প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্থগিত ডিসি সম্মেলন
বিশেষ প্রতিবেদকঃ ডিসি সম্মেলন স্থগিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামী ৫, ৬ ও ৭ জানুয়ারি ২০২০ সালের ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারিত ছিল। মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অনিবার্য কারণে ডিসি সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।
একাধিক ডিসির সঙ্গে কথা বললে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনেক কর্মকর্তাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। স্থগিত এই ডিসি সম্মেলন কবে নাগাদ হবে তা পরে জানানো হবে। মৌখিকভাবে সব ডিসিকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। সব ডিসিকে বুধবার এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, করোনার দ্বিতীয় ওয়েবের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় ডিসিদের নিয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠানের বিষয়টি দৃষ্টিকটু দেখায়। তা ছাড়া প্রথম দিকে এবারের ডিসি সম্মেলন না হওয়ার সিদ্ধান্ত থাকায় এসংক্রান্ত কাজও তেমন আগায়নি। পরে হঠাৎ ডিসি সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিপুল কাজের চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। যে কারণে অনেক কিছু গুছিয়ে করা সম্ভব হচ্ছিল না।
প্রতিবছর জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর করোনার কারণে যথাসময়ে সম্মেলন হয়নি। পরিকল্পনা ছিল ডিসেম্বরে হবে।
কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ওয়েবের আশঙ্কায় ডিসেম্বরেও সম্মেলন না করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার আগ্রহে আগামী জানুয়ারিতে সম্মেলন আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করার মধ্যেই তা আবার স্থগিত করা হলো।
মাঠ প্রশাসনে নেতৃত্বদানকারী ৬৪ জেলার ডিসি, ৮০ জনের মতো সচিব, ৮ বিভাগীয় কমিশনার এবং সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীরা ডিসি সম্মেলনে অংশ নিয়ে থাকেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডিসিদের বিশেষ সাক্ষাৎ ও অধিবেশনের সুযোগ থাকে। তিন থেকে পাঁচ দিনের এই সম্মেলন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর জুলাই মাসে ডিসি সম্মেলন হয়ে থাকে। এবার করোনার কারণে জুলাই মাসে তা অনুষ্ঠিত হয়নি।
ডিসি সম্মেলনে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রস্তাব, আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় সব জেলার ডিসিরা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৈঠক করেন সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে। এসব বৈঠকে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রী ও সচিবরা পর্যায়ক্রমে উপস্থিত থাকেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এবং ডিসিরা বিদ্যমান কার্যক্রমের বিষয়ে কী ধরনের সমস্যা বা সুবিধা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আরো কী করা যায়, সেসব বিষয়ে দুই পক্ষের মতামত নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনাভাইরাসের গতি-প্রকৃতি এখনো পরিষ্কার নয়। করোনার দ্বিতীয় ওয়েব কোন দিকে যায় বলা যায় না। বিশ্বের অনেক দেশ দ্বিতীয় ওয়েবে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়েছে। দ্বিতীয় ওয়েবের সময় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এমন একটি সম্মেলন করা উচিত হবে না, যেখানে রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনের সব গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্মেলন উপলক্ষে পুরো দেশের ডিসিদের পাঠানো প্রায় তিন শ প্রস্তাব সম্মেলনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। তিন দিনের সম্মেলনে কয়টি অধিবেশন, কখন কারা উপস্থিত থাকবেন, তাও চূড়ান্ত করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব দপ্তরে আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। ঠিক ওই সময়ে ডিসি সম্মেলন স্থগিত করা হলো।
প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনের শেষ দিনে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নৈশ ভোজে যোগ দেন ডিসিরা। গত সম্মেলন থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকার, দেশের প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও সৌজন্য বৈঠক করেন ডিসিরা।