ভোলার জেলা রেজিস্টার ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়া

PicsArt_06-22-04.34.42.jpg

ভোলার জেলা রেজিস্টার ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়া

সাগর চৌধুরীঃ ভোলা জেলার জেলা রেজিস্টার সহ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ভোলা জেলার প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ বা উৎকোচ ছাড়া কাজ হয় না।

জমির নিবন্ধন, নামজারি, জাল দলিলে জমি দখল সহ নানা ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন দ্বীপ জেলার সাধারন মানুষ। জমির দলিল আটকে রেখে ভুক্তভোগীদের চাপের মুখে ঘুষ দাবি সাব-রেজিস্ট্রার, উম্মেদার, পিওন ও নকলনবিশদের নিয়মিত আচরণে পরিণত হয়েছে।

ঘুষ আদায়ের কৌশল হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের রুটিন মাফিক কাজ নকলনবিশ, উম্মেদার ও পিওন দিয়েও করানো হচ্ছে। এই সুযোগে নকলনবিশ, উম্মেদার ও পিওন কোটি কোটি টাকার মলিক হচ্ছেন।

বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন ম্যানুয়াল-২০১৪ মানছেন না সাব-রেজিস্ট্রাররাও।

তারা নিবন্ধন ম্যানুয়াল অনুযায়ী নিজেদের কাজ নকলনবিশ, উম্মেদার ও পিওনদের দিয়ে করাচ্ছেন। দলিল চেক করার কাজ সাব-রেজিস্ট্রারদের করার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না তারা। অনুসন্ধানে ও সরেজমিন এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন ম্যানুয়াল-২০১৪-এর অধ্যায়-২৬-এ উল্লেখ আছে যে, সহকারীগণ কর্তৃক দলিল পরীক্ষাকরণ কাক্সিক্ষত নয়, এই কাজটি অবশ্যই স্বয়ং নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সম্পাদিত হবে।

বছর দু’আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর আয়োজনে বোরহানউদ্দিন উপজেলার হলরুমে
এই দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য গণশুনানির আয়োজন করেছে। শুনানিও চলছে। এতে ভুক্তভোগীরা তুলে ধরেছেন তাদের নানা সমস্যার কথা। বলেছেন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র।

তারা বলেন, ‘আমরা আমজনতা। আমরা কোনো কাজের জন্য ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে হয়রানির শিকার হই। মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কাজ হবে না বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন। আমরা তাদের কাছে জিম্মি।’ ভুক্তভোগী জনগণের দাবি, নামজারি, খারিজ, জমির শ্রেণী পরিবর্তনসহ নানা কাজে জনগণের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন, ভূমি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার সহ কর্মচারীরা।

করোনা কালিন সময়ে দীর্ঘদিন অফিস বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি অফিস খুললে এমনই চিত্র লক্ষ করা যায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সাবরেজিস্টারের অফিসগুলোতে।

ভুক্তভোগীরা জানান, এভাবে ঘুষ দিতে দিতে কারা নিস্ব হয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া সরকারের বিভিন্ন দফতরের নজরদারি থাকার কথা থাকলেও এদিকে নজর দেবার মত সময়ই পান না কর্মকর্তরা। অন্যদিকে সাধারন জনগণের টাকা খেয়ে আঙুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে কতিপয় শ্রেনী।

ভোলা জেলা রেজিস্টারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্ঠা করলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেন নি।

ভোলা জেলা রেজিস্টারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার অফিসে গেলে, তিনি পিওন মারফত খবর পাঠান, উর্ধতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া তিনি বক্তব্য দিবেন না।

এমন গুরুতর দূর্ণীতি ও অন্যায় করেও কিভাবে তারা বহাল তবিয়তে আছে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন।


এদিকে, ভোলা জেলার জেলা রেজিস্টারের সরকারি দফতরের ওয়েবসাইটে যোগাযোগের জন্য যে মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। সেখানেও সুনিপুণ ছলছাতুরী করেছেন জেলা রেজিস্টার। নিজের ফোন নাম্বার ব্যবহার না করে ব্যবহার করেছেন বীনা কর্মকার নামের এক নারীর ফোন নাম্বার। যে মহিলার বাড়ি মঠবাড়িয়া, পিরোজপুরে। তার স্বামী একটি লোহার দোকানে কাজ করেন। দিন মুজুর চিত্তরঞ্জন কর্মকারের স্ত্রীর বীনা কর্মকার বলেন, অফিসের ওয়েবসাইটে আমার নাম্বার কি করে দিল। সেই জেলা কর্মকর্তা তার কৈফিয়ত দিবেন। আমি সরকারের কাছে বিচার চাই। এমন কর্মকর্তা দিয়ে দেশের কি উপকার হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top