জনতা ব্যাংকে ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকার অনিয়ম

Picsart_23-07-02_21-41-15-151.jpg

জনতা ব্যাংকে ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকার অনিয়ম

অপরাধ প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের প্রায় আড়াই মাস ধরে চলা অডিটে দেখা গেছে, এই অনাদায়ী অর্থের ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ রয়েছে জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত অ্যাননটেক্স গ্রুপের।

বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের প্রায় আড়াই মাস ধরে চলা অডিটে দেখা গেছে, এই অনাদায়ী অর্থের ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ রয়েছে জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত অ্যাননটেক্স গ্রুপের।

গত সপ্তাহে সংসদে উপস্থাপিত অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় গুরুতর দুর্বলতা এবং নিয়ম-কানুন মেনে না চলার বিষয়টি ধরা পড়েছে।

এসব অনিয়মের মধ্যে আছে—ঋণ অনুমোদন ও আদায়ের শর্তাবলী না মানা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের (বিআরপিডি) বিজ্ঞপ্তি, ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইন ও ব্যাংকের নিজস্ব ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ঋণ অনুমোদন নীতিমালা যথাযথভাবে মেনে না চলা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সই করা সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) পারফরমেন্স উন্নতির জন্য সম্মত হওয়া শর্তাবলী বা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্য নীতিমালাও জনতা ব্যাংকে অনুসরণ করা হয়নি।

ব্যাংকটি পর্যাপ্ত জামানত ছাড়াই বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ দিয়েছে, অনুমোদিত সীমার বাইরে বড় ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে এবং নিয়ম লঙ্ঘন করে সুদ মওকুফ করেছে।

এতে বলা হয়, ‘ব্যাংকের যেসব শাখায় অডিট করা হয়েছে সেগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার, সরকারি তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম-কানুন মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।’

একই ধরনের অনিয়ম যেন আর না হয় এবং অডিটের সুপারিশগুলো যেন বাস্তবায়ন করা হয় তা নিশ্চিত করতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

অনিয়মগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের শর্ত লঙ্ঘন করে অ্যাননটেক্স গ্রুপের ৫ হাজার ২৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার ঋণ পুনঃতফসিল ও মতিঝিলে ব্যাংকের জনতা ভবন কর্পোরেট শাখার বিআরপিডি সার্কুলার।

এই অর্থ পুনঃতফসিলের জন্য ব্যাংকটি অ্যাননটেক্স থেকে ন্যূনতম ২ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জালিয়াতি ও অর্থপাচারের কারণে শ্রেণিবদ্ধ ঋণ পুনঃতফসিল করা ঠিক হয়নি।

২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আননটেক্স গ্রুপের ৬ সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) সুবিধা দেওয়া হয়, যদিও প্রতিষ্ঠানটি আগের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ডিমান্ড লোন তৈরি করে অ্যাননটেক্সের এলসি গ্রহণ করা হয়েছে। সেই ঋণগুলোও খেলাপি হয়েছে। এরপরও এর ৬ সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে আরও এলসি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

তাদের বকেয়া অর্থের পরিমাণ ৫৫৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

জবাবে জনতা ব্যাংক জানায়, বিদেশে ব্যাংকগুলোর কাছে তাদের সুনাম রক্ষায় নিজস্ব অর্থায়নে অ্যানটেক্সের এলসি ক্লিয়ার করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির পর অ্যাননটেক্স নতুন কোনো এলসি সুবিধা দেওয়া হয়নি।

এরপর চট্টগ্রামের সাধারণ বীমা ভবন কর্পোরেট শাখা জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজকে অনুমোদিত পরিমাণের বেশি ঋণ দিয়েছে। বকেয়া অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ২৪৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

অডিট প্রতিবেদনে এস আলমের অপর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৭০ কোটি ৭০ লাখ টাকার অনিয়মও ধরা পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম লঙ্ঘন করে গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আলম কোল্ড রোল স্টিলস ও এস আলম ভেজিটেবল অয়েল মিলস লিমিটেডের পাওনা সমন্বয় করেছে শাখাটি। এটি অনুমোদিত সীমার বাইরে গ্লোবাল ট্রেডিংকে ঋণ দিয়েছিল।

রাজধানীর কামাল আতাতুর্ক শাখা ভুয়া রপ্তানি বিলের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা দেয়। রপ্তানি কখনই হয়নি, তাই ডিমান্ড লোন তৈরি হয়েছিল। এসব ঋণ খেলাপি হয়েছে। জামানত ছাড়াই ব্যাংকটি ২৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ পুনঃতফসিল করেছে।

বেশ কয়েকবার রপ্তানিতে ব্যর্থ হলেও ব্যাংকটির মতিঝিল শাখা বিআর স্পিনিং মিলসকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত নতুন এলসি দিয়েছে। এই অর্থ কখনই পরিশোধ করা হয়নি। এই প্রতিষ্ঠানটির কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ৮০৬ কোটি টাকার বেশি।

ডরিন গার্মেন্টসের কাছ থেকে ব্যাংকটির পাওনা ১৬৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর স্থানীয় শাখা রপ্তানির বিপরীতে বেশ কয়েকটি এলসি খুলেছে। তবে রপ্তানি কখনই হয়নি।

স্থানীয় শাখা যথাযথ নিয়ম ছাড়াই আল-মদিনা ট্যানারিকে ঋণ দিয়েছে। এগুলো অনাদায়ী রয়ে গেছে। তবে বিপিআরডি সার্কুলার লঙ্ঘন করে এই অর্থ ব্যাংকের নিয়মিত হিসাবে দেখানো হয়েছিল। ট্যানারির কাছে এখন জনতা ব্যাংকের পাওনা ১০২ কোটি ১০ লাখ টাকা।

খুলনা করপোরেট শাখা গত ৭ বছরে ৫ বার নিজেদের সীমা অতিক্রম করে ঋণ দিয়েছে। পুনঃতফসিল ও মোরাটোরিয়াম সুবিধা একাধিকবার বাড়ানোর কারণে এখন ব্যাংকটির পাওনা ১১১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

শাখাটি পর্যাপ্ত জামানত না নিয়ে লকপুর গ্রুপের ৩ প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃতফসিল করেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মের লঙ্ঘন। এখন এর বকেয়া ১২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

আরও সংবাদ পড়ুন।

১৮১৮০ কোটি টাকা এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে

আরও সংবাদ পড়ুন।

ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top