কেন যেন সব এলোমেলো হয়ে যায় – শাহানা সিরাজী
ভাতঘুম সেরে, মাথায় তেল মেখে,
পান মুখে নিয়ে, শিশুদের কোলাহলে মিশে,
ঘর-উঠান ঝাড়ু দিয়ে,তই তই হাঁস-মুরগী খোয়াড়ে রেখে,
হারিকেনের চিমনি পরিস্কার করে সান্ধ্যদীপ জ্বালিয়ে,
উদ্বিগ্ন চোখে তাকাই- ফিরলে কী?
বাইরে জুতোর খটাখট শব্দে কান পাতি হুলুস্থূল বেরিয়ে আসি, পাছে ভয় পায় হারিকেন উঁচিয়ে রাখি,
আলো-আঁধারির খেলায় চকচকে ঘামভেজা মুখ আঁচলে মুছে বলি- ইসস কতোই না কষ্ট করো!
কলের পাড়ে জল তুলে,গামছা- লুঙ্গি ঝুলিয়ে বলি- ফ্রেস হয়ে নাও,খাবার দিচ্ছি।
ডাইনিং টেবিলে নয়,নিজের হাতে বুনুন করা পাটি বিছিয়ে
টাকিমাছের ভর্তা শোলমাছের চচ্চরি,মাচান থেকে তোলা পুঁইয়ের ডাটা সাথে চিংড়ি, কচুর লতার শুকনো ভাজি আর ঘনডাল পাতে তুলে দিয়ে দেখি তোমার অভিব্যক্তি-
কখনো মন ভালো হয়ে যায়
কখনো লুকিয়ে চোখ মুছে
আবার চূলায় আগুন ধরাই
বিছানাটা টানটান পেতে গোলাপজলের ছিটা দিয়ে
মিশারি পেতে বলি- রাত গভীর হয়েছে।
খানিকবাদে নাক ডাকার শব্দে প্রেসার বাড়লেও বলি না – থামো!
বাগ-বাগিচার যত্ন, বুড়ো-চারা গাছের যত্ন করতে করতে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাই, দ্রুত স্নান ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখি
সকালের, লেট সকালের একগাদা চায়ের কাপ, বাসন-পত্র মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে।
ওদিকে অফিসের বস একটানা ফোন বাজিয়ে যাচ্ছে,ক্যাজুয়েল লিভ ক্যান্সেল – হায়ার অথোরিটি আসবে!
বাচ্চাটার টানা কান্নায় দেহ-মন বিবশ হয়ে যাচ্ছে
পোষ্যরা যার যার মতো ব্যস্ত – তখন ইচ্ছে হয়, যদি হাত বাড়াতে,
অন্তত পোষ্যদের বলতে যার যার কাপটি ধুয়ে রাখো!
খুব ইচ্ছে করে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে এক মিনিট সময় কাটাতে, হাতটি ধরে বলবে- আমি আছি তোমার পাশেই।
অফিসফেরত আমার জন্য কেউ একগ্লাস জল নিয়ে অপেক্ষা করবে,হাঁটতে হাঁটতে সে জল গিলে দ্রুতই রান্না ঘরে পৌঁছে যাবো-তোমার জন্য বাইমমাছের ভুনা, টুনা মাছের কোপ্তা,স্টিম ইলিশ রান্না করবো। আমি এসব খাই না। আমার জন্য চুপে চুপে পিয়াজভর্তা করবো।
আমার খুব ইচ্ছে করে একবার খোঁজ নাও আমি কী দিয়ে খাই…
এটুকু চাওয়ায় অর্থ-প্রাচুর্য- গয়নার প্রয়োজন আছে?
সব কিছু কেন যেন এলোমেলো হয়ে যায়
আমার বেবির কান্নায় আমি সাঁতার কাটি….
উৎসর্গঃ ইদ্রাকপুর ২নং স্কুলে অনুশীলনপাঠদানরত কন্যারা।
শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর (সাধারন)পিটিআই, মুন্সীগঞ্জ।
কবি,প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।