দুই দিনের মধ্যে এলপিজির মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাব না দিলে কঠোর ব্যবস্থা
বিশেষ প্রতিবেদকঃ আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাব জমা না দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ঘোষিত শিডিউল ঠিক রেখে জানুয়ারিতেই এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করতে চায় সংস্থাটি।
গত ৬ ডিসেম্বর এলপিজি বিপণনকারীদের কাছে মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব চায় বিইআরসি। কিন্তু বেসরকারি কোনও কোম্পানি প্রস্তাব না দিয়ে ৩০ দিনের সময় চায়। অন্যদিকে একমাত্র সরকারি কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেড এজন্য বিপিসির অনুমোদন প্রয়োজন বলে এক চিঠিতে জানায়।
গত অর্থবছরে প্রায় সাড়ে আট লাখ টন এলপিজির চাহিদা ছিল। আর সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বলছে, ২০৪১ সালের মধ্যে চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে ৮০ লাখ মেট্রিক টন। দেশের উদ্যোক্তারা এলপিজি আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা এবং আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এলপিজি আবার রফতানিও করছে। কিন্তু দেশেই এখনও এলপিজির দাম নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। আদালতের নির্দেশে এবার সেই দাম সমন্বয় করতে যাচ্ছে কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, ‘বেসরকারি কোম্পানিগুলো সময় চেয়েছে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর সরকারি কোম্পানি কোনও সময় চায়নি। এখন আমরা সবাইকে একই সময় দিয়েছি, ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কারণ আদালতে আগামী ১৫ ডিসেম্বর শুনানি আছে। আমাদের জবাব দিতে হবে। আমরা সবার সহযোগিতা চাইছি। আর আগামী ১৪ জানুয়ারি যে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি সে অনুযায়ী কাজ করছি। কোম্পানিগুলোকে সময় দিলেও আমাদের কাজের শিডিউলের কোনও পরিবর্তন হবে না।’
প্রসঙ্গত, আদালত অবমানার রুল থেকে বাঁচতে এলপিজির দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। আগামী ১৪, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি গণশুনানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এর আগের কাজের জন্য একটি শিডিউলও তৈরি করেছে। শিডিউল অনুযায়ী গত ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে প্রস্তাব জমা দেওয়ার সময় দেয়।
এ অবস্থায় বেসরকারি কোম্পানিগুলো ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চায় আর সরকারি কোম্পানি বিপিসির অধীন এলপি গ্যাস লিমিটেড জানায়, তারা বিপিসির অনুমতি ছাড়া তথ্য দিতে পারবে না। এই অবস্থায় কমিশন একটি সভা করে। সভায় সরকারি কোম্পানি ও বেসরকারি কোম্পানি সবাইকে আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবেশী পশ্চিমবাংলার চেয়েও দেশে এলপিজির দর কেজিপ্রতি অন্তত ৩০ টাকা বেশি বাংলাদেশে। বেসরকারি কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি ভোক্তা এবং বিপণন কোম্পানির মধ্যে থাকা মধ্যস্বত্বভোগীদের এই অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের আর কোনও নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আবার এলপিজির দামও নির্ধারণ করা হচ্ছে না। এতে করে এলপিজি ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামাফিক দরে এলপিজি বিক্রি করছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ নভেম্বর গণশুনানির মাধ্যমে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দাখিল না করায় কমিশনের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী ১৫ ডিসেম্বর এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়।