আদম ১৫ – শাহানা সিরাজী
আদমের আঙুল আকাশের দিকে
মাথায় রঙিন রুমাল
পাতার পোশাক ছেড়ে আদম পরেছে
বাকলের পোশাক।
হাওয়া তখনো কচুরিফুলের ওড়নায় ঢাকা
আদম চিৎকার দিলো-
হাওয়া গুহায় প্রবেশ করো
তোমার ফুল্লরী দেহ আমার মস্তিষ্কে আগুন ধরায়
আমি স্থির থাকতে পারি না।
দূর হও,দূর হও
হতভম্ব হাওয়া ক্ষণিক স্থির থেকেই মুচকি হাসে
আদমের তখন ত্রাহি ত্রাহি দশা!
চোখ বন্ধ করে আউড়াতে থাকে – শয়তান! শয়তান!
দূর হও, দূর হও-
হাওয়া কোমর দুলিয়ে বিণুনী খুলিয়ে
ধূলোর ঝড় তুলে ইশ্বর অভিমুখে অভিগমন করে।
হাওয়াকে দেখেই বিশ্রামরত ইশ্বর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়-
আদম আজ আবার কী করেছে!
হাওয়া ঠোঁট ফুলিয়ে চোখ ভিজিয়ে বলে, আদম আমাকে গুহায় থাকতে বলে,তোমার সৃষ্ট এ দুনিয়ার রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ থেকে আমাকে দূরে থাকতে বলে,
এ চাঁদ-সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্রের লাবণ্য থেকে আমাকে বঞ্চিত হতে বল্র।
ঈশ্বর মুচকি হাসে- তুমি না হয় রইলেই কিছু দিন গুহায়, দেখো কী হয়!
যাও আদমের কথা শোনো-
হাওয়া মন খারাপ করে গুহায় প্রবেশ করে।
আদমের কিছুই ভালো লাগে না, ফুল -পাখি-নদী-গিরি
মান্না সালোয়া কিছুই না
আদমের মনে আনন্দ আসে না
প্রেম-কাম কিছুই আসে না
আদম উঁকি দেয় এদিকে সেদিকে
কী চায় সে?
গাছের ফল গাছে, রুটি শুকিয়ে কাঠ
ক্ষুধা নেই তৃষ্ণা নেই
ক্লান্ত আদম মরুর বালিতে মুখ লুকায়।
হাওয়া নেই দম্ভ করবে কোথায়?
হাওয়া নেই আদেশ দেবে কোথায়?
হাওয়া নেই ফতোয়া দেবে কোথায়?
হাওয়া নেই রান্না করতে বলবে কাকে?
আদম হাওয়ার গুহার দিকে অজান্তেই এগোয়.
গুহায় হাওয়া ইশ্বরের ধ্যানে মগ্ন
কখন গুহার মুখ বন্ধ হয়েছে হাওয়া জানে নি।
আদম গুহার সামনে দাঁড়িয়ে
উচ্চ স্বরে ডাক দেয়-
হাওয়া হাওয়া হাওয়া
নিজের ধবনি প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এলো।
আদম হাঁটু মুড়ে নতজানু
হে ইশ্বর ক্ষমা করো.
তোমার সৃষ্টিকে আমিই বিনাশ করেছি
তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছি
হাওয়া ছাড়া আমি অন্ধ মূঢ!
যতোবার জনম দেবে ততোবারই হাওয়াকে চাই
হাওয়াতেই আবগাহন
হাওয়াতেই মিশে যেতে চাই।
ইশ্বর মুচকি হাসে আবারো-
“কুকুরের লেজ বারো বছর চোঙায় থাকলেও সোজা হয় না”
ইশ্বর গুহার মুখ উন্মোচন করে
আদম হাওয়া দেখেই চিৎকার করে
গুহার দরজা কেন বন্ধ রেখেছো?
শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর সাধারণ,পিটিআই মুন্সিগঞ্জ।
কবি প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।