তেতুলিয়ার কবি মোঃ আঃ কুদদূস এর কবিতা”বিদায়”।

Uno.1.jpg

বিদায়
মোঃ আঃ কুদদূস

আজকে বিদায় নেয়ার সময় সমাগত, তাই বিদায় আমাকে নিতেই হবে।
কৃষ্ণচূড়ার মায়াবী ছায়া হতে, চলে যেতে হবে, ঝোলা কাঁধে নিয়ে, রিক্ত হাতে- শূন্য হৃদয়ে।
সত্যিই চলে যেতে হবে যুধিষ্ঠির তরী বেয়ে বেয়ে, দৃষ্টি সীমানার বাইরে, কল্পলোকে।
আমার এই চলে যাওয়া সময়ের প্রয়োজনে, বিরহ কিংবা বিচ্ছেদের কোন অস্ফুট যন্ত্রণায় নয়।
এই নগন্য খড়কুটোর আঁকড়ে থাকার মত কি ই বা আছে এই পঞ্চবটির তটে?
আমি চলে যাব, চলে যাব, ঝারুল বনের নীলাভ বর্ণের, মায়া কাননের অভিবাদনকে বিসর্জন দিয়ে।
আগুনমুখোর তীর ঘেষে, আগুন ঝড়া ফাগুনে, কৃষ্ণচূড়ার আগুন বনের মায়া ত্যাগ করে।
কোকিলের কুহুতানই হোক কিংবা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক,
প্রকৃতির এই সুর-ছন্দকে ছাড়তেই হবে আজ।
এখানে রাতের চাঁদ কতই না মিষ্টি আলো ছড়ায়! তবুও সেই রূপালী আলো কে ছেড়ে যাওয়া বড় দরকার।
সারা রাত কত শত ফুলের মনমাতানো সৌরভ! তবুও এখানের অনিবার্য সখ্যতার সময় শেষ।
সুনীল আকাশের বুক জুড়ে থাকা সূর্য ধরে রাখতে পারবে না সুবর্ণ দিনের প্রত্যাশাকে।
কারণ, আজ চলে যাওয়া বড় প্রয়োজন। সত্যিই আমার বড্ড প্রয়োজন।
সুশীতল বাতাস, সুনীল আকাশ, দিগন্ত জোড়া সমুদ্র,
নদীর কুলোকুলো শব্দ, নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়, গোধূলির আঁধার, পাখির মায়াবী ডাক, নোনা মাছের স্বাদ, নিরব বন বনানী, থরেথরে সাজানো সবুজের হাতছানি- বড়ই আমাকে টানে।
তবুও আমাকে ছুটতেই হবে অবিরাম গতিতে।
আচ্ছা, যদি চলে যাই সন্ধ্যার সারথি হয়ে, সন্ধ্যা রাগের আগে, মসজিদ-মন্দিরের গোধূলি আহ্বানের অসীম অনুরাগকে পিছনে ফেলে,গাঁঢ় কালো রাতের অাঁধারের অফুরন্ত ভালোবাসায়- তাতে কি কারো ভাল লাগবে না?
এক পশলা বৃষ্টির মত আমাকে চলে গিয়ে নিঃশেষ হতে হবে অপরের অপার বন্দনায়, ভালোবাসার মজবুত পিরামিডে।
আবার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে, ধান -পাটের ক্ষেতে, শাপলা শালুকের টানে, শত মায়া শত প্রাণে, হারিয়ে আনন্দলোকে, ছুটি নিব অনন্তকালে।
এই ছুটি আজই আমাকে নিতে হচ্ছে সময়ের বড় প্রয়োজনে।
এই ভূবনের কিছুই রইবে না চিরকাল। সবাইকে চলে যেতে হবে, আমার মত করে, প্রয়োজনে অথবা নিস্প্রয়োজনে।
তাহলে চললাম ছুটে, সব বাধা টুটে, সেই দূরে, বাঁকা পথ ঘুরে, আলো অভিসারে, ভুলিয়া আমারে।
শুধু সময়ের প্রয়োজনে,
পুস্প মল্লিকা বনে, বড়ই প্রয়োজনে।

২১ জুলাই ২০১৮
অমিল মুক্তক ছন্দ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top