ছেলেবেলায় হারানো ইদগুলো – সাগর চৌধুরী।।
সাগর চৌধুরী।।
মুসলমানদের যতগুলো ধর্মীয় উৎসব আছে সেগুলোর মধ্যে ইদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ইদের অপেক্ষা করে প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী।
মুসলিম জাহানে, পবিত্র ইদুল আযহা এবং ইদুল ফিতর দু’টি ইদ মুসলমানদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে মহানবী’র সময়কাল থেকে পালন হয়ে আসছে। ইদের দিনের নামাজ এবং ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সকলের সাথে কোলাকুলি ও একে অপরের খুব কাছাকাছি আসার সুযোগ থাকায় সকলের সাথে সকলের মেলবন্ধন হয় ।
ছেলেবেলায় মুসলমান ছেলেমেয়েরা সবাই মসজিদে যায়। কারণ অনেক মুসলমান অভিভাবক ধর্মীয় শিক্ষা দিতে ছোটবেলা থেকেই মসজিদে ভর্তি করেন শিশুদের। মুসলিম বিশ্বে মসজিদের গুরুত্ব অপরিসীম। সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় কাল থেকেই মসজিদ হলো মুসলামদের শিক্ষার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান।
দাদার সাথে, বাবার সাথে, চাচাদের সাথে, ভাইদের সাথে, বন্ধুদের সাথে, ক্লাসমেটদের সাথে, কলিগদের সাথে, এবং নিজের ঔরসজাত সন্তানের সাথে। কোন কোন মুসলিম দেশে মায়ের সাথে, দাদীর সাথে, ফুফুদের সাথে, বোনদের সাথে, কলিগদের সাথে, নিজের মেয়ের সাথে মসজিদে যায়।
তাই প্রত্যেক মুসলমান মসজিদের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। সবচেয়ে পবিত্র ঘড় হিসাবে এর মূল্য তাদের অপরিসীম। তবে সবার জীবনে মসজিদ নিয়ে সুখস্মৃতি না ও হতে পারে। কারণ সবাই ইসলাম বিষয়ে সঠিক ভাবে অনুধাবন করেন না।
নিজের এলাকায় ইদের দিন ইদ গায় নামাজ পড়তে যাওয়ার পর পুরনো এক বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে সবাই জানতে চায়, কেমন আছিস? নামাজ শুরু হওয়ার আগেই কত চেনা মুখগুলো ভাসে চোখের কাছে। তাদের একেক জনের একেক রকম পরিচয়। স্কুলবেলার বন্ধুকে পেলে মনটা কেমন প্রসস্থ হয়ে যায়। কারো কারো জীবনে এমন ঘটনা না ঘটলেও ঘটে মধুর অন্য কোন স্মৃতি।
ইদের বাজারের জামা জুতা কিনে বিড়ম্বনায় পড়েনি এমন মুসলমানও পাওয়া দুস্কর। ছেলেবেলায় নতুন জামা কিনে বা নতুন কাপড় কিনে ইদের প্রস্তুতি নেওয়ার আনন্দটাই কেমন বিস্ময়কর। ছোটবেলায় ইদের দিন আগের রাতে, সারারাত ঘুম হারাম হয় নি এমন কেউ আছে? মুসলমানদের ইদ মানেই তো অনন্দ। সকাল হলেই ইদ। কি এক বিস্ময় আনন্দ সবার মনে!
রমজানের পুরো মাস কত রকমের আয়োজন করে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ। পরিবারের বড়রা রোজা থাকে। রোজায় ছোটরাও কেমন তটস্থ! খাবারের সময় কেমন লুকিয়ে লুকিয়ে খাওয়া। কেউ দেখে ফেলার ভয়। আবার রোজাদার বড়দের সামনে না খাওয়া। রোজাদারদের বিরক্তিকর বিষয় থেকে দূড়ে থাকা।
পরিবারের ভাইবোনের সঙ্গে মিলে ইফতারের আয়োজনে পানির জগ-গ্লাস, খাবারের প্লেট, টেবিল চামস সাজানো আরও কত কি! ইফতারের আগে আযানের জন্য অপেক্ষা! সবার চোখে মুখে কেমন গাড়ো বিস্ময়ের আভা।
বাবা-মা, দাদা-দাদী, চাচা-চাচি, ফুপা-ফুপু, ভাইবোনদের সাথে ইফতার করা কত মধুর স্মৃতি।
রমজান মাসে ছেলেবেলার এমন সুখস্মৃতি প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর আছে। কারণ মুসলমান সমাজে বা মুসলিম বিশ্বে পরিবারের সাথে একত্রে রোজা রাখা, ইফতার করা এবং রোজা শেষে সবার সাথে ইদ করা, বহুকাল আগে থেকেই হয়ে আসছে।
কৈশোরের রোজা এবং ইদ স্মৃতি কিছুটা দায়িত্বেরও মনে হয়। ভাইবোনদের মধ্যে ছোটদের মাঝেও সে দায়িত্ব কেমন অটুট। রোজার দিনে ছোট ছোট ভাইবোনদের সাথে ভালো আচার-আচরণ করা, তাদের দিকে বিশেষ নজর রাখাও অনেক বড় দায়িত্ব। বাবা-মা রমজানে রোজা রেখে কেমন হাফিয়ে ওঠেন। ইফতারের পরপরই তারা আবার প্রস্তুত হয় মাগরিবের নামাজের জন্য। এই সময়ে বাবা-মায়ের সাহায্যে এগিয়ে আসাও অনেক বড় দায়িত্ব।
রোজার দিনে রোজাদার বড়রা রোজা রেখে কেমন যেন একটু কড়া মেজাজের হয়ে যায়। রোজা রেখে সাধারণ সময়ের চেয়ে কেমন যেন একটু বেশী আলাদা মনে হয় বড়দের। ক্লান্ত আর বিরক্তিকর বিষয়ে তারা খুবই মেজাজ দেখায়।
ছেলেবেলার রোজা এবং ইদ অনেক মধুর স্মৃতি’র। ছেলেবেলার ইদ থাকে স্বপ্নের রঙ্গীন আভাসে। ইদ যেন সবার জীবনে ফিরে ফিরে আসে। কখনো সখনো পরিবার ছেড়ে দূড়ে কোথাও ইদ করলে, মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে যায়। কাছের মানুষ, পাশের মানুষ, মনের মানুষ কত মানুষের স্মৃতি মনে উকি দেয়।
তার পরও সারাবিশ্বে মুসলমাদের ইদ ফিরে ফিরে আসে কিন্তু ফিরে আসেনা, সেই হারানো ইদগুলো, সেই না পাওয়া ইদগুলো, স্বপ্ন বোনা ছেলেবেলায় হারানো সেই ইদগুলো।