১৭ কারারক্ষীর শাস্তি;সাজাহীন ডেসটিনির রফিকুল

১৭ কারারক্ষীর শাস্তি;সাজাহীন ডেসটিনির রফিকুল

বিশেষ প্রতিবেদকঃ প্রিজন সেলে থেকে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনের জুম বৈঠকের ঘটনায় ১৭ জন কারারক্ষীকে শাস্তি দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অপরাধ জেনেও কারাগার থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রফিকুলকে দণ্ড দেওয়া হয়নি। অথচ কারাবিধি অনুযায়ী কোনো বন্দি অপরাধ করলে তাঁকে শাস্তির আওতায় আনার নিয়ম আছে। অবশ্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে রফিকুলকে কারাবিধি অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু ‘অদৃশ্য কারণে’ তাঁকে শাস্তির আওতায় আনা হয়নি বলে জানাচ্ছে কারা সূত্র।

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের প্রতিটি কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে তাঁদের স্বজনসহ বাইরের লোকজনের সাক্ষাৎ বন্ধ আছে দীর্ঘদিন। বিকল্প হিসেবে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রফিকুল আমীনের ক্ষেত্রে ঘটছে ব্যতিক্রমী ঘটনা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গত এক সপ্তাহে তিনি দুইবার সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন গত ২০ জুলাই আর ২২ জুলাই সাক্ষাৎ করেন তিনজনের সঙ্গে।

বর্তমানে কারাগারে সাক্ষাৎ বন্ধ থাকলেও রফিকুল আমীনের সঙ্গে কী করে চারজন দেখা করলেন? এ প্রশ্নের উত্তরে আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন গত মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, ‘কারাবিধি অনুযায়ী দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধের সুযোগ নেই। করোনার কারণে আমরা বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ রেখেছি। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অনুমোদন দেওয়া হয়ে থাকে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় একাধিকবার জুম বৈঠক করেন রফিকুল আমীন। এরপর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ১৭ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বাকি ১৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি তদন্ত করতে ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজনস তৌহিদুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি গত ১০ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মে ও জুন মাসে মোবাইল ফোনে জুম অ্যাপের মাধ্যমে পাঁচবার ব্যাবসায়িক বৈঠক করেন রফিকুল আমীন। এসব বৈঠকে তিনি নতুন কম্পানি ‘ডি টু’ প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে আলোচনা করেছেন। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের কাছে নিজের জামিন ও মুক্তির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। প্রতিটি বৈঠক হয়েছে গভীর রাতে। এসব বৈঠকের সময়সীমা ছিল সর্বনিম্ন ২৯ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ২২ মিনিট।

প্রতিবেদনে ১৯টি সুপারিশ করা হয়। তার মধ্যে কারাগারে থেকে অপরাধ করার কারণে রফিকুল আমীনকে কারাবিধি অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান ডিআইজি প্রিজনস তৌহিদুল ইসলাম।

তদন্ত কমিটির সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমার কাছে জমা হয়েছে। আমরা সেটিকে পর্যালোচনা করার জন্য দিয়েছি। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।’

কারাগারে থেকে কোনো বন্দি অপরাধ করলে তাঁকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। এ ক্ষেত্রে কাউকে কয়েক দিনের জন্য ডাণ্ডাবেরি পরানো হয়। অপরাধ গুরুতর হলে ডাণ্ডাবেড়ির সঙ্গে আওড়া বেড়িও পরানো হয়; যেগুলো বেশ কষ্টের শাস্তি। এর আগে যেসব বন্দি কারাগারে থেকে অপরাধ করেছেন, তাঁদের এ ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কারারক্ষী জানান, রফিকুল আমীনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শাস্তি তো দেওয়াই হয়নি বরং তাঁর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে গত মঙ্গলবার একাধিকবার ফোন দিলেও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ সাড়া দেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top