ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর রিফাত আরা এর বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ ও অসদাচরণের অভিযোগ

Picsart_23-09-16_10-13-21-032.jpg

ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর রিফাত আরা এর বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ ও অসদাচরণের অভিযোগ

অপরাধ প্রতিবেদকঃ অর্থ আত্মসাৎ, কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণসহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর রিফাত আরা।

ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইনের টাকা আত্মসাৎ ও স্বাস্থ্য সহকারীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে।

এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হয়রানি, অশালীন কথাবার্তা ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী দাবি করা লোকজন।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের একটি কপি গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। অভিযোগটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ডাকযোগে পাঠানো হয়।

কী আছে অভিযোগে

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক বরাবর আবেদনটিতে উপজেলার সিএইচসিপি, স্বাস্থ্য সহকারী ও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এএইচআই) নাজমুন নাহার।

আবেদনটির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন), ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ও ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছেও।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীগণ আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ধামরাই, ঢাকাতে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছি। ধামরাই উপজেলাটির আয়তন প্রায় ৩০৭ বর্গ কিলোমিটার এবং ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। বর্তমানে এই উপজেলায় প্রায় ৬ লক্ষ জনসংখ্যার বসবাস। উপজেলায় ৪৮ জন স্বাস্থ্য সহকারীর পদ থাকলেও সিংহভাগ পদ শূন্য রয়েছে। উক্ত পদে জনবল রয়েছে মাত্র ২০ জন। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে ১৬ জনের পদ থাকলেও রয়েছে মাত্র আটজন। স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে চারজনের পদ থাকলেও বর্তমানে পদসমূহ শূন্য রয়েছে।

‘মাঠ পর্যায়ে সিংহভাগ পদ শূন্য থাকলেও বহু প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা স্বল্পসংখ্যক কর্মী সরকারি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে আসছি। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, দীর্ঘদিন যাবৎ স্বাস্থ্য সহকারীগণ নিজ ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অপর আরেকটি ওয়ার্ডেও দায়িত্ব পালন করছি।’

অভিযোগে বলা হয়, ‘এ অবস্থায় ডা. নুর রিফাত আরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি কর্মচারীদের সঙ্গে অসন্তোষজনক আচরণ করে আসছেন। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পরও তার আচরণগত পরিবর্তন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তার দুর্নীতি ও অসদাচরণের কিছু তথ্য উল্লেখ করলাম।

‘সেগুলো হলো- বিভিন্ন পর্যায়ে কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইনের টাকা আত্মসাৎ, মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের সঙ্গে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বাক্য ব্যবহারে অপমানিত করা, প্রাপ্য অর্থ দাবি করলে চাকরি হারানোর ভয় দেখানো, নগণ্য কারণে অযাচিতভাবে কৈফিয়ত তলব করে হয়রানি করা ও মহিলা সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণ দ্বারা চরিত্র হনন করার চেষ্টা করে মানসিক নির্যাতন করেন।

অভিযোগের বিষয়ে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমাদের আচার-আচরণ ও কর্মদক্ষতা সম্পর্কে ফিল্ডে গেলেই স্থানীয়দের কাছে জানতে পারবেন। আর আমরা ফিল্ডে যাই কি না, সেটা উনি (স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) জানবেন কীভাবে? উনি নিজেই তো ফিল্ডে যান না কখনও।

‘এখানে আমরা ৭২ জন স্বাক্ষর করেছি। নাম, পদবি ও মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রত্যেকটি লোক জেনে-বুঝে দেখে স্বাক্ষর করেছি। উনি (স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) বাঁচার জন্য এখন এসব বানাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময় উনি অশালীন ভাষা ব্যবহার করে আমাদের হেয় করেছেন। অনেক সময় মিটিংয়ে আমাদের ‘গরু-ছাগল’ বলে সম্বোধন করতেন। একবার এমপি সাহেবের প্রোগ্রামে আমরা বেলুন ফোলাইনি দেখে অকথ্য ভাষায় কথা বলেছেন। এমপি সাহেবকে জড়িয়ে আমাদের চরিত্র হনন করেছেন। এমনকি আমাদের স্বামীদের ডিভোর্স দেয়ার মতো অশালীন মন্তব্য শুনতে হয় আমাদের।

“এরপর গত ১২ জুলাই সচিব মহোদয় পরিদর্শনে আসলে সেখানেও তাকে জড়িয়ে আমাদের রাত কাটানোর মতো নোংরা মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন সময় আমাদের চাকরিচ্যুত করারও হুমকি দেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর রিফাত আরা।”

আক্ষেপ করে নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমরাও মানুষ। আমরা ছোট চাকরি করি দেখে কি কোনো মানসম্মান নেই আমাদের? একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এভাবে কথা বলতে পারেন না। উনি আমাদের অভিভাবক। উনার কাছ থেকেই আমরা শিখব।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) উনি আমাদের ৪৮ জন সিএইচসিপিকে ফিল্ডের কাজ রেখে তার পার্সোনাল (ব্যক্তিগত) কাজের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেকে আনেন। এতে ফিল্ড পর্যায়ে সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য সহকারী আবু হান্নান বলেন, ‘আমরা সজ্ঞানে ওখানে স্বাক্ষর করেছি। মাঠকর্মীদের কোন দিয়ে গিয়ে উনি পান নাই, সেটা স্পেসিফিক বলতে পারবেন না উনি (স্বাস্থ্য কর্মকর্তা)। পুরোটাই উনি মিথ্যা বলছেন।’

তিনি বলেন, ‘মাসে ৫-১০ টা প্রোগ্রাম হলেও উনি ছয় কিংবা তিন মাসে একবার গিয়েছেন ভিজিটে। এমনও আছে, উনি বছরে একবার মাত্র গিয়েছেন। এর প্রমাণ পরিদর্শন বইয়ে আছে।’

সিএইচসিপি মাসুদ রানা জানান, ‘উনার (স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) অসদাচরণে আমরা মাঠকর্মীরা সবাই অতিষ্ঠ। এ কারণেই সুরাহা পেতে সবাই জেনে-বুঝে স্বাক্ষর করেছি।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা গণমাধ্যমে বলেন, ‘মূল অভিযোগটা আমার কাছে আসেনি। ওটা ডিজি মহোদয়ের কাছে গেছে জেনেছি। আমার কাছে একটা কপি এসেছে মাত্র।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তার তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খানও বলেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘যেহেতু অভিযোগটি মহাপরিচালক বরাবর করা হয়েছে, এটার এখতিয়ার আমার নয়। সিদ্ধান্তের বিষয়টিও মহাপরিচালকের ব্যাপার।’

আরও সংবাদ পড়ুন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ জালিয়াতি – নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিচালকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আরও সংবাদ পড়ুন।

সারাদেশে ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযানের নির্দেশ হাইকোর্টের

আরও সংবাদ পড়ুন।

ডাক্তারা শুধু টাকা কামাতেই ব্যস্ত – শেখ হাসিনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top