অভিযোগের প্রতিকার না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন অনেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে না রাখা ও ভবিষ্যতে কখনো মনোনয়ন না দেওয়ার হুঁশিয়ারিতে কাজ হচ্ছে না। তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু আজ শণিবার।
বিশেষ প্রতিবেদকঃ আওয়ামী লীগ মনোনীত বিতর্কিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পেয়ে দ্বিতীয় ধাপের আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন অনেকে। আগামী ১১ নভেম্বর ৮৪৮ ইউপিতে ভোট হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বিদ্রোহীদের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেবেন, তারা যত প্রভাবশালীই হোন না কেন, কোনোভাবেই ছাড় পাবেন না। সাংগঠনিকভাবে তার বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নৌকার বিরোধিতা করলে তার ভাগ্যে কোনো দিনই জুটবে না নৌকার টিকিট। পাবেন না দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ।
এমন সতর্ক বার্তার পরও বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকানো যাচ্ছে না। বিরোধী মতাদর্শী ও বিতর্কিতরা মনোনয়ন পাওয়ায় তৃণমূলে ক্ষোভ যেমন বাড়ছে, তেমনি বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। অনেকে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, প্রার্থী না বদলালে নৌকার বিজয় অনিশ্চিত। এছাড়া অতীতেও হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরও বিদ্রোহীদের দমাতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
এদিকে নির্বাচন কমিশন-ঘোষিত তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) এবং ৯ পৌরসভায় আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের মধ্যে আবেদনপত্র বিতরণ আজ শনিবার থেকে শুরু করছে আওয়ামী লীগ। ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র বিতরণ ও জমাদান কার্যক্রম চলবে।
নির্বাচন কমিশন লক্ষ্মীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর, পাবনা জেলার বেড়া, নোয়াখালী জেলার সেনবাগ, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ, পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা, টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর, নীলফামারী জেলার নীলফামারীসহ মোট ৯টি পৌরসভা নির্বাচনের তপসিল ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন তৃতীয় ধাপে সারা দেশে ১ হাজার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণা করেছে।
দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীতদের মধ্যে অনেকে আছেন বিতর্কিত ও বিরোধী মতাদর্শী।
বান্দরবানের লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মারমা। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও জন্মসনদ বাণিজ্য, ভূমিহীনদের ঘর দিতে ঘুষ নেওয়া, সাংবাদিক নির্যাতন, রাস্তা সংস্কারের টাকা আত্মসাৎ, সৌর বিদ্যুতের প্যানেল বিতরণে বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ ও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন ইকবাল হোসেন এমাদ। একসময়ের উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে গেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এমাদ সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে কোনো দিন তার সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জড়িত এবং নারী নির্যাতন মামলার আসামি।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিদুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে যুবলীগ কর্মী ওমর ফারুক, আওয়ামী লীগ কর্মী শিমুল হত্যাসহ তিনটি মামলা রয়েছে। একটি চাঁদাবাজির মামলাও আছে। এর মধ্যে একটি মামলায় তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রায় এক ডজন মামলার আসামি। তিনি হচ্ছেন জলসুখা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শাহজাহান মিয়া। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, নৌ ডাকাতি, হত্যাসহ রয়েছে ১১টি মামলা। এ বিষয়ে মো. শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে আমার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। তবে কোনোটিরই গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আটপাড়া ইউনিয়নে রকিবুল হাসান মাসুদ মনোনয়ন পেয়েছেন। তার আপন ভাই জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি।
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী ক্যাশিয়ারের চাকরি করতেন কামরুন্নাহার শিমুল। রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন। নেতাকর্মীদের চাপাচাপিতে জয়পুরহাটের রুকিন্দীপুর ইউনিয়ন নির্বাচনের জন্য দলের মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ করেন শিমুল। ৮ অক্টোবর দলীয় মনোনয়ন পেয়ে স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন তিনি। কিন্তু ১৩ অক্টোবর রুকিন্দীপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়। দলীয় মনোনয়ন ও চাকরি দুটিই হারিয়েছেন তিনি।