কাগজের পত্রিকার দিন কি শেষ – সাগর চৌধুরী।

20190701_134839.jpg

কাগজের পত্রিকার দিন কি শেষ – সাগর চৌধুরী।

সাগর চৌধুরীঃ বাংলাদেশে আগের মত এখন আর কেউ কাগজের পত্রিকা পড়ে না! কারন কি? কারন কি? এমন হাজারো প্রশ্নের মাঝে বেশ কয়েক দিন বুদ হয়ে ডুবে রইলাম। কারণ কি! কাগজের পত্রিকা পড়ছে না কেন মানুষ?

সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পর, পত্রিকা পড়ার জন্য লম্বা সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করার লোকের অভাব অন্য দেশে হলেও আর যাই হোক আমাদের দেশে ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের গবেষণা! কাগজে পত্রিকা পড়ছে না মানুষ। দিন দিন এর কাটতি নিম্মগতি। সাম্প্রতিক সময়ে এই গতি একদম তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। চলতি বছরে সরকারের নবম ওয়েজ বোর্ড গঠনের দাবিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা আন্দোলনে নামে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণমাধ্যমের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন দফায় দফায় মিটিং, মিছিল এবং মানব বন্ধন এর মত কঠোর অবস্থান নেয়। যার ফলে সরকার বাধ্য হয় নবম ওয়েজ বোর্ড গঠনের কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকগণ এক বিবৃতির মাধ্যমে জানায়, কাগজের পত্রিকা বিক্রি এখন তলানীতে!

জেলা শহর বা রাজধানী শহরের কোন ফুটপাতেই পত্রিকা হকারদের আর সহজে দেখা মেলে না।যদিও গতকয়েক বছর আগে শহরের ফুটপাতগুলোর দখলে থাকত পত্রিকার হকার।বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, লঞ্চ ঘাট সহ সব খানেই এক সময় পত্রিকা হকারদের আনাগোনা ছিল। কিন্তু কোথাও আর আগের মত পত্রিকা হকারদের দেখা মেলে না। কিন্তু কেন? সাম্প্রতিক সময়ের দিনগুলোতে আপনারা কি কখনো কেউ দেখেছেন পত্রিকার হকারি করতে কাউকে? গত কয়েক বছরে এমন চিত্র আমার চোখে পড়েনি। সামনের দিনগুলোতে আর পরবে কি না জানি না।

স্কুল এবং কলেজ জীবনে সংবাদপত্র নামে রচনা অথবা প্রবন্ধ যদি কেউ পড়ে না থাকেন আমি মনে করি আপনার শিক্ষা জীবন ব্যর্থ। সেই সাথে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সিলেবাসে অবশ্য পাঠ্য ছিল সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম।

ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতে প্রথম সংবাদপত্রের সূচনা হয় ১৭৮০ সালে। জেমস অগাস্টাস হিকি নামের এক ইংরেজ ভদ্রলোক ভারতীয় উপমহাদেশে সর্ব প্রথম “বেঙ্গল গেজেট” নামে একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করে। গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ও হরচন্দ্র রায় মিলে “বাঙ্গাল গেজেট” পত্রিকা প্রকাশ করে ১৮১৬ সালে। ১৮১৮ সালে শ্রীরামপুর মিশন থেকে ‘দিগদর্শন’ ও ‘সমাচার দর্পন’ প্রকাশিত হয়। তারও বেশ কয়েক বছর পর ১৯২২-এ মৃণালকান্তি ঘোষ, প্রফুল্ল কুমার সরকার ও সুরেশ চন্দ্র সরকার মিলিত ভাবে প্রকাশ করে,”আনন্দবাজার পত্রিকা”। এরও বেশ কয়েক বছর পরে বাঙালী মুসলমানদের হাতে পুণাঙ্গ পত্রিকা ‘দৈনিক আজাদ’ ১৯৩৬ সালের ৩১ অক্টোবর প্রকাশ পায়। এরপর এই উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের মানুষের সামনে প্রতি বছর বছর বা কয়েক বছর অন্তর অন্তর নতুন নতুন গণমাধ্যম বা কাগজের পত্রিকা আসতে থাকে।

বাংলা পত্রিকা বিকাশের ক্ষেত্রে স্মরণীয়-বরণীয় অনেক ব্যক্তিত্বের নাম চলে আসলেও মাওলানা আকরাম হোসেন ছিলেন এক্ষেত্রে বরপুত্র। বাংলা পত্রিকা বিকাশে দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা ও অপরিসীম।

ভারতীয় উপমহাদেশে দুশো বছরেরও বেশী সময়ের কাগজের পত্রিকার ইতিহাসে গণমাধ্যমে এমন কি আর কখনো হয়েছে? আমার এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো অভিজ্ঞজনেরা দিতে পারবেন, যারা এর আগেও বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে বাংলা কাগজের পত্রিকা নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা এবং গবেষণা করেছেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এদেশে প্রকাশিত হয়েছে। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি কাগজের পত্রিকা সুনামের সাথে প্রকাশিত হয়েছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে গেছে অনেকগুলো পত্রিকা কিন্তু গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান খুঁজে জানা যায়, প্রথম সারির কিছু কাগজের পত্রিকা টিকে থাকলেও মধ্য ও নিম্ন মধ্যম সারির পত্রিকাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। কোন ভাবে পাঠক ধরে রাখতে পারছে না।


বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তথা কাগজের পত্রিকার ইতিহাসে এটি একটি বিরল মাইলফলক। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সবকিছু কি এগিয়ে যেতে পারছে। কিছুতেই যেন আর এগুতে পারছে না বাংলাদেশের কাগজের পত্রিকাগুলো। ইতোমধ্যে অনেক পত্রিকাযর মালিকপক্ষ লস দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন তাদের পত্রিকা। বন্ধ হবার পথে আরো অনেক পত্রিকা।

গন মাধ্যমের এমন সময়ে আসলেই আমাদের কি করা উচিত? কিভাবে পাঠক ফিরে আসবে কাগজের পত্রিকায়? কীভাবেই বা মুখর হয়ে উঠবে পত্রিকার হকারেরা। কিভাবেই বা লোকসানের মুখ থেকে মালিকপক্ষ দেখবে লাভের মুখ। এসব নিয়ে কেউ কি ভাবছেন?

শত শত বছরের কাগজের পত্রিকার ইতিহাসে সত্যিই অন্ধকার নেমে এল যেন। বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে কিছু তথ্য দিলেও এর থেকে কিভাবে ফিরে আসা যায়? এমন তথ্য কেউ দিতে পারছেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top