎসা সেবা নিচেছন। রব শাহের শরীর থেকে ৫-৭ টি স্প্লিন্টার বের করা হয়েছে। এখনো তার শরীরে স্প্লিন্টার রয়েছে। যখন ওই সব স্থানে পেকে যায় তখন তিনি তার কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। যতদুর সম্ভব কম টাকায় চিকিৎসা সেবা দেন তিনি।


এ বিষয়ে আহত ও পঙ্গুত্ব বরনকারী রব শাহ জানান, তিনি কারো কাছ থেকে কোন সহায়তা পাননি। কেউ তার পাশে এগিয়ে আসেনি। এখন তিনি চেয়ে আছেন জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকে। তিনি যদি সদয় হন তবে তার অবস্থার উন্নতি হতে পারে। হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসা সহ তার এবং পরিবারের দ্বায়িত্ব নিবেন বলে আশাবাদী রব শাহ।

তিনি বলেন, আমি গ্রামের অশিক্ষিত মানুষ। তবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ছিলো তার অনেক শ্রদ্ধা ও মনের টান। এ কারনেই তিনি সারা জীবন আওয়ামী লীগেরই একজন সমর্থক।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জনসভার খবর শুনে মীরপুরের ১৩ নম্বরের বস্তি এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সমাবেশে গিয়েছিলাম। আমি আহত হওয়ার পর তারাই আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন। আমাকে তারা রক্ত দিয়েছেন। ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য তখন তারা কিছুটা আর্থিক সাহায্যও করেছেন। তবে আমি সুস্থ্য হবার পর গ্রামে চলে আসি। তাই কারো সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে আমার গ্রামের সবাই বিষয়টি জানেন। তারা ভেবেছিলো আমি হয়তো মারা গেছি। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এখনও পঙ্গু হয়ে বেচে আছি।



উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় বাসিন্দা খায়রুল বাশার লিটন বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে গ্রেনেড হামলায় আহত রব শাহের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার ভার নিবেন বলে প্রত্যশা তাদের। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক রব শাহের উন্নত চিকিৎসা ও তার অসচ্ছল পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে এমন দাবী এখন এলাকার সর্ব মহলের।

বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দেখবেন এমন প্রত্যাশা সাতলা ইউনিয়ন বাসীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top