আওয়ামী লীগের সভাপতির সরকারি জমি দখল – উপজেলা নির্বাহী অফিসার

Ban_Govt4.jpg

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সরকারি জমি দখল – উপজেলা নির্বাহী অফিসার

অপরাধ প্রতিবেদকঃ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌর শহরের চৌরাস্তা হাটে কোটি টাকার সরকারি জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাবেক এমপি ইমদাদুল হক ও স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এই দুই নেতা অভিযোগ স্বীকার করে বলেছেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে জমি দখলে রয়েছে। এখন পাকা বাড়িঘর করেছেন।’

ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪-৮৫ ও ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর দু’টি মিস কেসের মাধ্যমে চৌরাস্তা হাটের সম্পত্তি পেরিফেরিভুক্ত করে ভূমি অফিস। এরপর কর্তৃপক্ষ বাজারের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে (এলজিআরডি) আবেদন করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসককে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে পীরগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ। এরপরও ওই সময় জেলা প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এই সুযোগে পরে শহরের প্রাণকেন্দ্র রঘুনাথপুর মৌজায় (ঢাকাইয়াপট্টি) পেরিফেরিভুক্ত চৌরাস্তা হাটের উত্তর-পূর্বাংশে অবৈধভাবে পাকা স্থাপনার কাজ শুরু করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি ইমদাদুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শত কোটি টাকা মূল্যের হাটের জমিতে তারা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ভিত্তি স্থাপনসহ আরসিসি পিলার নির্মাণের কাজ করছেন। বিপ্লব নিজের বাড়ির জন্য বহুতল ভবন করছেন। আর ইমদাদুল হক জমি দখল নিতে তার লোকজন দিয়ে সীমানা প্রাচীরের কাজ করেছেন জমির ওপর।

বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানালে দখল ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্দেশ্যে বুধবার (১৩ অক্টোবর) বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিমকে নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক মাববুবুর রহমান। ওই নির্দেশনা পেয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও কাজ বন্ধ করার বিষয়ে কিছু্ই বলেননি বলে অভিযোগ করছে স্থানীয়রা।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘পীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেছেন, নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

তবে, বৃহস্পতিবারও (১৪ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা গেছে, যথারীতি কাজ চলছে। অভিযোগ উঠেছে, হাটের ওই সরকারি জমি দখলদারদের পাইয়ে দিতে নেপথ্যে কাজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিম।

অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়। কাজ বন্ধ করা হয়েছে। আবার কাজ চালুর বিষয়টি জানি না। এখনই ঘটনাস্থলে যাবো।’

স্থাপনা নির্মাণ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি ইমদাদুল হক বলেন, ‘বাজারটা হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি। অনেকেই দখল করে আছেন। বড় বড় বিল্ডিং করেছেন। আমি কোনো জমি দখল করিনি। আমার জানা মতে, এমদাদুল হকও সেখানে জমি কিনে প্রাচীর করেছেন।’

এই বিষয়ে এমদাদুল হক বলেন, ‘সাবেক এমপির প্রাচীরের কাজ করেছি। আমি শুধু দেখাশোনার দায়িত্ব আছি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব বলেন, ‘আমি বিশ বছর ধরে আধা পাকা বাড়ি করে আছি। এখন ভেঙে পাকা বাড়ি নির্মাণ করছি। হাটের পেরিফেরি থেকে জায়গাটা অবমুক্তির জন্য আবেদনও করেছি।’

এদিকে, পৌরসভা-সূত্র বলছে, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পৌরসভা থেকে বাজারটি বার্ষিক ইজারা দেওয়া হয়েছে। এরপর আর তা সম্ভব হয়নি। ভূমি অফিসের লোকজনের সহায়তায় সেখানে রাতারাতি অবৈধভাবে আধাপাকা বাসা-বাড়ি, পাকা ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন প্রভাবশালীরা।

পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযাদ্ধা ইকরামুল হক বলন, ‘পেরিফেরিভুক্ত জমিতে ঘর নির্মাণের পারমিশন পৌরসভা দিতে পারে না। কাজ বন্ধ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলেছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top